Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
হাতছাড়া কেন্দ্রীয় অনুদান

রাজ্যে বৈদ্যুতিন বর্জ্য শোধন প্রকল্পে বাধা সেই জমিই

রাজ্যে ই-ওয়েস্ট বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য পরিশোধন প্রকল্প আটকে রয়েছে পরিকল্পনা স্তরেই। বাধা সেই জমি। সামান্য দুই থেকে তিন একরের অভাবে তৈরি হয়নি ই-বর্জ্য হাব। হাতছাড়া হয়েছে বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অনুদানও। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বৈদ্যুতিন বর্জ্য নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্ট।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

রাজ্যে ই-ওয়েস্ট বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য পরিশোধন প্রকল্প আটকে রয়েছে পরিকল্পনা স্তরেই। বাধা সেই জমি। সামান্য দুই থেকে তিন একরের অভাবে তৈরি হয়নি ই-বর্জ্য হাব। হাতছাড়া হয়েছে বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অনুদানও।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বৈদ্যুতিন বর্জ্য নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্ট। সেই তথ্য অনুযায়ী ই-বর্জ্যের পরিমাণের ভিত্তিতে বিশ্বে পাঁচ নম্বর স্থানে রয়েছে ভারত। এশিয়ায় চিন ও জাপানের পরেই আছে এ দেশ। ২০১৪ সালে মোট ১৭ লক্ষ মেট্রিক টন বৈদ্যুতিন বর্জ্য তৈরি হয়েছে দেশে। ই-বর্জ্য নিয়ে নতুন করে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সমস্যা সামলাতে রাজ্যগুলিকেও দ্রুত প্রকল্প তৈরি করার নির্দেশ দিচ্ছে কেন্দ্র।

পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের হাব তৈরির পরিকল্পনা বছর তিনেক আগে হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। কারণ কলকাতার লাগোয়া জেলায় জমি পাওয়া যায়নি। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং হাওড়ায় জমি চেয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের চিঠি লেখে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। কিন্তু তেমন সাড়া দেয়নি তিন জেলার প্রশাসনই। ফলে থমকে যায় ই-বর্জ্য প্রকল্প।

সংগঠিত ই-বর্জ্য প্রকল্প পূর্বাঞ্চলে এখনও নেই বললেই চলে। ২০১২ সালেই এ রাজ্যে বৈদ্যুতিন বর্জ্য হাব তৈরির ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়। তবে পরিকল্পনা দানা বাঁধে ২০১৩ সালে। শ্রেয়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচার্স-এর মতো বেসরকারি সংস্থার তরফ থেকে লগ্নির প্রস্তাবও আসে। প্রাথমিক ভাবে এই প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সূত্রে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি তৈরির জন্য মাঠে নামে ওয়েবেল। আগ্রহী সংস্থার কাছ থেকে ইচ্ছাপত্র চায় তারা। তথ্যপ্রযুক্তি দফতর সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে পাঁচটি সংস্থা ইচ্ছাপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে শ্রেয়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচার্স গোষ্ঠীর ‘স্বচ্ছ এনভায়রনমেন্ট’ ছাড়া বাকি সংস্থাগুলি ভিন্‌ রাজ্যের।

কিন্তু ইচ্ছাপত্র পাওয়ার পরে জমির অভাবে থমকে যায় প্রকল্পের গতি। ই-ওয়েস্ট বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য প্রকল্প তৈরির জন্য দুই থেকে তিন একর জমি প্রয়োজন। এ ধরনের প্রকল্প লাভজনক করে তুলতে প্রয়োজন নির্দিষ্ট পরিমাণ বর্জ্য। সাধারণত কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বৈদ্যুতিন বর্জ্যের পরিমাণ বেশি। সে কথা মাথায় রেখেই তথ্যপ্রযুক্তি দফতর কলকাতার লাগোয়া জেলাগুলিতে জমির খোঁজ শুরু করে। শ্লথ গতির কারণে লগ্নিকারীদের আগ্রহও কমে আসে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।

২০১২ সালের মে মাসে কেন্দ্র বৈদ্যুতিন বর্জ্য সংক্রান্ত আইন তৈরি করে। দূষণ এড়াতে এই বর্জ্য সঠিক ভাবে পরিশোধন করা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সংগঠিত ক্ষেত্রে বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। মাত্র ৫% সংগঠিত ক্ষেত্রের আওতায়। বাকি ৯৫% অসংগঠিত ক্ষেত্রে চলে যায়। সংগঠিত ই-বর্জ্য প্রকল্পের অভাবে বাড়ছে দূষণ। বাড়ছে এর সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও। গোটা দেশে আপাতত সাড়ে চার লক্ষ শিশু শ্রমিক এই বর্জ্য সংগ্রহে যুক্ত।

বৈদ্যুতিন বর্জ্যের পরিমাণ দেশ জুড়েই লাফিয়ে বাড়ছে। অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষা অনুযায়ী বছরে ভারতে সাড়ে বারো লক্ষ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব অবশ্য বলছে গত বছর ১৭ লক্ষ মেট্রিক টন বর্জ্য তৈরি হয়েছে দেশে। এই তালিকায় মুম্বই শীর্ষে। ৯৬,০০০ মেট্রিক টন মেলে মুম্বই শহরে। দিল্লি তার পরেই, ৬৭,০০০ মেট্রিক টন। কলকাতা তুলনায় কম হলেও বছরে ৩৫,০০০ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য এখানেও পাওয়া যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE