চাকরি পাইয়ে দিতে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন শান্তনু, আদালতে বলল ইডি। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হাতে গ্রেফতার হওয়া হুগলির যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে বুধবার আদালতে পেশ করা হয়। নগর দায়রা আদালতে তদন্তকারী সংস্থার তরফে দাবি করা হয়, ৩০০ জনের তালিকার পাশাপাশি, ২৬ জন চাকরিপ্রার্থীর একটি তালিকা শান্তনুকে দেওয়া হয়েছিল। ওই তালিকাভুক্ত ২৬ জনকে চাকরি পাইয়ে দিতে বলাগড়ের বহিষ্কৃত তৃণমূল যুবনেতা শান্তনুকে প্রায় ১কোটি ৪০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন বলেও আদালতে দাবি করেন ইডির আইনজীবী। ইডির তরফে আদালতে এ-ও জানানো হয়, মূলত স্কুলের প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকে অবৈধ উপায়ে নিয়োগের জন্যই ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল।
ইডির আরও অভিযোগ, ‘লোটাস কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি সংস্থাকে প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার এবং কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন শান্তনু। পরে সেই কোম্পানি থেকে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা অ্যাকাউন্টে টাকা সরানোর অভিযোগও তোলা হয়েছে শান্তনুর বিরুদ্ধে। আদালতে ইডির কৌঁসুলি জানান, আয়ের উৎস লুকোতে, দিনমজুরদের মজুরি দেওয়ার জন্য একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে চেকবুকে মজুরিপ্রাপকদের দিয়ে সই করিয়ে নিয়ে রেখেছিলেন শান্তনু। তদন্তকারীরা মনে করছেন এর মাধ্যমেও টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। তদন্তে শেষ ১৪ দিনে কী অগ্রগতি হয়েছে, বিচারক তা জানতে চাইলে তদন্তকারী আধিকারিক গিয়ে সবটা ব্যাখ্যা করেন।
বুধবার শান্তনুর আইনজীবী অবশ্য জামিনের আবেদন করেননি। আদালতের সওয়াল জবাব পর্বে শান্তনুর আইনজীবীদের প্রশ্ন, যে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার কথা কথা বলা হচ্ছে, তা যে অবৈধ নিয়োগের জন্যই দেওয়া হয়েছিল, তার প্রমাণ কোথায়? তাঁদের দাবি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যে টাকার কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে ঋণের টাকা। ইডির তরফ থেকে বার বার শান্তনুর পরিচয় হিসাবে একটি বিশেষ দলের পরিচয় ব্যবহার করা নিয়েও আপত্তি জানান শান্তনুর আইনজীবীরা। তাঁদের বক্তব্য, উনি তো চাকরি করতেন। সেই পরিচয়টা ব্যবহার করা হয় না কেন? শান্তনুর আইনজীবী এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, “শান্তনু এত বোকা নন যে, যখন চারদিকে দুর্নীতির তদন্তে তল্লাশি চলছে, তখন উনি বাড়িতে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি রেখে দেবেন।” এটি সাজানো ঘটনা হতে পারে বলে সন্দেহপ্রকাশ করেন তিনি। বুধবার ইডির হয়ে সওয়াল করেন দুই আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিজিৎ ভদ্র।
গত ১০ মার্চ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন হুগলির প্রাক্তন তৃণমূল যুবনেতা (অধুনা দল থেকে বহিষ্কৃত) শান্তনু। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের কর্মী শান্তনু কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বলে দাবি করে ইডি। ইডির অভিযোগ, সরকারি চাকরি বিক্রি করেই এত টাকা আয় করছেন শান্তনু। ধৃত শান্তনুর পিছনে কে বা কারা ছিলেন, চাকরি বিক্রি করার টাকা শান্তনুর কাছ থেকে কোন হাতে জমা হত, তা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে ইডি। শান্তনুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৩০০ জন চাকরিপ্রার্থীর নামের তালিকা খুঁজে পান তদন্তকারীরা।
দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে শান্তনুকে আগামী ১৭ মে পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালতের বাইরে শান্তনুকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি দিনমজুরদের দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছিলেন কিনা। প্রশ্নের উত্তরে শান্তনু বলেন, “সব কোর্টে বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy