E-Paper

মতুয়াদের ফের বার্তা মমতার

বনগাঁর ঠিক পাশেই মতুয়া সম্প্রদায়ের ধর্মকেন্দ্র ঠাকুরবাড়ি ও তা ঘিরে পাঁচ-সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের কথা মাথায় রেখে মমতা নিশানা করেছেন বিজেপিকে।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:১১
বনগাঁর জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার।

বনগাঁর জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক। 

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রেক্ষাপটে নাগরিকত্বের প্রশ্নেই মতুয়া সমর্থন ফেরাতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সীমান্তবর্তী বনগাঁ-গাইঘাটায় জোড়া কর্মসূচিতে মঙ্গলবার মতুয়া সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বার্তা দিতে চাইলেন, তিনি তাঁদের পাশে আছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) অনুযায়ী আবেদন করবেন না। সেখানে বলতে হবে, আমি বাংলাদেশের নাগরিক। ভারতের নাগরিক হতে চাই। এটা বললেই তো ( নাগরিকত্ব) বাতিল করে দেবে!’’

বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বনগাঁয় এ দিনের প্রথম কর্মসূচি ছিল তৃণমূল নেত্রীর। এসআইআর ঘোষণার পরে মতুয়া সম্প্রদায়ের একাংশে যে সব প্রশ্ন উঠেছে, বনগাঁর সভায় তার সঙ্গে সিএএ-র প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘২০২১ ও ২০২৪ সালের ভোটের আগেও ক্যা ক্যা বলেছে। নাগরিকত্ব নিয়ে প্রতারণা করছে। কমিশনের নির্দেশিকায় কোথাও লেখা আছে (সিএএ-তে আবেদন করলে ভোটার তালিকায় নাম থাকবে)? ’’ ভোটার তালিকার এই সংশোধন প্রক্রিয়াকে নাগরিকত্বের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে সীমান্তবাসী মানুষ এবং মতুয়াদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ভয় পাবেন না। এক জনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া যাবে না।’’

মতুয়া-অধ্যুষিত এলাকায় এই সভা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাঁইথিয়ায় বিজেপির ‘পরিবর্তন সঙ্কল্প যাত্রা’য় গিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বনগাঁয় গিয়ে লাভ নেই! মতুয়াদের দীর্ঘ লড়াই সম্পূর্ণ হয়েছে ২০১৯ সালে। যখন প্রধানমন্ত্রী সিএএ ঘোষণা করলেন ঠাকুরনগরে শান্তনু ঠাকুরের সমর্থনে এসে। মুখ্যমন্ত্রী এর বিরোধিতা করেছিলেন। এখন ৫০০ জনকে নাগরিকত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। আপনার তো ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল! আপনি মতুয়াদের ভোট পাবেন না।’’

বনগাঁর ঠিক পাশেই মতুয়া সম্প্রদায়ের ধর্মকেন্দ্র ঠাকুরবাড়ি ও তা ঘিরে পাঁচ-সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের কথা মাথায় রেখে মমতা নিশানা করেছেন বিজেপিকে। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে বিজেপির দখলে থাকা এই অঞ্চলে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘আমি ভোটের রাজনীতি করি না। মানুষের রাজনীতি করি।’’ তবে এসআইআর নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘খসড়া তালিকা প্রকাশের পরই ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে। তবে আমি কাউকে তাড়াতে দেব না।’’ সেই মঞ্চ থেকেই মমতার ঘোষণা, রাজ্য সরকার প্রকৃত ভোটারের অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় সাহায্য করবে। প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহে সরকারি শিবির থেকে সহযোগিতার কথাও বলেছেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা পাশে থাকব।’’

সেই সূত্রেই বিজেপিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমরা তো বলিনি, এসআইআর করতে দেব না। বলেছি, প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দিতে দেব না।’’ এই প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অনুপ্রবেশকারী ধরতে বাংলায় এসআইআর করছেন। তা হলে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, কেরলে কেন? অনুপ্রবেশকারী কি সেখানেও আছে?’’ বিজেপির উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমাকে আঘাত করলে প্রত্যাঘাত হবে। আমাকে আঘাত করলে আমি গোটা দেশ হিলিয়ে (নাড়িয়ে) দেব।’’ পরের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় থাকবে না বলে দাবি করে মমতা বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে খেলতে আসবেন না! ভোটের (রাজ্য বিধানসভা) পরে আমিও সারা দেশ চষে বেড়াব।’’

সভা শেষে মমতা গাইঘাটার চাঁদপাড়া থেকে ঠাকুরনগর পর্যন্ত পদযাত্রা করেন। রাস্তার দু'পাশে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস ও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু।

তৃণমূলের দলীয় বৈঠকে সোমবার এসআইআর প্রক্রিয়ায় কলকাতা শহরে দলের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই এ দিন উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায় দলের দুই জেলা কমিটি বৈঠক করে দ্রুত কাজ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কাজে দলের পুর-প্রতিনিধিদের সক্রিয় ও আন্তরিক হতে বলেছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদ হাকিম।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CAA Matua Suvendu Adhikari SIR

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy