Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Bratya Basu

হিন্দুত্ব ‘হাইজ্যাকে’ আগ্রহী ছিলেন সঞ্জয় গান্ধী, পুজোয় ব্রাত্যের নাটকে ইন্ধন বিতর্কে

এ বারের একটি পুজোসংখ্যায় ‘এই রাত তোমার আমার’ শীর্ষক নাটক লিখেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ব্রাত্য বসু।

Bratya Basu.

ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।

 সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৯
Share: Save:

খাতায়-কলমে নাটক। তবে সব চরিত্র কাল্পনিক বলে কোনও বিধিবদ্ধ ঘোষণা সেখানে নেই। বরং, মূল কুশীলবদের চেহারার বর্ণনা বাস্তবের চেনা চরিত্রদেরই মনে করিয়ে দেয়। নাট্যকার আবার রাজনীতিক এবং রাজ্যের মন্ত্রীও। তাঁর সেই নাটকে উঠে আসা ইঙ্গিতই নতুন বিতর্কের উপাদান নিয়ে এসেছে। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা আজকের ভারতে যা করছেন, বেঁচে থাকলে ইন্দিরা গান্ধীর হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে সঞ্জয় গান্ধীও কি সেই হিন্দুত্বের পথে কংগ্রেসকে নিয়ে যেতেন? সেই গত শতাব্দীর আটের দশকেই? কংগ্রেস নেতারা এমন ইঙ্গিতের সঙ্গে প্রবল ভাবে ভিন্নমত হলেও নাট্যকার তাঁর রচনার কৌশলে কংগ্রেসকে কোথাও বিজেপির সঙ্গে এক বন্ধনীতে ঢুকিয়ে ছেড়েছেন!

এ বারের একটি পুজোসংখ্যায় ‘এই রাত তোমার আমার’ শীর্ষক নাটক লিখেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ব্রাত্য বসু। দিল্লির আওরঙ্গজ়েব রোডের বাড়িতে ১৯৮০ সালের ২২ জুন সন্ধ্যায় প্রিয়দর্শিনী গিলানির সঙ্গে তাঁর ছোট ছেলে পরঞ্জয় গিলানির দীর্ঘ কথোপকথনই নাটকের উপজীব্য। যেখানে দেখা যাচ্ছে, পর দিন সকালে দিল্লি ফ্লাইং ক্লাব থেকে বিমান ওড়ানোর জন্য ছেলে মরিয়া আর কিছুতেই তাঁকে উড়তে দিতে রাজি নন মা। মনে রাখা যেতে পারে, ১৯৮০ সালের ২৩ জুন দিল্লিতে বিমান ভেঙে সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়। ব্রাত্যের নাটকের পরঞ্জয় যে আসলে সঞ্জয় এবং প্রিয়দর্শিনীই ইন্দিরা, তা বোঝার জন্য এই দিনক্ষণ ছাড়াও আরও অজস্র উপায় ছড়িয়ে রয়েছে। জরুরি অবস্থার সময় থেকে দ্রুত ক্ষমতাবান হয়ে ওঠা কনিষ্ঠ পুত্রকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মায়ের কত রকম বিড়ম্বনা যে ছিল, তা ধরা আছে নাটকে দু’জনের কথোপকথনেই।

মা-ছেলের নানা কথা এগোতে এগোতেই বিতর্কিত অংশের সূত্রপাত। জরুরি অবস্থার পরে হারের ধাক্কা সামলে আবার জিতে নতুন করে ফিরে এসেছেন প্রিয়দর্শিনী। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই পঞ্জাব, অসমের সমস্যা কী ভাবে ভোগাচ্ছে, মায়ের সামনে তুলে ধরছেন পরঞ্জয়। তার পরেই তাঁর মোক্ষম উক্তি, ‘‘সেকুলারিজমের টুপি মানুষ আর খাবে না! ও সব ৩০ বছর আগে খেত। এখন যুগ পাল্টে গিয়েছে। নতুন দিনের জন্য নতুন স্লোগান চাই। আর তার নতুন অ্যাপ্লিকেশন।’’ মাকে বিস্মিত করে নতুন সেই স্লোগানও স্পষ্ট করে দিয়েছেন পরঞ্জয়— ‘গর্ব সে কহো, হাম হিন্দু হ্যায়’। ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’। তাঁর সাফ কথা, ‘‘এটাই এখন সামনের দিনের দর্শন। এটাই মানুষ সামনের দিনে খাবে। অন্তত আমার ঘ্রাণশক্তি তা-ই বলছে। মাত্র তিন মাসও হয়নি, জনসঙ্ঘ জনতা দল থেকে বেরিয়ে নতুন নাম নিয়েছে। ওদের ওই হিন্দুত্বের অ্যাজেন্ডা নিয়ে এ বার ওরা ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু ওরা এখনও নড়বড়ে। এটাই মোক্ষম সুযোগ ওদের স্লোগান আর তত্ত্ব হাইজ্যাক করার!’’

নাটকের পরঞ্জয়ের যুক্তি, প্রিয়দর্শিনী ও তাঁর বাবা (অর্থাৎ জওহরলাল) সমাজতন্ত্রের মূল তত্ত্ব নিজেদের সিদ্ধান্তের মধ্যে কাজে লাগিয়েছিলেন। স্লোগান দেওয়া হয়েছিল ‘গরিবি হটাও’-এর। কমিউনিস্টদের তত্ত্ব কংগ্রেস নিয়ে নেওয়ায় কমিউনিস্টেরা কয়েকটা রাজ্যের বাইরে বিশেষ কিছু করতে পারেনি। পরঞ্জয়ের মতে, সেই পথেই হিন্দুত্বের স্লোগান কেড়ে নিয়ে কংগ্রেসের এগোনো উচিত। নাটকের প্রিয়দর্শিনী অবশ্য তাঁদের প্রায় ১০০ বছরের পুরনো আদর্শ এবং দলের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করার এই দাবি মানেননি। নস্যাৎ করেছেন ছেলের প্রস্তাব। বলেছেন, তিনি বেঁচে থাকতে অন্তত এ সব হবে না। ছেলেকে ফের কাউন্সিলিং করার পরামর্শও দিয়েছেন প্রবল বিতৃষ্ণায়।

সেই রাতেই নাটকের পর্দা পড়ে যায়। বাকিটা তাই পুরোপুরিই কল্পনার গর্ভে। তবে এআইসিসি-র যে প্লেনারি অধিবেশনে ইন্দিরা কার্যত সঞ্জয়ের অভিষেক ঘটিয়েছিলেন, সে দিন গুয়াহাটিতে উপস্থিত এ রাজ্যের কংগ্রেসের দুই বর্ষীয়ান নেতা এমন তত্ত্বের সঙ্গে সহমত নন একেবারেই। প্রাক্তন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘সঞ্জয় গান্ধীর সব ভাবনা-চিন্তা বাঁধা ছকে ছিল না। কিন্তু তাঁর ভাবনা কোনও ভাবেই সাম্প্রদায়িক বা হিন্দুত্ব ঘেঁষা ছিল না। নাট্যকারের স্বাধীনতা থাকতেই পারে। তবে এই সময়ে এই ভাবে সঞ্জয়কে দেখানো দুরভিসন্ধিমূলক!’’ আর প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলছেন, ‘‘সে সময়ে ইন্দিরা-সঞ্জয়ের কিছু সভা দেখেছি। আমাদের নেতাদের কাছেও জেনেছি অনেক কিছু। সঞ্জয় হিন্দুত্বের রাজনৈতিক কৌশল নিতে আগ্রহী ছিলেন, আমার জ্ঞানত এমন ভাবনার বাস্তব কোনও ভিত্তি নেই! জামা মসজিদের ইমাম বুখারিকে নিয়ে পরিকল্পনায় ইন্দিরার সঙ্গে তো সঞ্জয়ও ছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bratya Basu Sanjay Gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE