E-Paper

‘নো ভোট টু মমতা’, শুভেন্দুর ‘তত্ত্ব’ নিয়ে মতভেদ গেরুয়া শিবিরের অন্দরে

পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার বহু আগে নন্দীগ্রাম বিধানসভার একাংশে পঞ্চায়েতের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। যা নিয়ে এত দিন দলের অন্দরে ক্ষোভ ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪৬
Suvendu Adhikari.

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।

‘নো ভোট টু মমতা’ স্লোগানকে সামনে রেখে তৃণমূল বিরোধী ভোটকে এক জায়গায় অনার যে-বার্তা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দিয়েছিলেন, তার পাল্টা তত্ত্ব উঠে এল রাজ্য বিজেপির পঞ্চায়েত বিষয়ক বিশেষ সাংগঠনিক সভা থেকে। বিধাননগরে পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রেক্ষাগৃহে বৃহস্পতিবার দলের সভায় শুভেন্দু কিংবা দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ উপস্থিত না থাকলেও ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল, দীপক বর্মণ, পঞ্চায়েত নির্বাচন বিষয়ক প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক দেবশ্রী চৌধুরী প্রমুখ।

সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতের রণকৌশল ব্যাখ্যায় দেবশ্রী জানান, নিচু তলায় কোনও রকম মহাজোট হবে না। বিজেপি নিজস্ব পতাকা এবং চিহ্ন নিয়েই লড়বে। একাই লড়বে। সেই সঙ্গে তিনি জানান, যে হেতু বাম-কংগ্রেসের কোনও বিধায়ক নেই, তাই রাজ্যে একমাত্র বিরোধী দল বিজেপি। যদি কাউকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের-বিরুদ্ধে-এক পরিস্থিতিতে লড়তে হয়, তা হলে বিজেপি তাঁকে প্রতীক দেবে। তাঁকে বিজেপির প্রতীকেই লড়তে হবে। অন্য কোনও প্রতীকে লড়াই করলে বিজেপি তাঁকে সমর্থন করবে না।

শুভেন্দু এর আগে একাধিক বার বলেছিলেন, “কে কোথায় জিতবে সেটা পরের বিষয়, আগে তৃণমূলকে হারাতে হবে।” এমনকি সুকান্ত বলেছিলেন, “আমরা চেষ্টা করব সব বুথে প্রার্থী দিতে, যেখানে প্রার্থী দেব না, কৌশলগত কারণেই দেব না।” রাজনৈতিক মহলের মতে, সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বিজেপির রক্ষণশীল অংশের প্রতিনিধি দেবশ্রীর এ দিনের বক্তব্য কার্যত শুভেন্দুর অলিখিত ‘জোট তত্ত্ব’কে খারিজ করে দিল।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার বহু আগে নন্দীগ্রাম বিধানসভার একাংশে পঞ্চায়েতের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। যা নিয়ে এত দিন দলের অন্দরে ক্ষোভ ছিল। সম্প্রতি সেখানে দেওয়াল লিখন হলেও এই দ্বন্দ্বের কারণে প্রার্থীর নাম লেখার জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছিল। সূত্রের দাবি, এ দিনের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গও ওঠে। দলের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে জেলা নেতৃত্বকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। যদিও রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে জানান, প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা নিয়ে একাধিক স্তরে আলোচনা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এখনই কোনও তালিকাকে চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়ার কারণ নেই।

বৈঠকে বিরোধী পরিসরে বিজেপির প্রভাব কমছে বলেও মন্তব্য করেছেন কয়েক জন। সূত্রের দাবি, শুভেন্দু ‘ঘনিষ্ঠ’ এক বিধায়ক দলের সাংগঠনিক কাজকর্মের তীব্র সমালোচনা করে জানান, এই ধরনের কাগুজে কর্মসূচির কোনও মূল্য রাজনীতিতে নেই। তিনি জানান, বুথ সশক্তিকরণে যে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, তা-ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘জল মেশানো’। বাস্তবের সঙ্গে কোনও যোগ নেই। তাঁর দাবি, দুর্নীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ। মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে যেতে প্রস্তুত। তারা কিন্তু অপেক্ষা করবে না বিজেপির কবে প্রস্তুতি শেষ হবে। তারা কিন্তু নিজের মতো বিরোধী শক্তি খুঁজে নেবে। নেতারা অন্য পৃথিবীতে থাকেন। তাঁরা জানেন না নিচু তলায় কী ঘটছে। ইতিমধ্যে অন্য অনেকে বিরোধী পরিসর দখল করে নিয়েছে।

যদিও এই সব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি দেবশ্রী। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে নভেম্বর মাস থেকে আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সেই নিয়েই আলোচনা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।” তবে দলের কৌশল নিয়ে তিনি রাখঢাক না করেই বলেছেন, “রাজ্যের প্রধান এবং একমাত্র বিরোধী দল বিজেপি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমরাই লড়ব। কেউ যদি এই লড়াইয়ে শামিল হতে চান তা হলে তাঁকে আমাদের পতাকা নিয়েই লড়তে হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suvendu Adhikari BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy