স্কুল ছুটি থাকায় গঙ্গায় স্নান করতে নেমেছিল দুই বন্ধু। আচমকাই তাদের ভেসে যেতে দেখে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা আর এক বন্ধু ঝাঁপ দেয় নদীতে। কিন্তু সাঁতার না জানায় বেশি দূর যেতে পারেনি সে। তার চোখের সামনেই নদীতে তলিয়ে যায় দুই বন্ধু। শেষে এক ঘণ্টা পরে উদ্ধার করা হয় তাদের নিথর দেহ।
সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বালি থানা এলাকার বারেন্দ্র পাড়ার ঘাটে। মৃত আমন ভগত (১৫) এবং আফতাব খানের (১৫) বাড়ি বালির বাদামতলায়। দু’জনেই বালির একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ বালির দেওয়ানগাজিতে সহপাঠী অভিষেকের বাড়িতে পড়তে যায় আমন। মঙ্গলবার তাদের পরীক্ষা ছিল। কিছুক্ষণ পরেই আমন অভিষেককে তার সঙ্গে স্কুলের সামনের বারেন্দ্রপাড়ায় গঙ্গার ঘাটে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু রাজি হয়নি অভিষেক। সে বলে, “আমন আমাকে ওর সঙ্গে স্নান করতে যেতে বলে। কিন্তু আমি বারণ করি। বলি কাল পরীক্ষা। আরও বেশিক্ষণ পড়াশোনা করাটাই উচিত। কিন্তু ও কথা শোনেনি।”
এর পরে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাদের আর এক বন্ধু আফতাব খানের বাড়িতে যায় আমন। তারা একই স্কুলে পড়ে। তাকে সাইকেলে করে নদীতে নিয়ে যায় সে। ঘাট থেকে অভিষেককে ফোন করে তাকে ঘাটে আসতে বলে আমন। এর পরে হেঁটে ওই ঘাটে পৌঁছয় অভিষেক। ততক্ষণে ওরা গঙ্গায় নেমে পড়েছিল।
গঙ্গায় তখন ভাটার টান। পাড় থেকে দাঁড়িয়ে বারবার আমন ও আফতাবকে বেশি দূরে যেতে বারণ করেছিল সে। অভিষেক বলে, “আচমকাই ওরা অনেকটা দূরে চলে যায়। হাবুডুবু খেতে থাকে। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকারও করছিল। কিন্তু আশপাশে কেউ ছিল না। আমি সাঁতার জানি না। তবুও ঝাঁপ মারি। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারিনি।
ওরা তার পরে ডুবে যায়। আর দেখতে পাইনি।”
তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘটনাটি জানায় অভিষেক। খবর পেয়ে আসে আফতাবের বাড়ির লোকেরাও। খবর যায় বালি থানায়। পুলিশ পৌঁছে স্থানীয় এক ডুবুরি বীরেন কর্মকারকে ওই দুই ছাত্রের খোঁজে গঙ্গায় নামায়। খবর দেওয়া হয় কলকাতা রিভার্স ট্রাফিক পুলিশের কাছে। প্রায় এক ঘণ্টা পরে ৫টা ৩০ নাগাদ, ঘাট থেকে ৫০ হাত দূরে ওই দুই ছাত্রের দেহ মেলে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন আমনের বাবা। এ দিন একমাত্র সন্তানের মৃত্যু পরে হাসপাতালেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আমনের মা পেশায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নার্স সঙ্গীতা ভগত। তিনি বলেন, “বেশি বাইরে যেতে বারণ করতাম। কিন্তু ও কথা শুনত না। আজ এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy