Advertisement
০৫ মে ২০২৪
State News

দুলালকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তাড়া করেছিল বাইক, বলছেন গ্রামবাসীরা

ডাভার তৃণমূল নেতা বিমল কুমারের দুলালকে দেওয়া এই হুমকির ঘটনার সাক্ষী গ্রামেরই অনেকে। ঠিক তার পরের দিন, ৩১ মে বাঘমুণ্ডি থেকে ফেরার সময় সন্ধের অন্ধকারে দুলালকে ধাওয়া করেছিল মোটর বাইকে চেপে আসা দু’জন অচেনা মানুষ।

ডাভা গ্রামে বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের ঝুলন্ত দেহ এ ভাবেই উদ্ধার হয়। —নিজস্ব চিত্র।

ডাভা গ্রামে বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের ঝুলন্ত দেহ এ ভাবেই উদ্ধার হয়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ২০:৩৩
Share: Save:

মিল আছে অনেকটাই। সুপুরডির ত্রিলোচনের সঙ্গে ডাভার দুলাল কুমারের। ত্রিলোচনের মৃত্যুর আগেও তাঁকে বিজেপি করার কারণে ভরা বাজারে হুমকি শুনতে হয়েছিল এলাকার শাসক দলের নেতা সৃষ্টিধর মাহাতর কাছে। ঝুলন্ত দেহ উদ্ধাপ হওয়ার দু’দিন আগে ৩০ মে বলরামপুর বাজারে একই ভাষায় নাকি হুমকি দেওয়া হয় দুলালকেও।

ডাভার তৃণমূল নেতা বিমল কুমারের দুলালকে দেওয়া এই হুমকির ঘটনার সাক্ষী গ্রামেরই অনেকে। ঠিক তার পরের দিন, ৩১ মে বাঘমুণ্ডি থেকে ফেরার সময় সন্ধের অন্ধকারে দুলালকে ধাওয়া করেছিল মোটর বাইকে চেপে আসা দু’জন অচেনা মানুষ। সেই রাতেই ফিরে আসার পর গ্রামের অনেককেই এই ঘটনা বলেছিলেন দুলাল, দাবি গ্রামবাসীদের।

আর ঠিক তার পরের রাতেই বাইক ফেলে বেপাত্তা হয়ে গেলেন দুলাল। হাই-টেনসন তারের থাম থেকে ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গেল পরের সকালে।

ঠিক কী হয়েছিল শুক্রবার রাতে?

দুলালের স্ত্রীর নাম মনিকা। তিনি বলেন, শুক্রবার বিজেপির স্থানীয় স্তরে থানা ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। দুপুরে সেখানে গিয়েছিলেন দুলাল। গ্রামের মুখেই দুলালের বাবা মহাবীরের ছোট্ট গুমটি দোকান। পাশে একটা ধানকল। রাতে ওই দোকাণেই ঘুমোন মহাবীর। মনিকা বলেন, “সন্ধেয় বাড়ি ফিরে বাবার খাবার নিয়ে গিয়েছিল। তার পর রাত হয়ে যাচ্ছে। তখনও ফিরছে না দেখে গ্রামের লোকজনই খোঁজা শুরু করেন।”

মহাবীরের স্পষ্ট মনে আছে, রাত পৌনে আটটার আগেই তাঁর খাবার দিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য বেরোন দুলাল। দোকান থেকে দুলালের বাড়ি যেতে গেলে একটা পুকুর পাড়ের সরু রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। রাতে ওই পথে যাতায়াত করার সময় কয়েকজন প্রতিবেশীর নজরে পড়ে একটা বাইক দাঁড় করানো রয়েছে পুকুর পাড়ে। দীর্ঘ ক্ষণ ওই বাইক পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় গ্রামের মানুষের। বাইকটিকে দুলালের বলে চিনতেও পারেন তাঁরা। তাঁরা দুলালের নাম ধরে বেশ কয়েক বার ডাকাডাকিও করেন। কোনও সাড়া না পেতে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। খবর দেওয়া হয় থানাতে। রাতেই পুলি‌শ আসে। রাতভর গ্রামের আনাচে কানাচে তল্লাশি চালানো হয়। তার পর ভোর পাঁচটা নাগাদ ভোরের আলো ফোটার পর সবার নজরে পড়ে দুলালের ঝুলন্ত দেহ।

পরনে হাফ শার্ট, জিন্সের প্যান্ট, কোমরে বাঁধা গেরুয়া গামছা। ঝুলন্ত পায়ের ঠিক তলায় দু’পাটি চটি। পুকুর ধারে ফেলে রাখা বাইক থেকে মেরেকেটে ৩০০ মিটার দূরে খোলা মাঠে। মহাবীরের দাবি, রাতে ওই মাঠের দিকেও খোঁজ চালানো হয়েছে। তখন তা হলে কেন দেখা গেল না!

আত্মহত্যার তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়ে দুলালের স্ত্রীর সওয়াল, “তাঁর যদি আত্মহত্যা করাই উদ্দেশ্য হত, তা হলে এত দূরে গিয়ে কেন করবে। আর বাবাকে খাবারই বা কেন পৌঁছতে যাবেন।” মনিকার মতোই দুলালের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে মানতে নারাজ অধিকাংশ গ্রামবাসী। আর তাই পুলিশ যখন প্রাথমিক ভাবে এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে মত প্রকাশ করে, তখনই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামের মানুষ। তাঁরা দাবি করেন স্নিফার ডগ এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ না আনলে দেহ নামাতে দেওয়া হবে না। যদিও জেলা পুলিশের কুকুর আনার পরও রহস্যের কোনও সুরাহা হয়নি।

তবে দুলালের মৃত্যুর আগের দু’দিনের ঘটনার জেরে স্থানীয় মানুষ থেকে দুলালের পরিবার মানতে রাজি নন যে দুলাল আত্মহত্যা করেছেন। বরং দুলালকে খুন করা হয়েছে, এই তত্ত্বই জোরাল হচ্ছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।

আদতে বাম সমর্থক ছিল দুলালের পরিবার এবং দুলাল নিজেও। মাত্র সাত মাস আগে বিজেপিতে যোগ দেন দুলাল। ২০১৩ সালেও এই গেরুয়া অঞ্চল ছিল তৃণমূলের দখলে। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই গ্রাম পঞ্চায়েত হারিয়েছে শাসক দল। দুলালদের গ্রামের আসনটাও ২৭৩ ভোটে বিজেপির কাছে হাতছাড়া। আর তার পিছনে দুলালের বড় ভূমিকা ছিল বলে দাবি পুরুলিয়া জেলা বিজেপির সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর। তিনি এই মৃত্যুর পিছনে তৃণমূলের হাত আছে বলেই মনে করেন। কিন্ত এটাও ঠিক, শুধু বিজেপি করার জন্য মৃত্যু, এটাও যথেষ্ট জোরাল মোটিভ বলে মনে করছেন না তদন্তকারীরা। কিন্তু ত্রিলোচন আর দুলালের মৃত্যুর আগে ঘটনাক্রমের এই মিল, দুটি মৃত্যুকে একটি বড় ষড়যন্ত্রর অংশ, এই মতই আরও শক্তিশালী হচ্ছে গোটা পুরুলিয়া জুড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dulal Kumar Purulia Balarampur BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE