জাতীয় নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।
জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক-সহ মোট ৪৩ জন আধিকারিককে দিল্লিতে ডেকে পাঠাল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে এই অফিসারদের সবিস্তার প্রশিক্ষণ দেবে কমিশন। এই প্রশিক্ষণের আওতায় যে বিষয়গুলি গুরুত্ব পেতে চলেছে, তার মধ্যে অন্যতম আদর্শ আচরণবিধি এবং আইনশৃঙ্খলা। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, অতীতে একসঙ্গে এত জন অফিসারকে দিল্লিতে প্রশিক্ষণের জন্য তলব করা হয়নি। উপরন্তু, ভোটের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে কমিশন। এই দু’দিক থেকে এই প্রশিক্ষণ পর্ব বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
সূত্রের খবর, ২৩ জন জেলাশাসক (যাঁরা ভোটের রিটার্নিং অফিসারও) এবং ১৯ জন অতিরিক্ত জেলাশাসককে যেতে হবে দিল্লিতে। তবে একই দিনে তাঁদের সবাইকে যেতে হচ্ছে না। এক-এক দফায় কয়েক জন অফিসার দিল্লিতে যাবেন এবং প্রশিক্ষণ নেবেন। পাশাপাশি, ১৩ জন জাতীয় স্তরের প্রশিক্ষক এবং ১২০ জন রাজ্যস্তরের প্রশিক্ষককেও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেবে কমিশন। সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ হবে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। ১১ ডিসেম্বর থেকে তিনটি পর্বে সেই প্রশিক্ষণ শুরু হবে। চলবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। প্রতি দফায় এমন ৯৮ জন করে অফিসার প্রশিক্ষণ নেবেন। জানুয়ারি থেকে পুলিশেরও প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “কমিশনের এই সিদ্ধান্তটি অভিনব। কারণ, আগে কখনও এ ভাবে সব জেলা-কর্তাদের ডেকে পাঠায়নি কমিশন। এ বার চারটি পর্বে প্রশিক্ষণ হবে। প্রতি পর্বে জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক মিলিয়ে ছ’জন করে অফিসার দিল্লি যাবেন।” আদর্শ আচরণবিধি এবং আইনশৃঙ্খলা ছাড়াও সচিত্র ভোটার তালিকা, ভোট-পদ্ধতি, ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্র ওগণনা, প্রার্থীদের খরচ-বিধি এবং মনোনয়নের মতো বিষয়ও প্রশিক্ষণের সূচিতে আছে।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই কোন বিধানসভার কোন এলাকা কতটা সংবেদনশীল, তার তথ্য পুলিশের থেকে চাওয়া হয়েছে বলে খবর। যে কাজ শুরু হয়েছে কলকাতা পুলিশ এলেকায় থাকা বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে অবস্থিত থানাগুলিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু কলকাতা পুলিশ এলাকায় বিষয়টা সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং তা রাজ্য পুলিশ এলাকাতেও কার্যকর হবে। তাতে গত দু’টি বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটের সময় গোলমাল, কোন আইনে কত মামলা ও সেগুলির বর্তমান পরিস্থিতি, অতীতের বিভিন্ন বিধি লঙ্ঘনে করা পদক্ষেপ, টাকা এবং অস্ত্র উদ্ধার ইত্যাদি নিয়ে তথ্য দেওয়ার কথা পুলিশের।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, বিগত ভোটগুলির মতো এবারও হিংসার তথ্য চাওয়া নতুন বিষয় নয়। তবে সেই তথ্যের উপর নির্ভর করে ভোটের নিরাপত্তার কৌশল কী ভাবে কমিশন তৈরি করবে, তা-ই গুরুত্বপূর্ণ। গত বিধানসভা ভোটে রাজ্যে এসেছিল প্রায় ১১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেরই ধারণা, আসন্ন লোকসভা ভোটে রাজ্যের ৮০ হাজার ৪৫৩টি বুথের নিরাপত্তা জোরদার করতে তার চেয়েও বেশি সংখ্যায় বাহিনী পাঠাতে পারে কমিশন। ফলে সেই সব দিক থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী ভাবে নিশ্চিত করতে হবে, জেলা-কর্তাদের সেই বার্তাই আসন্ন প্রশিক্ষণে দিতে পারে কমিশন।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে এ-ও মনে করছেন, ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে বরাবর অভিযোগ তুলে থাকেন বিরোধীরা। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন এবং তার ব্যবহার নিয়েও প্রায় প্রশ্ন ওঠে। গত পঞ্চায়েত ভোটও (যদিও সেটি ছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত) তার ব্যতিক্রম থাকেনি। হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল আদালতকেও। ফলে ভোট পরিচালনায় প্রশাসনিক কর্তাদের ভূমিকাও কার্যত থাকে বিরোধীদের আতশ কাচের তলায়। যা নিয়ে কমিশনের কাছে দরবারও করেন তাঁরা। মনে করা হচ্ছে, এই সব দিকগুলিই নির্বাচন সদনের প্রশিক্ষণের বার্তায় থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy