প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে হাওড়া জেলায় রাস্তা তৈরির কাজে তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি প্রায় আড়াই বছর ধরে। সেই অভাব পূরণ করতে লোকসভা নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি উদ্যোগী হল হাওড়া জেলা পরিষদ। নিজেদের তহবিলের টাকাতেই তারা ৩৩টি রাস্তার তৈরির কাজ শুরু করেছে। এর জন্য মোট বরাদ্দ হয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা।
জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি অজয় ভট্টাচার্য অবশ্য জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের রাস্তা তৈরির না-হওয়ার সঙ্গে এই রাস্তার কোনও সম্পর্কই নেই। তাঁর দাবি, “আমাদের নিজস্ব তহবিলের টাকায় রাস্তা তৈরির প্রকল্প অনেক আগেই হাতে নেওয়া হয়েছিল। তবে নিয়ম-কানুন মেনে ঠিকা সংস্থাগুলিকে কাজের ওয়ার্ড-অর্ডার দিতে দেরি হয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে আমাদের নিজস্ব তহবিলের টাকায় আরও অনেক রাস্তা তৈরি হবে।”
জেলায় বড় রাস্তার কাজ বলতে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পকেই ধরা হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পে আড়াই বছরে জেলায় রাস্তার কাজ তেমন হয়নি কেন?
দীর্ঘদিন ধরে ওই প্রকল্পে রাস্তা তৈরির কাজ করানো হত জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে। তারাই ঠিকাদার নিয়োগ করত। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে জেলা পরিষদের হাত থেকে ওই প্রকল্পের রাস্তা তৈরির কাজটি সরাসরি নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। তার পর থেকে সাকুল্যে গোটা পঁচিশ রাস্তার কাজ তারা করাতে পারে। কিন্তু সিংহভাগ রাস্তার কোনও রকম কাজই হয়নি। বছরখানেক আগে প্রকল্পটিতে ৪৯টি রাস্তার কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় ‘হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন’ (এইচআরবিসি)-কে। ওই সংস্থা গত জানুয়ারি মাসে দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু ঠিকাদাররা প্রতিটি রাস্তার জন্য গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি দর দেওয়ায় প্রকল্পটি ক্রমে ক্রমে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, যে টাকা এই প্রকল্পে কেন্দ্র বরাদ্দ করে, তাতে কোনও ঠিকাদারই কাজ করতে সে ভাবে রাজি হয় না। শহর লাগোয়া ২৫টি রাস্তার ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা না হলেও তিন বার দরপত্র আহ্বানের পরেও ৪৯টি রাস্তা তৈরিতে কোনও ঠিকাদার সংস্থাই সামিল হয়নি। তার পরেই এইচআরবিসিসি-কে এই ৪৯টি রাস্তা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরেও নতুন ঠিকাদারেরা বর্ধিত দর দেওয়ায় ফের একই সমস্যা দেখা দেবে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এইচআরবিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বর্ধিত দরপত্র-সহ সব নথি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছি। বর্ধিত ওই পরিমাণ টাকা তারা দিতে রাজি হলে তবেই এই সব কাজের জন্য ঠিকাদারদের বরাত দেওয়া হবে।”
ওই প্রকল্পের কাজ এ ভাবে থমকে যাওয়ায় নিজেদের তহবিল থেকে সম্প্রতি ৪০টি রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করে জেলা পরিষদ। কিন্তু ইতিমধ্যে নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় সাতটি রাস্তার জন্য ‘ওয়ার্ক-অর্ডার’ দিতে পারেনি জেলা পরিষদ। তাই শুরু হয়েছে ৩৩টি রাস্তার কাজ। তবে, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার তুলনায় এই প্রকল্প যে কিছুই নয় তা স্বীকার করেছেন জেলা পরিষদের কর্তাদের একাংশ। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে যেখানে এক-একটি রাস্তার জন্য বরাদ্দ গড়ে প্রায় এক কোটি, সেখানে ৩৩টি রাস্তার এক-একটির জন্য খরচ করা হচ্ছে গড়ে ২০ লক্ষ টাকা করে। জেলার ১৪টি ব্লকের প্রতিটিতেই দু’তিনটি করে রাস্তা হচ্ছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রের খবর।