Advertisement
E-Paper

নড্ডার কনভয়ে ইটবৃষ্টি, গাড়ি ভাঙচুর, লাঠি চালাল পুলিশ

রাজ্য সরকারের কাছে অমিত শাহ রিপোর্ট তলব করে নড্ডার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:৪৯
তৃণমূলের বিরুদ্ধে নড্ডার কনভয়ের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তুলল বিজেপি। ছবি: রাজু বিস্তার টুইটার থেকে।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে নড্ডার কনভয়ের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তুলল বিজেপি। ছবি: রাজু বিস্তার টুইটার থেকে।

রণক্ষেত্র ডায়মন্ড হারবার!

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সভার আগে অশান্তি ডায়মন্ড হারবারে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে নড্ডার সভার আগে নড্ডার কনভয় শিরাকোল মোড় থেকে দফায় দফায় আটকায়। কনভয়ে ইট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর করা হয় বাস, সংবাদমাধ্যমের গাড়ি। ইট ছোড়া হয় কেন্দ্রীয় নেতা তথা পশ্চিমঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের গাড়িতে। গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে যায়। ড্রাইভারের দিকের কাচ ভেঙে পাথর গাড়ির ভেতরে ঢোকে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার সকালে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, নড্ডার কনভয়ে হামলা হতে পারে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘গত কাল থেকে তৃণমূল লোক জড়ো করেছিল ডায়মন্ড হারবারের যাওয়ার পথে। ওরাই হামলা চালিয়েছে।’’ নড্ডার নিরাপত্তার গাফিলতির অভিযোগ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দেন তিনি। যার অব্যবহিত পরে রাজ্যের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেন শাহ।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ যাত্রা শুরু করেন নড্ডা। এর পর ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার পথে বহু স্থানে তাঁর কনভয় আটকানো হয়। কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার আসতে যে পথগুলি ব্যবহার করা হয়, প্রায় প্রতিটি রোডের বিভিন্ন জায়গায় কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। কালো পতাকা হাতে বিজেপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর শিরাকোলে সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা ও জেলার তৃণমূল যুব সভাপতি সওকাত মোল্লার নেতৃত্বে বিক্ষোভে হাজির হন বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। আরেকটু এগোলেই সরিষার কাছে ব্লক তৃণমূল সভাপতি অরুময় গায়েন ও সামিম আহমেদের নেতৃত্বে চলে পথ অবরোধ। ডায়মন্ড হারবার শহরের জেটি ঘাট ও রত্নেশ্বরপুরে তৃণমূল কর্মীরা পথ অবরোধ করেন। একই ভাবে বিক্ষোভ চলে রায়দিঘি রোডের মন্দিরবাজার ও হটুগঞ্জ বাস মোড়ে। প্রত্যেক জায়গাতেই আটকে পড়েন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। নড্ডাকে আটকাতেই পরিকল্পনা মাফিক তৃণমূল রাস্তা অবরোধ করছে বলে বিজেপির অভিযোগ।

আরও পড়ুন: নড্ডার সফরের প্রথমদিনে গোসাঘরে মুকুল, রাতে মানভঞ্জন

উস্থির শিরাকোলের কাছে কনভয় কাটকানো হয়, এরপর কনভয় লক্ষ করে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। ইটের আঘাতে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটে বলে জানা গিয়েছে। এমনকি পুলিশ ও কার্যকর্তাদের বেশ কয়েকটি গাড়ির কাচও ভেঙে দেওয়া হয় বলে খবর। ডায়মন্ড হারবারের সরিষাতেও স্টেশন মোড়ে কনভয়ের পথ আটকে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়ের গাড়ি আটকে কাচের উপর ধাক্কাধাক্কি করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কনভয়ের সঙ্গে থাকা সংবাদমাধ্যমের গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়।

আরও পড়ুন: বহিরাগতদের দেখলেই পুলিশে জানান: মমতা

বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় নতুন পোলের কাছে দলীয় পতাকা ও ব্যানার লাগানোর সময় বিজেপির টাউনের মণ্ডল সভাপতি ও এক কর্মীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম অবস্থায় দুই কর্মীকেই ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ হাপাতালে ভর্তি করা হয়। যদিও তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দুপুর ১টার পর নড্ডার গাড়ি ঢোকে ডায়মন্ড হারবার।বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবারে নড্ডা একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। স্থানীয় সুলতানপুরের লাইটহাউস মাঠে জেলার বিজেপি কার্যকর্তাদের নিয়ে বৈঠক সারেন নড্ডা। লাইটহাউসের মাঠে মঞ্চ তৈরি হয়। ১৪টি এলুমিনিয়ামের পিলার দিয়ে ২০০ফুট আয়তনের মঞ্চ তৈরি হয়।

এই ভিডিয়োটি শেয়ার করা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে। যদিও, সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডিজিটাল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নড্ডার বৈঠকের আগে বৃহস্পতিবার শহরজুড়ে পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড লাগাচ্ছিলেন বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। ডায়মন্ড হারবার টাউন মণ্ডলের সভাপতি সুরজিত হালদারের নেতৃত্বে বেশ কিছু বিজেপি কর্মী এই কাজ করছিলেন। অভিযোগ, আচমকা নতুন পোলের কাছে তৃণমূলের বেশ কিছু দুষ্কৃতী লাঠি, রড নিয়ে চড়াও হয়। বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। গুরুতর আহত হয়েছেন বিজেপির টাউন মণ্ডল সভাপতি সুরজিৎ হালদার ও বিজেপিকর্মী সৌরভ মণ্ডল। দলের কর্মীরা তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আক্রান্ত সুরজিৎ হালদার বলেন ‘‘এখানে কোনও গণতন্ত্র নেই। তৃণমূলের লোকজন নড্ডার সভা বাঞ্চাল করতে আমাদের মারধর করেছে।’’ তবে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল নেতা অরুময় গায়েন। বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই। এ সব বিজেপির গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফল।’’

ডায়মন্ড হারবারের লাইট হাউসের মাঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনার তিনটি সাংগঠনিক জেলার কার্যকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন নড্ডা। বৈঠক সেরে দুপুরে সরিষা রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে যাওয়ার কথা তাঁর। রামকৃষ্ণ দেবের মন্দিরেপুজো দিয়ে দুপুরে আশ্রমেই মধ্যাহ্নভোজ সেরে নেবেন বলেও শোনা যাচ্ছে। প্রায় ঘণ্টাখানেক রামকৃষ্ণ মিশনে থাকার পর লাইটহাউসের মাঠে আবার ফিরে আসার কথা তাঁর। দুপুর ২টো নাগাদ জেলার মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির। মৎস্যজীবীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বৈঠকে। এরপর বিকেল ৩টে থেকে বিজেপির ক্ষতিগ্রস্ত কার্যকতা ও কর্মীদের নিয়েও বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। নড্ডার হাতধরে একাধিক বিরোধী দলের নেতারা বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলেও দলীয় সূত্রে খবর। বিজেপির ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সুফল ঘাটু বলেন ‘‘এই বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতির কাছ থেকে যেমন নির্দেশ পাওয়া যাবে, সেই মতোই একুশের বিধানসভা নির্বাচনের কাজ শুরু করবেন দলের কার্যকর্তারা।’’

প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ডায়মন্ড হারবারের লাইটহাউসের মাঠে জনসভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে ভোটে তৃণমূল জয় লাভ করলেও ভোটের মার্জিন বাড়িয়েছিল পদ্মফুল। এ বার বিধানসভা নির্বাচনের আগে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় ডায়মন্ড হারবারে পা রাখতে চলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। দলের কার্যকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের জন্য বেছে নেওয়া হয় সেই লাইটহাউসের মাঠকেই। ভোটের আগে নড্ডার ডায়মন্ড হারবার সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

তবে সকাল থেকে যে ভাবে অশান্তি হল, তাতে এই কর্মসূচি কতদূর কার্যকর করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন দলের একাংশ।

TMC BJP Abhishek Bandtopadhyay Mukul Roy J P Nadda Diamond Harbour
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy