Advertisement
E-Paper

চার শিশু-সহ আট মৃত্যু: বাড়িতে মজুত বাজি, ছিল গ্যাস সিলিন্ডারও, পাথরপ্রতিমাকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই ভাই

বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের সময় পরিবারের ১১ জন সদস্যের মধ্যে তিন জন বাড়িতে ছিলেন না। ওই তিন জন বাদে পরিবারের সকলেরই মৃত্যু হল। ঘটনায় পরিবারের দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৫৯
সোমবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। ঘিরে রাখা হয়েছে বাড়িটি।

সোমবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। ঘিরে রাখা হয়েছে বাড়িটি। — নিজস্ব চিত্র।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল আট। বাজি বিস্ফোরণের পরে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল রূপা বণিককে। তিনি ওই বাজি ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্য তুষার বণিকের স্ত্রী। দুর্ঘটনার পরে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়েছিল তাঁকে। মঙ্গলবার সকালে জানা যায়, ওই মহিলারও মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার সময়ে ওই পরিবারের ১১ জন সদস্যের মধ্যে তিন জন বাড়ির বাইরে ছিলেন। তাঁরা বাদে পরিবারের সব সদস্যেরই মৃত্যু হল দুর্ঘটনায়।

সোমবার রাতের ওই দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যে পদক্ষেপ করেছে পুলিশও! বাজি ব্যবসায়ী পরিবারের দুই সদস্য চন্দ্রকান্ত বণিক এবং তাঁর ভাই তুষারের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে ঢোলাহাট থানা। ঘরে বিপজ্জনক বস্তু মজুত রাখা, অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা-সহ মোট ছ’টি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। দমকল আইনেও মামলা রুজু হয়েছে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাড়ির পাশেই একটি ঘর থেকে বাজি তৈরির মশলা-সহ অন্য সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে। দুর্ঘটনার সময়ে চন্দ্রকান্ত, তুষার এবং তাঁদের মা বাড়িতে ছিলেন না। স্থানীয় সূত্রে খবর, দুই ভাই বর্তমানে গ্রামেই রয়েছেন।

সোমবার রাতে পর পর বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পাথরপ্রতিমার ঢোলাহাট থানা এলাকার দক্ষিণ রায়পুরের তৃতীয় ঘেরি এলাকা। বিস্ফোরণ হয় চন্দ্রকান্ত এবং তুষারের বাড়িতে। বাড়িতে বেশ কিছু বাজি মজুত করা ছিল। তা থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। দুর্ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বণিক পরিবারের সাত সদস্যের। চন্দ্রকান্ত এবং তুষারের বাবা অরবিন্দ বণিক (৬৫), ঠাকুরমা প্রভাবতী বণিক (৮০) , চন্দ্রকান্তের স্ত্রী সান্ত্বনা বণিক (২৮), দুই সন্তান অর্ণব বণিক (৯) ও অস্মিতা বণিক (৮ মাস) এবং তুষারের দুই সন্তান অনুষ্কা বণিক (৬) এবং অঙ্কিত বণিক (৬ মাস) মারা গিয়েছেন। তুষারের স্ত্রী রূপা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরে জানা যায়, তাঁরও মৃত্যু হয়েছে।

বাজি তৈরির পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে বণিক পরিবারের। স্থানীয় সূত্রে খবর, বড় ভাই চন্দ্রকান্তই মূলত ব্যবসার বেশির ভাগ কাজকর্মের দেখভাল করতেন। তাঁকে সাহায্য করতেন তুষার। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তাঁদের বাজি তৈরির অনুমোদনপত্র (লাইসেন্স) রয়েছে। পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানাও সেই কথাই জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওই বাড়িতে দীর্ঘ দিন ধরেই অবৈধ বাজি তৈরি হচ্ছিল। প্রশাসন আগে থেকে পদক্ষেপ করলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করছেন তাঁরা। সোমবার রাতে দুর্ঘটনার পর বাড়ি থেকে পর পর জোরালো শব্দ পাওয়া গিয়েছে। তা থেকে এলাকাবাসীদের একাংশ দাবি করছেন, সেখানে শব্দবাজিও (অবৈধ বাজি) মজুত ছিল। যদিও বিধায়কের দাবি, তিনি এলাকাবাসীদের থেকে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছেন, বাড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার রাখা ছিল। আগুন ধরার পরে ওই সিলিন্ডার ফেটেই শব্দ হয়েছে বলে মনে করছেন বিধায়ক।

তবে ওই বাড়িতে যে বাজি মজুত ছিল, তা মানছেন বিধায়ক। তাঁর বক্তব্য, বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি জায়গায় বাজি তৈরি করা হয়। তবে বাড়িতেও কিছু বাজি মজুত রাখা হত। বিধায়কের অনুমান, সম্ভবত বাড়ি থেকেই বাজি বিক্রি করত বণিক পরিবার। রাতের ওই বিস্ফোরণের পর থেকেই গোটা গ্রাম মুড়ে ফেলা হয়েছে পুলিশি নিরাপত্তায়। ঘিরে রাখা হয়েছে বাড়িটিকে। মঙ্গলবার গ্রামে যাওয়ার কথা রয়েছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দলের। দুর্ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে তারা।

Fire Dholahat Firecracker Blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy