Advertisement
E-Paper

সবুজ বাজি তৈরির ‘লাইসেন্সে’র আড়ালে অবৈধ বাজির কারবার? বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডে আট জনের মৃত্যুর পরে প্রশ্ন পাথরপ্রতিমায়

একই পরিবারের আট জনের মৃত্যু। তার মধ্যে চার শিশু, যাদের মধ্যে দু’জনের বয়স এক বছরেরও কম। কী ভাবে ঘটল দুর্ঘটনা? আতসবাজি তৈরির অনুমোদনপত্র ব্যবহার করে কি অবৈধ বাজি তৈরি হত? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যে উঁকি মারতে শুরু করেছে পাথরপ্রতিমায়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:১৪
সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে আট জনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে আট জনের মৃত্যু হয়েছে। — নিজস্ব চিত্র।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় বাজি থেকে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে আট জনের মৃত্যুর পর পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশাসন সূত্রে খবর, বাজি তৈরির অনুমোদনপত্র (লাইসেন্স) ছিল তাঁদের। পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানাও সেই কথাই জানাচ্ছেন। কিন্তু এলাকাবাসীদের একাংশের দাবি, ওই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ বাজি তৈরি হত। তাহলে কি সবুজ বাজি তৈরির অনুমোদন নিয়ে অবৈধ বাজি তৈরি হত সেখানে? এই প্রশ্নও উঠে আসতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে এলাকাবাসীদের দাবি, প্রশাসন আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে এই দুর্ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।

সোমবার রাতে পর পর বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পাথরপ্রতিমার ঢোলাহাট থানা এলাকার দক্ষিণ রায়পুরের তৃতীয় ঘেরি এলাকা। মজুত করা বাজি থেকে বিস্ফোরণ হয় গ্রামের এক বাড়িতে। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। দুর্ঘটনায় একই পরিবারের আট জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে চার শিশুও রয়েছে, যাদের মধ্যে দু’জনের বয়স এক বছরেরও কম। পরিবারের এক সদস্যকে গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে কলকাতায়। রাতের ওই বিস্ফোরণের পর থেকেই গোটা গ্রাম মুড়ে ফেলা হয়েছে পুলিশি নিরাপত্তায়। ঘিরে রাখা হয়েছে বাড়িটিকে। মঙ্গলবার গ্রামে যাওয়ার কথা রয়েছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দলের। দুর্ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন তাঁরা।

ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে চাপা অসন্তোষ দেখা গিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছোনোর আগে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন এলাকাবাসীরাই। তবে আগুনের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে কেউই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা বাড়ির ভেতরে থাকা মানুষদের বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন গ্রামবাসীরা। এলাকাবাসীদের একাংশের অভিযোগ, ওই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ বাজি তৈরি হচ্ছিল। স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা তা বন্ধ করতে কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ। ওই বাড়িতে বাজির ব্যবসার জন্য এলাকায় বাইরের কারিগরদেরও যাতায়াত ছিল বলে দাবি তাঁদের। সোমবারের এই দুর্ঘটনার জন্য প্রশাসনের ‘উদাসীনতা’ এবং পুলিশের ‘গাফিলতি’র দিকেই আঙুল তুলছেন গ্রামবাসীদের একাংশ।

রায়পুরের তৃতীয় ঘেরি এলাকা ওই বাড়িতে বণিক পরিবারের ১১ জন সদস্য থাকতেন। তাঁদের বাজি তৈরির পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। চন্দ্রকান্ত বণিক এবং তুষার বণিক দুই ভাই। সোমবার এই দুর্ঘটনায় তাঁদের বাবা অরবিন্দ বণিক (৬৫), ঠাকুরমা প্রভাবতী বণিক (৮০) , চন্দ্রকান্তের স্ত্রী সান্ত্বনা বণিক (২৮), দুই সন্তান অর্ণব বণিক (৯) ও অস্মিতা বণিক (৮ মাস) এবং তুষারের দুই সন্তান অনুষ্কা বণিক (৬) এবং অঙ্কিত বণিক (৬ মাস) মারা গিয়েছেন। তুষারের স্ত্রী রূপা বণিক আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরে জানা যায়, তাঁরও মৃত্যু হয়েছে।

দুর্ঘটনার পরে সোমবার রাতেই গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলেন পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা। এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নেন তিনি। বিধায়ক জানান, ওই বাড়ির ব্যবসায়ীর আতসবাজি তৈরির অনুমোদনপত্র রয়েছে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি জায়গায় বাজি তৈরি করা হয়। তবে বাড়িতেও কিছু বাজি মজুত রাখা হত। সম্ভবত, বাড়ি থেকেই বাজি বিক্রি করতেন তাঁরা। বিধায়কের অনুমান, কোনও কারণে বাড়িতে মজুত থাকা বাজি ফেটে বিস্ফোরণটি ঘটে থাকতে পারে। তবে পরিবারের বাকি সদস্যেরা কোথায় রয়েছেন, সে বিষয়ে সোমবার রাতে স্পষ্ট ভাবে কোনও মন্তব্য করতে পারেননি বিধায়ক।

বস্তুত, সোমবার রাতে দুর্ঘটনার পর বাড়ি থেকে পর পর জোরালো শব্দ পাওয়া গিয়েছে। তা থেকে এলাকাবাসীদের একাংশ দাবি করছেন, সেখানে শব্দবাজিও (অবৈধ বাজি) মজুত ছিল। যদিও বিধায়কের দাবি, তিনি এলাকাবাসীদের থেকে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছেন, বাড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার রাখা ছিল। আগুন ধরার পরে ওই সিলিন্ডার ফেটেই শব্দ হয়েছে বলে মনে করছেন বিধায়ক। মঙ্গলবার গ্রামে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে এলাকার সাংসদ বাপি হালদারের। কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের তরফে দ্রুত তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

Pathar Pratima Fire Death Firecracker Blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy