দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়াকে মিথ্যা কথা বলেছিলেন তাঁর সহপাঠী। ভুল বুঝিয়ে মেয়েকে দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজের রাস্তার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পুলিশের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে এমনই দাবি করেছেন ‘ধর্ষিতা’ তরুণীর বাবা।
প্রকাশ্যে আসা সেই অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, ‘‘রাত ৪টা নাগাদ মেয়ের এক সহপাঠী এবং সেই সহপাঠীর কয়েক জন বন্ধু মিলে মেয়েকে বিভ্রান্ত করেছিল। তার পর মিথ্যা কথা বলে তাঁকে দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজের কাছে ফাঁকা রাস্তায় নিয়ে যায়।’’
অভিযোগপত্রে প্রথম অভিযুক্ত হিসাবে ‘নির্যাতিতা’র সহপাঠীর নামই রয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, তিনি এখনও ‘আটক’। অভিযোগপত্রে ‘নির্যাতিতা’র বাবা জানিয়েছেন, ওই সহপাঠী এবং তাঁর বন্ধুরা মিলে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। মেয়ের মোবাইল এবং পাঁচ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ‘নির্যাতিতা’র বাবার।
শুক্রবার রাতে এক সহপাঠীর সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়ে নির্যাতনের শিকার হন দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ওই ডাক্তারি ছাত্রী। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার তাঁদের আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। বিচারক ধৃতদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘নির্যাতিতা’ ডাক্তারি ছাত্রীকে বাংলা থেকে ওড়িশায় নিয়ে যেতে চাইছেন তাঁর বাবা। এ ব্যাপারে তিনি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝীকে অনুরোধও করেছেন বলে জানালেন। ‘নির্যাতিতা’র বাবা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি, যাতে মেয়েকে এখান থেকে ওড়িশায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এই জায়গার উপর থেকে ভরসা উঠে গিয়েছে। ওকে (মেয়েকে) মেরেও ফেলতে পারে।’’
রবিবার নির্যাতিতা’র বাবা জানান, তাঁর সঙ্গেও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে। তিনি সব রকম ভাবে সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন। ‘নির্যাতিতা’র বাবা বলেন, ‘‘রাত ১০টায় ওর বন্ধু (মেয়ের বন্ধু) ফোন করে জানায়, আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওর একটা বন্ধু ওকে খেতে নিয়ে গিয়েছিল বাইরে। কিন্তু যখন দু’-তিন জন ওকে (মেয়েকে) ঘিরে ধরে, তখন ওর বন্ধুটি পালিয়ে যায় ওকে ছেড়ে। রাত ৮-৯টার মধ্যে ঘটনাটা ঘটেছে। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। কোনও ব্যবস্থাই নেই এখানে।’’
গোটা ঘটনা নিয়ে আগেই বিবৃতি দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, রাত ৭টা ৫৮ মিনিটে সহপাঠীর সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়েছিলেন তরুণী। এর পর ৮টা ৪২ মিনিটে সহপাঠী ক্যাম্পাসে একা ফিরে আসেন। কলেজের গেটের কাছে ৫-৬ মিনিট ঘোরাঘুরি করে তিনি আবার বাইরে বেরিয়ে যান। তার পর রাত ৯টা ২৯ মিনিটে ওই সহপাঠীর সঙ্গে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন তরুণী। তার পর ৯টা ৩১ মিনিটে তিনি নিজের হস্টেলের দিকে চলে যান।