E-Paper

টিভিতে অভিষেকের বক্তৃতা দেখার পরই কি চিঠি লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন কুন্তল?

কুন্তল লিখিত ভাবে জানিয়েছিল, অভিষেকের নাম বলানোর জন্য তাঁর উপরেও চাপ দেওয়া হচ্ছে। পরে সিবিআই সেই ঘটনার তদন্তে নামলে, কুন্তল দাবি করেন, তিনি কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ওই অভিযোগ করেননি।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩ ০৬:৫১
Abhishek Banerjee and Kuntal Ghosh

(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং (ডান দিকে) কুন্তল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

জেল থেকে লেখা চিঠিতে নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের অভিযোগ ছিল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলতে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পরে এই চিঠি-কাণ্ডের জল গড়ানোর পরে জেরার মুখে প্রাক্তন তৃণমূল যুব নেতার দাবি, কারও কথায় প্রভাবিত হয়ে ওই চিঠি লেখেননি তিনি। কিন্তু সিবিআই সূত্রের দাবি, জেলে বসে টিভিতে অভিষেকের শহিদ মিনারের বক্তৃতা দেখার পরেই সম্ভবত ওই চিঠির পরিকল্পনা ভেঁজেছিলেন কুন্তল।

সিবিআই সূত্রের খবর, এ নিয়ে জেরার মুখে ধৃত কুন্তল দাবি করেছেন, অভিষেকের সভার বিষয়ে কিছুই জানতেন না তিনি। কিন্তু এই দাবি নিয়ে সন্দেহ থাকার কারণেই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়েছিল তদন্তকারী সংস্থাটি। ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিলের মধ্যে সংশোধনাগারে কুন্তলের গতিবিধির ফুটেজ আদালত থেকে সংগ্রহও করেছে তারা। উল্লেখ্য, ২৯ মার্চই শহিদ মিনারের সভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন অভিষেক। শুধু তা-ই নয়, চিঠিতে যে শারীরিক নির্যাতনের কথা কুন্তল লিখেছিলেন, তার সঙ্গে তাঁর জেল-হাসপাতালে হওয়া চিকিৎসার সাযুজ্য আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

চিঠি-কাণ্ডের তদন্তে নেমে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসাবাদ, সংশোধনাগারে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার বন্দি রয়েছেন। প্রায় ৫০টি ওয়ার্ড ও ৭০টি সেলে তাঁরা থাকেন। ওয়ার্ডে প্রতি ৩৫ জন বন্দি-পিছু গড়ে একটি করে টিভি রয়েছে। সেলে আলাদা টিভি। ফলে, জেলে বন্দিদের টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘কুন্তল প্রাক্তন যুব নেতা। তার উপরে নিয়োগ দুর্নীতিতে জেলে। এই পরিস্থিতিতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বক্তৃতায় কী বলছেন, তা নিয়ে তাঁর আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। ’’ তাঁর ইঙ্গিত, সে দিন জেলের ভিতরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সিবিআই নিশ্চিত হতে চাইছে যে, অভিষেকের সভা চলাকালীন কুন্তল সংশোধনাগারে ঠিক কোথায় ছিলেন।

২৯ মার্চ শহিদ মিনারে সভায় অভিষেক অভিযোগ করেছিলেন, সারদা মামলায় এক সময়ে জেল হেফাজতে থাকা মদন মিত্র ও কুণাল ঘোষকে চাপ দিয়েছিল ইডি ও সিবিআই। এর পরেই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কুন্তল আলিপুর আদালতের বিচারক ও হেস্টিংস থানাকে লিখিত ভাবে জানান, অভিষেকের নাম বলানোর জন্য তাঁর উপরেও চাপ দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই সেই ঘটনার তদন্তে নামলে, কুন্তল দাবি করেন, তিনি কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ওই অভিযোগ করেননি। এমনকি দু’দিন আগে অভিষেক যে প্রকাশ্য জনসভায় এমন বলেছেন, তা-ও তাঁর জানা ছিল না বলে কুন্তলের দাবি। যা নিয়ে সন্দিহান তদন্তকারী আধিকারিকেরা।

ইডি-র বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগও এনেছেন কুন্তল। তদন্তকারীদের দাবি, ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে কুন্তলের শারীরিক পরীক্ষা হত। সেই রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেল হাসপাতালে কুন্তলের কী ধরনের শারীরিক চিকিৎসা হয়েছে, খোঁজ চলছে তা নিয়েও। জেলের চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাঁদের বয়ান নথিবদ্ধ করার প্রক্রিয়াও চলছে।

এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘অভিষেকের নাম না বলতে চাওয়ায় ইডি-র তদন্তকারীরা তাঁর গোপনাঙ্গে আঘাত করেছিলেন বলেও চিঠিতে কুন্তল জানিয়েছেন। জেল হাসপাতালে কুন্তলের এমন কোনও আঘাতের চিকিৎসা হয়েছিল কি না, তা-ও এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এই চিঠি-কাণ্ড সামনে আসার পরে ২০ মে অভিষেককে প্রায় ন’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। পরে ২৪ মে প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে আড়াই ঘণ্টা জেরা করা হয় কুন্তলকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Abhishek Banerjee Kuntal Ghosh Recruitment Scam CBI

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy