E-Paper

এই ভিড়ই পুরস্কার, মত পুজোগুলির

উত্তর কলকাতায় এ বার নজর কেড়েছে টালা বারোয়ারির মণ্ডপ। শ্যামবাজার থেকে সোজা ভিড় ঢুকছিল ওই তল্লাটে। পাশাপাশি টালা প্রত্যয়ের পুজোতেও ভিড় জমেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৫১
দক্ষিণ কলকাতার ৬৬ পল্লিতে মানুষের ঢল।

দক্ষিণ কলকাতার ৬৬ পল্লিতে মানুষের ঢল। নিজস্ব চিত্র।

ঘড়ির কাঁটা সবে বারো ছুঁইছুঁই। শিয়ালদহমুখী বনগাঁ লোকাল দমদম স্টেশনে দাঁড়াতেই প্ল্যাটফর্মে যেন জনস্রোত বয়ে গেল। থিকথিকে ভিড় জমতে শুরু করল মেট্রো স্টেশনের সামনে। সোমবার থেকে মেট্রো বেলা ১টা থেকে পরিষেবা শুরু করেছে। কিন্তু তার এক ঘণ্টা আগে থেকেই ভিড় জমেছে স্টেশনের বাইরে।

ভরদুপুরের এই দৃশ্যই পুজো ঘিরে উন্মাদনার প্রতীক। বুদ্ধিতে-যুক্তিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না।

সোমবার বেলা যত গড়িয়েছে, ততই ভিড় বেড়েছে মহানগরের রাজপথে। মণ্ডপে-মণ্ডপে পাক খেয়েছে সেই ভিড়। সন্ধ্যা গড়িয়ে মধ্যরাতেও ভিড়ের খামতি নেই। রাস্তার পাশাপাশি মেট্রোতেও উপচে পড়া ভিড়। উত্তর থেকে দক্ষিণ, যানশাসন করতে কালঘাম ছুটেছে পুলিশের। প্রতিযোগিতা-পুরস্কারের পালা শেষে ভিড় সামলাতে রীতিমতো নাকাল হয়েছেন বড়-মেজ-সেজ মাপের পুজোর কর্তারাও। এ বার মধ্য কলকাতার কয়েকটি পুজো অভিনব মণ্ডপ সাজিয়েও বড় মাপের পুরস্কার পায়নি। সপ্তমীর সন্ধ্যায় পুজো দেখতে জনতার ঢল সেই সব পুজো কমিটির জ্বালা জুড়িয়েছে। এক পুজো-কর্তা তো বলেই ফেললেন, ‘‘বুঝলেন, জনতা-জনার্দনই আসল পুরস্কার।’’ ভিড় বাড়তেই রাজপথে হোঁচট খেয়েছে গাড়ির চাকা। সময় যত গড়িয়েছে, ততই তীব্র হয়েছে যানজটের সমস্যা। যদিও লালবাজারের দাবি, পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যায়নি।

উত্তর কলকাতায় এ বার নজর কেড়েছে টালা বারোয়ারির মণ্ডপ। শ্যামবাজার থেকে সোজা ভিড় ঢুকছিল ওই তল্লাটে। পাশাপাশি টালা প্রত্যয়ের পুজোতেও ভিড় জমেছে। উত্তরের হাতিবাগান, কুমোরটুলি, আহিরীটোলার পুজোগুলি চিরকালের মতোই ভিড় টেনেছে। প্রতি বছরের মতো দলে-দলে মানুষ সপ্তমীর সন্ধ্যায় বাগবাজারে ঢুকেছে। বিকেলেই ওই তল্লাটে যানজটে গাড়ির চাকা থমকে গিয়েছিল। মানিকতলা থেকে গিরিশ পার্কমুখী রাস্তাতেও গাড়ি নড়ছিল না। দক্ষিণ কলকাতায় একডালিয়া, সিংহি পার্ক, মুদিয়ালি, ত্রিধারা, বালিগঞ্জ কালচারালের পাশাপাশি এ বার বিশেষ আকর্ষণ কেন্দুয়া শান্তি সঙ্ঘ। সপ্তমীর সন্ধ্যায় থেকেই রাসবিহারী-গড়িয়াহাট চত্বরে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছিল। বেহালার দিকে পরিচিত পুজোগুলিই ক্রমাগত ভিড় টেনে যাচ্ছে। শহরতলির পুজোগুলিও এ বার ভিড়ের গন্তব্যে ঠাঁই পেয়েছে।

সপ্তমীর সন্ধ্যায় উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছে জেলাগুলিতেও। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলায় দুপুর থেকেই মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেন মণ্ডপগুলিতে। দুই দিনাজপুর ও মালদহের ছোট থেকে বড় বিভিন্ন পুজো মণ্ডপেও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পুলিশের চিন্তা বাড়িয়েছে জলপাইগুড়ির পাতকাটা। এ দিন বিকেলের পরেই ছোট গাড়ির লাইনে পাতকাটায় যানজট শুরু হয়। ওই পথে জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনগামী গাড়িগুলিকে তাই ঘুরপথে চালাচ্ছে পুলিশ। তাতে ক্ষোভ বাড়ছে। সপ্তমীর সন্ধ্যার পরে শিলিগুড়ির রাস্তাতেও জনস্রোত। হিলকার্ট রোডে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। পুজো মণ্ডপের সামনেও ছিল লম্বা লাইন।

ভিড়ের কারণে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ শহরে যান নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করে পুলিশ। বিকেল ৫টা থেকে যে কোনও গাড়ি নিয়েই শহরে ঢোকা নিষেধ হয়। মণ্ডপগুলিতে ভিড় সামলাতে হিমশিম খান উদ্যোক্তারা। বসিরহাট শহরের পুজোগুলিতেও ভিড় উপচে পড়ে। হুগলির চুঁচুড়া শহরে বিকেল থেকেই অটো-টোটো বা ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আরামবাগ শহরের পুজোগুলিতে তো বটেই, ভিড় জমে খানাকুলের বন্দর, রাজহাটি, গোঘাটের ভিকদাস, শ্রীপুর, পুরশুড়ার পঞ্চাননতলার মতো গ্রামের পুজো দেখতেও। গ্রামীণ হাওড়াতেও নামী মণ্ডপগুলিতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, সাগর, বকখালি, রামগঙ্গা প্রভৃতি এলাকাতেও ঠাকুর দেখার জন্য লম্বা লাইন দেখা যায়। বর্ধমান শহরে এ দিন দুপুর থেকেই ভিড়। রাতে সে ভিড় আরও বেড়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুরে ভিড় এড়াতে অনেকে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলেন। সন্ধ্যা নামার পরে পথে পথে ছিল জনস্রোত। একই ছবি মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে। অনেকে রাস্তাতেই যানজট। খড়্গপুর শহরে গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় বিকেলের পরে দূরদূরান্ত থেকে ট্রেন বা বাসে করে আসা অনেকে গন্তব্যে যেতে নাকাল হন। পুজোর মধ্যেই এ দিন ঘাটালের বীরসিংহে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালন করা হয় সরকারি উদ্যোগে। সপ্তমীর বিকেল থেকেই লম্বা লাইন পড়ে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপেও। বীরভূমেও সন্ধ্যার পরে মানুষের ঢল নামতে শুরু করেছে জেলার সর্বজনীন পুজোমণ্ডপগুলিতে। নদিয়ার কল্যাণীর আইটিআই মোড়ের কাছে লুমিনাস ক্লাবের পুজো মণ্ডপ ও প্রতিমা দেখার জন্য দীর্ঘ লাইন ছিল দর্শনার্থীদের।

ভিড় বাড়তে সাহায্য করেছে আবহাওয়াও। এ বার পুজোয় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির আশঙ্কা করেছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। কিন্তু সপ্তমীতে বৃষ্টি ভোগায়নি। বরং সকাল থেকেই চড়া রোদ এবং অস্বস্তিকর ভ্যাপসা গরম মিলেছে। তবে পুজো-উন্মাদনায় আক্রান্ত জনতা সে সব পরোয়া করেনি। আজ, অষ্টমীতেও তেমন দুর্যোগের আশা নেই। ভিড়ের উন্মাদনা তাই আরও কী ভেলকি দেখায়, সেটাই দেখার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja south kolkata South Kolkata Pandals

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy