Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩
Dilip Ghosh

আপাতত দল বড় করে পরে ছাঁকনি, নীলবাড়ির লক্ষ্যে এখন দিলীপ-নীতি

নীলবাড়ি দখল করাই ‘পাখির’ চোখ রাজ্য বিজেপি-র। বিধানসভা নির্বাচনের আগে অন্য দল থেকে নেতা-কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাছবিচার চাইছে না দল।

দিলীপ ঘোষা। গ্রাফিক—শৌভিক দেবনাথ।

দিলীপ ঘোষা। গ্রাফিক—শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:০৫
Share: Save:

নীলবাড়ি দখল করাই ‘পাখির’ চোখ রাজ্য বিজেপি-র। তাতে কোনও ছুঁতমার্গ দেখালে চলবে না। অতএব বিধানসভা নির্বাচনের আগে অন্য দল থেকে নেতা-কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাছবিচার চাইছে না দল। বুধবার এমনটাই বোঝালেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কারণ, তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘এখন দল বড় করতে হবে। বাছাবাছি পরে করা হবে।’’

Advertisement

মকর সংক্রান্তির পরেই বিভিন্ন দলের অনেক নেতা-বিধায়ক বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। অন্য দিকে, ভিনদলের অনেক নেতাকে বিজেপি-তে নেওয়া নিয়ে পদ্ম শিবিরের অন্দরে ক্ষোভ-বিক্ষোভও রয়েছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত দিলীপও ‘বাছবিচার’-এর পক্ষেই ছিলেন। কিন্তু সংক্রান্তির দু’দিন আগে বুধবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার রুইয়ায় একটি চা-চক্রে দিলীপ বলেছেন, ‘‘বিজেপি বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। যাঁরা বাংলায় পরিবর্তনের পরিবর্তন আনতে চান, তাঁদের সকলকে স্বাগত। সকলকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল সরকারকে সরানোই আমদের লক্ষ্য।’’

কিন্তু দলের ভিতরেই তো অনেকে সেটা চাইছেন না! এতদিন যাঁরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক জমি তৈরি করেছেন বা জমি ধরে রেখেছেন, তাঁরা কী করে একদা শত্রুর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন! জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘অনেক মানুষকে নিয়ে দল। নানা রকম মতামত থাকতেই পারে। তবে কে থাকবে, কে থাকবে না, সেটা মানুষ বিচার করবে। দল সময় মতো সবাইকে বেছে নেবে। যাঁরা যোগ্য তাঁরাই থাকবেন।’’

আরও পড়ুন : ভোট দুয়ারে, কমিশন কর্তার বৈঠকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গুরুত্ব

Advertisement

গত ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সেই সময়েই জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে, শুভেন্দুর সঙ্গেই বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন আসানসোল পুরসভার প্রশাসক তথা পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাতে প্রথম ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। সেই আপত্তি ‘সঙ্গত’ বলে মত দেন দিলীপও। কিন্তু বাবুল-দিলীপকে প্রকাশ্যে কিছু না বলা হলেও ওই বিষয়ে দলের বিরুদ্ধ লাইনে মুখ খোলার জন্য দুই রাজ্য নেতা-সহ ৪ জনকে শো-কজ করেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই ইতিহাসের কথা মনে রাখলে দিলীপের বুধবারের বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থাৎ, এখন অন্য দল থেকে বিজেপি-তে ঢোকার দরজা হাট করে খোলা!

সম্প্রতি রাজ্য বিজেপি প্রায় প্রতিদিনই জেলায় জেলায় ‘যোগদান মেলা’ নামে কর্মসূচি শুরু করেছে। সেই কর্মসূচি চলছে কলকাতায় দলের সদর দফতর বা নির্বাচনী কার্যালয়েও। সেখানে বড় মাপের কেউ যোগ না দিলেও বিভিন্ন দলের সাধারণ কর্মীদের নেওয়া হচ্ছে। সেই মেলা যোগদান নিয়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূল পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়‌ দলত্যাগীদের সম্পর্কে রানাঘাটের এক সভায় বলেছেন, ‘‘ওরা অনেক টাকা করেছে। কাউকে ইডি, কাউকে সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়েছে। ওই সব ভয় দেখিয়ে বলেছে, যদি টাকা রাখতে চাও, তা হলে বিজেপি-তে যাও। যদি কালো টাকা সাদা করতে চাও, তবে বিজেপি-তে যাও।’’ মমতা আরও বলেছেন, ‘‘বিজেপি জাঙ্ক পার্টি হয়ে গিয়েছে। ডাস্টবিনের মধ্যে সব ফেলে দিচ্ছে। আর সেই ডাস্টবিন থেকে বিজেপি করলে সাত খুন মাফ। অন্যরা করলে বন্ধ ঝাঁপ! বিজেপি হল ওয়াশিং মেশিন। তৃণমূলে থাকলে সবাই কালো। আর বিজেপিতে গেলেই সকলে ভাল!’’

আরও পড়ুন : চেনটা ছিঁড়ে গেল, বকলসটা এখনও গলায় আটকে, বলছেন শিশির

এরই মধ্যে আবার রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দাবি করেছেন, ৬-৭ জন বিজেপি সাংসদ তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। মঙ্গলবার হাবরায় জ্যোতিপ্রিয় বলেছেন, ‘‘৬-৭ জন সাংসদ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তৃণমূলে যোগ দেবেন। যে সব বিধায়ক বিজেপি-তে গিয়েছিলেন, তাঁরাও এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’’ দিলীপ অবশ্য সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। বুধবার দিলীপ বলেন, ‘‘উনি (জ্যোতিপ্রিয়) আগে বিজেপি-র একজন বুথকর্মীকে তৃণমূলে নিয়ে দেখান!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.