Advertisement
E-Paper

হাসপাতালেই ‘হেনস্থা’, ইস্তফা চিকিৎসকের 

ফের চিকিৎসক নিগ্রহের অভিযোগ সরকারি হাসপাতালে। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে মহিলা তৃণমূল কর্মীর। ইস্তফাও দিয়েছেন অপমানিত চিকিৎসক। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০৩
তৃণমূল কর্মী প্রিয়াঙ্কা শী। চিকিৎসক অনিরুদ্ধ ঘোড়ই

তৃণমূল কর্মী প্রিয়াঙ্কা শী। চিকিৎসক অনিরুদ্ধ ঘোড়ই

ফের চিকিৎসক নিগ্রহের অভিযোগ সরকারি হাসপাতালে। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে মহিলা তৃণমূল কর্মীর। ইস্তফাও দিয়েছেন অপমানিত চিকিৎসক।

সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। গত শনিবারই দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে এক তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে চিকিৎসক নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল। ইস্তফা দেন সেই চিকিৎসকও।

খড়্গপুরের ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সন্ধ্যায়। শ্বাসকষ্ট নিয়ে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন বৃদ্ধা যোগমায়া শী। পরিজনেদের অনুরোধে তাঁকে ট্রমা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকালে বহির্বিভাগে কর্তব্যরত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ ঘোড়ই ওই বৃদ্ধাকে পরীক্ষা করে মহিলা (মেডিসিন) বিভাগে স্থানান্তরের কথা জানান। অভিযোগ এরপরই বৃদ্ধার নাতনি তৃণমূল কর্মী প্রিয়াঙ্কা শী চিকিৎসককে গালিগালাজ করেন, কেড়ে নেওয়া তাঁর গাড়ির চাবি। অনিরুদ্ধ বলেন, “ওই যুবতী নিজেকে জনপ্রতিনিধি দাবি করে আমাকে চূড়ান্ত হেনস্থা করেন। এত বছর হাসপাতালে রয়েছি। জনপ্রতিনিধি বা রোগীর পরিজন, কেউ এমন করেননি।”

এরপরই ‘অপমানিত’ চিকিৎসক সুপারের অফিসে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন। হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “চিকিৎসায় গাফিলতি হয়নি। পরিজনেদের অনুরোধে ওই রোগীকে ট্রমা ইউনিটে সাময়িক ভর্তি রাখা হয়েছিল।’’ ইস্তফার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান সুপার।

রাজ্যের নানা প্রান্তে বারবারই হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। এমন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে পশ্চিম মেদিনীপুরও। গত বছর অগস্টে ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটিতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে শৌচাগারের নোংরা মাখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হন কেশিয়াড়ির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। গত জুনে আবার খড়্গপুর হাসপাতালেই এক চিকিৎসকের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান রোগীর পরিজনেরা। আর গত ২১ নভেম্বর বেলদায় হেনস্থা করা হয় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে।

বারবার এমন ঘটনায় চিকিৎসকেরা ক্ষুব্ধ। পশ্চিমবঙ্গ ডক্টরস্‌ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এমনিতেই জেলার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকেরা যেতে চান না। যে ক’জন যান তাঁদের যদি এ ভাবে নিগ্রহ করা হয়, তাহলে তো তাঁরা চাকরি ছাড়বেনই। সরকারের উচিত আগে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।’’

প্রিয়াঙ্কার নামে থানাতেও অভিযোগ করেছেন খড়্গপুরের ওই চিকিৎসক। তাঁর ক্ষোভ, “এমন অপমানের পরে মাথা তুলে কাজ করার মানসিকতাই চলে যাচ্ছে।” প্রিয়াঙ্কার অবশ্য দাবি, “অনিরুদ্ধ ঘোড়ই আমার ঠাকুমার চিকিৎসা না করে পরিজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। উনি যে নার্সিংহোমে থাকেন সেখানে ঠাকুমাকে ভর্তির পরামর্শও দেন। তা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে হেনস্থা করিনি।”

এ দিনের ঘটনার পরে শহরের তৃণমূল নেতারা হাসপাতালে এসেছিলেন। ওই চিকিৎসককে ইস্তফা প্রত্যাহারের আবেদন করেন তাঁরা। কিন্তু অনিরুদ্ধ রাজি হননি। পরে তৃণমূলের শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “নিন্দনীয় ঘটনা। প্রিয়াঙ্কা শীর বিরুদ্ধে দলগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য নির্মল ঘোষেরও বক্তব্য, “চিকিৎসককে হেনস্থা বরদাস্ত করা যায় না।” পুলিশও ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

Harassment Doctor Resignation Kharagpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy