Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দুপুরে ঘরে থাকতেই বলছেন ডাক্তারেরা

দুপুরে ভাতঘুমের জন্য অন্তত আধ ঘণ্টা বরাদ্দ রয়েছে চিনের বহু অফিস ও কারখানায়। যাকে বলে ‘চাইনিজ ন্যাপ’। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে গনগনে গ্রীষ্ম এমন ধুন্ধুমার শুরু করেছে, তাতে দুপুরে অফিস-কাছারি থেকে বাইরে না-বেরোনোর বিজ্ঞপ্তি জারি হলেই যেন ভাল হয়! কার্যত এই পরামর্শই দিচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। সাবধান করে দিয়ে তাঁরা বলছেন, খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দুপুরে বেরোবেন না।

সাবেরী প্রামাণিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০৩:২৪
Share: Save:

দুপুরে ভাতঘুমের জন্য অন্তত আধ ঘণ্টা বরাদ্দ রয়েছে চিনের বহু অফিস ও কারখানায়। যাকে বলে ‘চাইনিজ ন্যাপ’। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে গনগনে গ্রীষ্ম এমন ধুন্ধুমার শুরু করেছে, তাতে দুপুরে অফিস-কাছারি থেকে বাইরে না-বেরোনোর বিজ্ঞপ্তি জারি হলেই যেন ভাল হয়!

কার্যত এই পরামর্শই দিচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। সাবধান করে দিয়ে তাঁরা বলছেন, খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দুপুরে বেরোবেন না। আর যদি বেরোতেই হয়, তা হলে যত দ্রুত সম্ভব কাজ মিটিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ুন। কারণ, বেলা ১০ টা না বাজতেই সূর্য আগুন ঝরাতে শুরু করছে। সঙ্গে জলীয় বাষ্প যোগ হয়ে বাড়িয়ে তুলছে বিপদ।

শুক্র ও শনিবার কলকাতায় দুই ট্যাক্সিচালকের আচমকা মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বাড়ির লোকজনের বক্তব্য, মৃত্যু অতিরিক্ত গরমেই। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ট্যাক্সিচালকদের গাড়ি বার না করার পরামর্শ দিয়েছে সিটু। মালিকদের সংগঠন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন এতে সমর্থন জানিয়েছে। ওই সময়ে কোনও চালক যাত্রী তুলতে অস্বীকার করলে যাতে তাঁর জরিমানা না হয়, সে জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জিও জানাবেন মালিকেরা।

শুধু কলকাতা শহরে নয়, তার কাছাকাছি এলাকা এবং অন্য জেলা থেকেও শনিবার মৃত্যুর খবর এসেছে। এ দিন সকালে নিউ টাউনের যাত্রাগাছি এলাকায় মাঠে কাজ করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে যান বাঞ্ছা সর্দার (৫০)। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। নদিয়ার করিমপুরে মারা যান সুভাষ প্রামাণিক (৩৩)। বীরভূমের লাভপুরে মাঠে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে পবন পত্রধরের (৪৫)। সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসকেরা বলছেন, অত্যধিক গরম ও রোদের ফলে মৃত্যু। কারও ক্ষেত্রে সানস্ট্রোকের কথাও বলা হয়েছে।

প্রবল গরমে যে হৃদ‌্‌যন্ত্র বিকল হতে পারে, সে জন্য সাবধান করেছেন চিকিৎসকেরা। কার্ডিয়াক সার্জেন সত্যজিৎ বসু বলেন, ‘‘গরমে হৃদ্‌যন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে, সোডিয়াম-পটাসিয়াম কমে যায়, শরীরে তরল কমে কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। এর থেকে বাঁচার উপায়, প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া।’’ তবে তাঁর সংযোজন, ‘‘হৃদ্‌যন্ত্রে যাঁদের সমস্যা আছে, তাঁরা বাড়তি জল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।’’

ছাতা-সানগ্লাসের ব্যবহার, প্রচুর জল ও টাটকা ফলের রস খাওয়ার কথা বলেছেন চিকিৎসকেরা। পরতে বলেছেন সুতির হাল্কা, ঢিলেঢালা পোশাক। ডাক্তারি পরামর্শের কথা মাথায় রেখে সল্টলেকের স্বাস্থ্যভবন থেকেও জেলায় জেলায় এমন সাবধানতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ট্রাফিক পুলিশের মতো যাঁরা দিনভর রোদ মাথায় নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের বেশি করে জল খাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। জন্য বরফ-ভরা নেক-কলার দেওয়া হয়েছে। ওই বিশেষ কলার লাগিয়ে রাখলে রোদেও শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তা ছাড়া ছাতা, ওআরএস-ও দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। অবশ্য অনর্থক ওআরএস খাওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, টানা এক ঘণ্টা বা তার বেশি রোদে থাকলে কিংবা কোনও কারণে শরীর থেকে হঠাৎ প্রচুর জল বেরিয়ে গেলে তবেই ওআরএস খাওয়া যেতে পারে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সব্যসাচী রায়ের পরামর্শ, বাচ্চাদেরও বেশি করে জল খাওয়ানো দরকার। তবে যখন-তখন ওআরএস না খাওয়ানোই ভাল। গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট গোপালকৃষ্ণ ঢালির সতর্কবার্তা, পানীয় জল পরিস্রুত না হলে জন্ডিসের আশঙ্কা রয়েছে। তবে রোদে না বেরোলেই যে স্বস্তি, তা নয়। ঘরে বসেও গরমের হাত থেকে রক্ষা মিলছে না। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাপ ছড়াচ্ছে পাখার হাওয়া। তখনও কিন্তু শরীর ঠান্ডা রাখা জরুরি। ডায়েটেশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরীর পরামর্শ, শশা, লাউ, পেঁপে, চালকুমড়ো, ঝিঙে খাওয়া দরকার। এগুলো শরীরে জলাভাব হতে দেয় না। ডাবের জল, নুন-চিনির জল খেলে শরীরে সোডিয়াম-পটাসিয়ামের ভারসাম্যও বজায় থাকে বলে জানাচ্ছেন তিনি। আবার পান্তাভাত, টক দই, কাঁচা আম, আম-পোড়ার সরবতের মতো সাবেক ঘরোয়া টোটকার উপকারিতার কথাও অনেকেই মানছেন।

গরমে অনেকের নাকের ভিতরটা শুকিয়ে যায়। সেখানে কিছু উপশিরা ফেটে অনেক সময়ে রক্ত বেরোয়। ডাক্তার অরুণাংশু তালুকদারের পরামর্শ, ভয় না পেয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে ছায়ায় নিয়ে গিয়ে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে রক্তটা বেরিয়ে যায়। এ সব এড়াতে গরমে মুখ ধোওয়ার সময়ে নাকেও বারবার জল ছেটাতে হবে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষ জানান, জীবাণুর সংক্রমণ এড়াতে ইমিটেশন গয়না, চামড়ার ব্যান্ডের ঘড়ি ব্যবহার না করলেই ভাল। তাঁর বক্তব্য, শরীর ঠান্ডা রাখতে স্নান করুন, তবে তা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়। তা হলে ত্বকের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

summer doctor kolkata office saberi pramanik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE