আবির ধাড়া।
আশঙ্কাই সত্যি হল। মা-বাবার উদাসীনতার মাশুল দিল সাত বছরের ছোট্ট ছেলেটা। দিঘার মেরিনা বিচে সোমবার দেহ মিলল আবির ধাড়ার।
হুগলি জেলার জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা আবিরের শনিবার দুপুর থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তার বাবা-মা রঞ্জিত ও পূর্ণিমা ধাড়া যখন সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত ছিলেন, তখনই পাড়ে রেখে যাওয়া আবির উধাও হয়ে যায়। দু’দিন ধরে খোঁজ মেলেনি। এ দিন ভোরে মেরিনা সি বিচের ধারে পাথরের উপর একরত্তির দেহ দেখতে পান নুলিয়ারা। ডুবেই মৃত্যু হয়েছে তার। গোটা ঘটনায় বাবা-মায়ের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে।
মাসখানেক আগে এই দিঘাতেই কোলের শিশুকে সৈকতে গাড়িতে রেখে সমুদ্রস্নানে গিয়েছিলেন এক দম্পতি। গাড়ির জানলার কাচ তুলে দেওয়া হয়েছিল। ফলে দমবন্ধ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল শিশুটি। শেষে জানলার কাচ ভেঙে তাকে উদ্ধার করেছিল স্থানীয়রা। এ বার অবশ্য আর প্রাণ বাঁচল না আর এক একরত্তির।
হুগলির জাঙ্গিপাড়া থেকে ৫৫ জন পর্যটকদের একটি দল বাস ভাড়া করে শুক্রবার দিঘায় এসেছিল। সেই দলেই ছিল ধাড়া পরিবার। তাঁরা উঠেছিলেন ওল্ড দিঘার শিবালয় মন্দির রোডের একট হোটেলে। শনিবার দুপুরে তারা দিঘার জগন্নাথঘাটের কাছে স্নান করতে নেমেছিলেন রঞ্জিত ও পূর্ণিমা। সৈকতে রেখে গিয়েছিলেন আবির ও ন’বছরের মেয়ে অনুষ্কাকে। যাওয়ার আগে মশলা মুড়ি কিনে ছেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। আধঘন্টা খানেক বাদে ফিরে এসে অবশ্য আবিরকে আর খুঁজে পাননি ওই দম্পতি। আবিরের দিদিও বলতে পারেনি, ভাই ঠিক কোথায় গিয়েছে। হোটেল থেকে সৈকত থেকে ঝাউ জঙ্গল— তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আবিরের সন্ধান মেলেনি। শনিবার রাতেই দিঘা থানায় ছেলের নিখোঁজ ডায়েরি করেন রঞ্জিত। এ দিন দেহ উদ্ধারের পরে ছেলেকে শনাক্ত করেন তিনি।
গোটা ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে। দিঘায় বেড়াতে আসা অতনু মিত্র বলছিলেন, ‘‘বাবা-মায়ের ক্ষণিকের আনন্দ শিশুটির জীবনই কেড়ে নিল। এমন ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়।’’ বিপাশা বিশ্বাস মল্লিক নামে আর এক পর্যটকদের কথায়, ‘‘বাবা-মাকে অনেক যত্নবান হতে হবে। না হলে এমন ঘটনা এড়ানো যাবে না।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার নিতাইচন্দ্র মণ্ডলেরও বক্তব্য, ‘‘শুধু ভরণপোষণ নয়, সন্তানের প্রতি উপযুক্ত যত্নবান হতে হবে বাবা-মাকে। মনে রাখতে সন্তান খেলার পুতুল নয়।’’ ছেলেকে হারিয়ে হাহাকারের মাঝে ভুল কবুল করছেন রঞ্জিত আর পূর্ণিমাও। রঞ্জিত বলছেন, ‘‘ছেলেটা কখন সমুদ্রে কখন নেমে গিয়েছিল আমরা বুঝতেই পারিনি। আমরা নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিচ্ছি।’’
কিন্তু ভুল স্বীকারে ছেলে তো আর ফিরবে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy