Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
তিন হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতকে ১৪০০ কোটি

পঞ্চায়েতে ৫০ লক্ষ টাকা পাঠাবে কেন্দ্র

কেন্দ্র থেকে সরাসরি পঞ্চায়েতে আসে যে টাকা, তার পরিমাণ এই বছরে বাড়ছে প্রায় আড়াই গুণ। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে খবর, এ বছর রাজ্যের এক একটি গ্রাম পঞ্চায়েত কেন্দ্রের থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিঃশর্ত অনুদান পাবে। এত বছর গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি গড়ে ২০ লক্ষ টাকা পেত।

নুরুল আবসার
শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০১:১২
Share: Save:

কেন্দ্র থেকে সরাসরি পঞ্চায়েতে আসে যে টাকা, তার পরিমাণ এই বছরে বাড়ছে প্রায় আড়াই গুণ। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে খবর, এ বছর রাজ্যের এক একটি গ্রাম পঞ্চায়েত কেন্দ্রের থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিঃশর্ত অনুদান পাবে। এত বছর গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি গড়ে ২০ লক্ষ টাকা পেত। কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের এই অনুদান সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ঢুকবে গ্রাম পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে। পরবর্তী বছরগুলোতে এই অনুদানের পরিমাণ বাড়বে। তবে পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদগুলি এই টাকা পাবে না।

সব মিলিয়ে এ বছর রাজ্যে সাড়ে তিন হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতকে কেন্দ্র দিচ্ছে মোট ১৪০০ কোটি টাকা। যা অভূতপূর্ব। কিন্তু সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে আশঙ্কাও। পঞ্চায়েত দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘টাকা পেলেই তো হল না, খরচ করতে পারা চাই।’’ তিনি জানান, কেন্দ্রীয় এই অনুদানের নিয়ময়াই হল, গোড়ায় ৫০ শতাংশ টাকা আসবে। সেই টাকা খরচ করে হিসেব দিতে পারলে, তবে বাকি টাকা আসবে। ‘‘অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতই প্রথম দফার অনুদান ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে হিসেব দিতে পারে না। পরের দফার টাকা পাঠায় না কেন্দ্র।’’ বরাদ্দ আড়াই গুণ বাড়ায় পঞ্চায়েতগুলো তা খরচ করতে না পারলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। টাকা খরচের হার বাড়াতে কী করছে প্রশাসন?

পঞ্চায়েত দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, তাঁরা মূলত দিচ্ছেন আগাম পরিকল্পনার উপর। টাকা আসবে সেপ্টেম্বরে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি যদি এখন থেকেই কাজের তালিকা এবং তার জন্য টাকা বরাদ্দ করে পরিকল্পনা তৈরি করে রাখে, তা হলে টাকা এলেই খরচ শুরু করতে পারবে। জানুয়ারির মধ্যে টাকা খরচ করে ফেলতে পারলে দ্বিতীয় দফার টাকা মিলবে। পরিকল্পনা তৈরির বার্তা সব গ্রাম পঞ্চায়েতকে দিতে ইতিমধ্যেই একটি ভিডিও কনফারেন্স করেছে পঞ্চায়েত দফতর।

কিন্তু কেবল আগাম পরিকল্পনা তৈরির উপর জোর দিয়ে কতটা কাজ হবে, যদি তা রূপায়ণ করার লোক না থাকে? গ্রাম পঞ্চায়েতের তহবিলে উন্নয়নের বরাদ্দ ক্রমশ বাড়ছে। এ বছর কেন্দ্র থেকে ৪৫- ৫০ লক্ষ টাকা ছাড়াও, রাজ্য অর্থ কমিশন প্রায় ২০ লক্ষ টাকা নিঃশর্ত তহবিল হিসেবে পেতে পারে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। সেই সঙ্গে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে আরও দেড় কোটি থেকে দু’কোটি টাকা পাবে অনেক পঞ্চায়েত। এত টাকা খরচ করবে কী করে? পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিকদের মতে, বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় গ্রাম পঞ্চায়েতের সশক্তিকরণ বা ‘আইএসজিপি’ প্রকল্প চলছিল যে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে, সেখানে সমস্যা কম। কারণ বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদান, গড়ে ১ কোটি টাকা পেয়েছে রাজ্যের যে ৯৯২টি গ্রাম পঞ্চায়েত, সেগুলিতে তিন দক্ষ কর্মীর একটি দল নিযুক্ত হয়েছে। তাতে রয়েছেন এক জন ইঞ্জিনিয়ার, এক জন অ্যাকাউনটেন্ট এবং এক জন পরিকল্পনা পারদর্শী সমাজকর্মী। ফলে পরিকল্পনা, বাজেট তৈরি, বরাদ্দ খরচ, ইত্যাদি বিষয়ে সহায়তা মিলছে।

নদিয়ার ১১১টা গ্রাম পঞ্চায়েত আইএসজিপির অনুদান পাচ্ছে। তার মধ্যে করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল বললেন, ‘‘বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে বছরে গড়ে ৫০ লক্ষ টাকা পাচ্ছি। এ বছর ২৮ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা মাসখানেক আগে পেয়েছি। এর মধ্যে তার ৮০ শতাংশই খরচ হয়ে গিয়েছে।’’ কী করে? ‘‘আগে থাকতেই বেশি টাকার কাজ পরিকল্পনা করে রাখি। টাকা আসামাত্রই খরচ করে ফেলি,’’ বললেন তারকবাবু। এ ছাড়া তেহট্ট মহকুমার আইএসজিপি সেল থেকে দক্ষ কর্মীরা এসে পরিকল্পনা এবং রূপায়ণে সাহায্য করেন।

চতুর্থ রাজ্য অর্থ কমিশন সদস্য, পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন আধিকারিক দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘আমরা চাই দক্ষ কর্মীদের দল রাজ্যের সব ক’টা গ্রাম পঞ্চায়েতে চুক্তিতে নিয়োগ হোক। যে সব পঞ্চায়েত আইএসজিপি-র অধীন নয়, সেখানে এমন টেকনিক্যাল সহায়তা না দেওয়া হলে বরাদ্দ ফিরে যাবে। খরচ হবে না।’’ দিলীপবাবুর বক্তব্য, সরাসরি গ্রাম পঞ্চায়েত দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ করলে স্বজনপোষণের ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে নিয়োগ করে, কর্মীদের পাঠানো যায় পঞ্চায়েতে। আগাম পরিকল্পনা, বাড়তি লোক, কোন অস্ত্রে বাড়ে ব্যয়ক্ষমতা, এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE