E-Paper

পানিহাটিতে অস্ত্রের ভান্ডার, ধৃত ‘নেপালি’কে নিয়ে তরজা

সোমবার রাতে পানিহাটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে মৌলানা সেলিম রোডের একটি দোতলা বাড়িতে ওই অস্ত্র-ভান্ডারের খোঁজ মিলেছে। মঙ্গলবার সকালে গ্রেফতার হয়েছে ওই বাড়ির মালিক নইম আনসারি ওরফে নেপালি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫ ০৮:৫২
অস্ত্র ও কার্তুজের সম্ভার। মঙ্গলবার।

অস্ত্র ও কার্তুজের সম্ভার। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

স্থানীয়েরা জানতেন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিটি আদ্যোপান্ত রাজনীতির লোক। শাসকদলের নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। এ দিকে, তাঁরই বাড়ি থেকে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধারে বিস্মিত সাধারণ লোকজন। ধৃতের সঙ্গে শাসকদলের স্থানীয় বিধায়ক-সহ অন্য নেতৃত্বের ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে কটাক্ষ করেছে বিরোধী দল বিজেপি।

সোমবার রাতে পানিহাটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে মৌলানা সেলিম রোডের একটি দোতলা বাড়িতে ওই অস্ত্র-ভান্ডারের খোঁজ মিলেছে। মঙ্গলবার সকালে গ্রেফতার হয়েছে ওই বাড়ির মালিক নইম আনসারি ওরফে নেপালি। পুরো ঘটনাকে ঘিরে এ দিন তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এত অস্ত্র মজুত করে রেখেছিল ওই তৃণমূলকর্মী? রহস্য কী? বিরোধীদের দাবি, বিধানসভা ভোটে সন্ত্রাস করতেই অস্ত্র মজুত করছিল শাসকদল। কিন্তু শুধু কি তাই? ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের উপ-নগরপাল (মধ্য) ইন্দ্রবদন ঝা বলেন, ‘‘কোথা থেকে, কী ভাবে এই অস্ত্র এল, কেন মজুত রাখা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ধৃতকে এ দিন ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এ দিন রাতে খড়দহ থানায় এসে নেপালিকে জেরা করেন ব্যারাকপুরের নগরপাল অজয় ঠাকুর।

পুলিশ জানায়, সোমবার কামারহাটি থানার পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পারে, নেপালির বাড়িতে অস্ত্র মজুত রয়েছে। এর পরেই খড়দহ থানাকে বিষয়টি জানানো হয়। দুই থানার যৌথ বাহিনীরাতেই ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। তবে সেই সময়ে বাড়িতে ছিল না নেপালি। পুলিশ জানায়, বাড়ির একতলার ঘরের এক কোণে রাখা ব্যাগ খুলতেই দেখা যায়, ভিতরে অস্ত্র ভর্তি। চারটি বড় দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, বিভিন্ন আকারের মোট ১৩ রাউন্ড কার্তুজ,কুঠার, চপার ও তলোয়ার উদ্ধার হয়। অন্য দিকে, অস্ত্র উদ্ধারের খবর চাউর হতেই এলাকা থেকে গা-ঢাকা দেয় নেপালি। রাতভর তল্লাশি চালিয়ে এ দিন ভোরে বি টি রোডেরধানকল মোড় থেকে তাকে ধরে পুলিশ।

পানিহাটি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কামারহাটি পুরসভার সীমানা এলাকা। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, নেপালির দোতলা বাড়ির সব জানলা-দরজা বন্ধ। যে কয়েক জন ভাড়াটে রয়েছেন, তাঁরা কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। বাড়ির নীচে রয়েছে ঝালাইয়ের কারখানা। স্থানীয়েরা জানান, এক সময়ে নেপালি ওই কারখানা চালালেও দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। এখন গাড়ি ভাড়ায় খাটানোর ব্যবসা করত নেপালি। বাড়ির দু’দিকে লাগানো রয়েছে সিসি ক্যামেরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘উনি তৃণমূলকর্মী বলেই জানতাম। কিন্তু বাড়িতে অস্ত্র কেন রেখেছিলেন, তা বলতে পারব না।’’ তবে, সূত্র বলছে, নেপালির বিরুদ্ধে পুরনো অপরাধমূলক কাজের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সেই দিকটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পানিহাটির এই বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র।

পানিহাটির এই বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।

এ দিন নেপালির দু’টি ছবি (আনন্দবাজার পত্রিকা অবশ্য এর সত্যতা যাচাই করেনি) সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যার একটিতে পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষের একেবারে পাশে, গলায় দলীয় উত্তরীয় পরে দাঁড়িয়ে নেপালি। অন্য ছবিতে বিধায়ক-পুত্র তথা পানিহাটির চেয়ারম্যান পারিষদ তীর্থঙ্কর ঘোষ এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি বিশ্বনাথ দে-র সঙ্গে দেখা যাচ্ছে নেপালিকে। সমাজমাধ্যমে শুভেন্দু দাবি করেছেন, নইম বিধায়ক নির্মল ঘোষের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। নইমকে প্রায়ই বিধায়কের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। ওই দু’জনের একত্রে ফ্রেমবন্দি বহু ছবি, ভিডিয়ো রয়েছে। এমনকি, পুরপ্রতিনিধি বিশ্বনাথের ডান হাত বলেও নেপালি এলাকায় পরিচিত, দাবি করেছেন শুভেন্দু।

নির্মলের দাবি, ‘‘আমি ৫০ বছর ধরে পাবলিক ফিগার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, কর্মসূচিতে যাই। সেখানে কে, কোথায় ছবি তুলছে তা দেখিয়ে কী হবে? শুভেন্দুর সঙ্গেও তো অনেক দুষ্কৃতী ঘুরে বেড়ায়।’’ নেপালি কি তৃণমূলকর্মী? নির্মল বলেন, ‘‘কেউ তৃণমূল করতেই পারেন। কিন্তু ও দলের কর্মী কিনা, দেখতে হবে। তবে দল করলেও, অন্যায় করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’ নেপালির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা অস্বীকার করেছেন বিশ্বনাথও। সিপিএম নেতা মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের প্রশ্রয়ে যারা আছে, সকলের বাড়ি তল্লাশি করলে অস্ত্র মিলবে। পুলিশের উচিত মাথা পর্যন্ত পৌঁছনো।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Panihati police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy