Advertisement
E-Paper

অক্সিজেন নেই, ৩ ঘণ্টা অ্যাম্বুল্যান্সেই ফেলে রাখা হল রোগীকে!

প্রথমে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল। সেখান থেকে কলকাতার মল্লিকবাজারের এক বেসরকারি হাসপাতাল। তার পরে এসএসকেএম। সেখানেও শয্যা না মেলায় শেষে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১২
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে মোকসাদ আলির (ইনসেটে) পরিজনেরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে মোকসাদ আলির (ইনসেটে) পরিজনেরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

প্রথমে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল। সেখান থেকে কলকাতার মল্লিকবাজারের এক বেসরকারি হাসপাতাল। তার পরে এসএসকেএম। সেখানেও শয্যা না মেলায় শেষে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল!

সেখানে পৌঁছেও অবশ্য সুরাহা হল না পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম এক রোগীর। সিসিইউ-তে (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট) শয্যা পাওয়ার পরেও স্রেফ ‘পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার’ না থাকায় রবিবার ওই রোগীকে প্রায় তিন ঘণ্টা অ্যাম্বুল্যান্সেই ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ। রোগীর পরিজনেদের দাবি, সিসিইউ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের কাছে ‘পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার’ নেই। এ দিকে অ্যাম্বুল্যান্সের অক্সিজেন মাস্ক খুললেই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

এই অবস্থায় সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করতে সিসিইউ এবং হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মধ্যে ছুটে বেড়াতে হয় রোগীর আত্মীয়দের। শেষে জরুরি বিভাগের দেওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাহায্যে প্রায় তিন ঘণ্টা পরে রোগীকে ভর্তি করানো হয় সিসিইউ-তে। রোগীর আত্মীয় হানিফ আলি বলেন, ‘‘কলকাতায় এই অবস্থা হলে জেলার অবস্থা ভাবুন! আমরা গরিব মানুষ, যাব কোথায়?’’

আরও পড়ুন: ক্যানসার ‘ভ্রমে’ চিকিৎসা, মৃত্যু

হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করার কথা নয়। অ্যাম্বুল্যান্সের সিলিন্ডার দিয়েই রোগীকে সিসিইউ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কথা।’’ কিন্তু প্রশ্ন, অ্যাম্বুল্যান্সে যদি ‘পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডারে’র ব্যবস্থা না থাকে তবে কি হাসপাতাল ব্যবস্থা করবে না? ইন্দ্রনীলবাবুর জবাব, ‘‘এই সব ক্ষেত্রের জন্য সিসিইউ-তে সিলিন্ডার রাখা থাকে। তা যদি শেষ হয়ে যায়, জরুরি বিভাগ থেকে রিকুইজিশন দিয়ে আনাতে হয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

শনিবার সকালে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে একটি লরি উল্টে যায়। সেটিতে অন্তত ২১ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর জখম ১৯ জনকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে বছর পঁয়ত্রিশের মোকসাদ আলি এবং চল্লিশ বছরের মহম্মদ হাকিমুদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের কলকাতায় নিয়ে যেতে বলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। সেই মতো রবিবার সকালে দুই আহতকে মল্লিকবাজারের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসার যে খরচের কথা জানানো হয়, তা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তাঁদের পরিজনেরা। এর পরে মোকসাদ ও হাকিমুদ্দিনকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেও শয্যা মেলেনি। তার পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান হাকিমুদ্দিন। কোনওমতে মোকসাদকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই দীর্ঘ তিন ঘণ্টা তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে ফেলে রাখা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।

মোকসাদের আত্মীয় মঞ্জুর হোসেনের অভিযোগ, এক বন্ধুর সূত্রে ফোন করে সিসিইউ-তে শয্যা মেলে। তবে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, অ্যাম্বুল্যান্সের অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগিয়ে রোগীকে গ্রিন বিল্ডিংয়ের দোতলায় সিসিইউ-তে তুলতে হবে। অ্যাম্বুল্যান্সে পোর্টেবল সিলিন্ডার নেই জানানোয় সিসিইউ থেকে বলে দেওয়া হয়, তাদের কাছেও পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। জরুরি বিভাগ থেকে নিয়ে আসুন। এর পরে সিসিইউ এবং জরুরি বিভাগের মধ্যে বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত ছোটাছুটি করতে থাকেন রোগীর পরিজনেরা। মঞ্জুরের কথায়, ‘‘শেষে আমাদের উপরে দয়া করে সিলিন্ডার দিয়েছে। হাকিমুদ্দিন রাস্তাতেই মারা গেলেন। মাস তিনেক আগে ওঁর মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মোকসাদেরও বাড়িতে এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে ছোট। কিছু হয়ে গেলে কী উত্তর দিতাম?’’

এত কিছুর পরেও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র অবশ্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা না জানিয়ে রোগীর পরিবারের লোকের সচেতনতার উপরেই জোর দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ ধরনের সমস্যা হলে রোগীর বাড়ির লোকেরা কেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন না?’’ কিন্তু সপ্তাহের অন্য দিনেও যেখানে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তাদের ঘর পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন না সাধারণ মানুষ, রবিবার সেখানে মুশকিল আসান হয়ে তাঁদের জন্য কেউ অপেক্ষা করবেনই, সেই নিশ্চয়তা কে দেবেন? এই প্রশ্নের অবশ্য উত্তর পাওয়া যায়নি।

Portable Oxygen Cylinder Injury Ambulance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy