পাকিস্তানি নাগরিক আজাদ মল্লিক ওরফে আজাদ হোসেন বেআইনি পথে পাসপোর্ট তৈরি করার পাশাপাশি বহু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ভিসা তৈরি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করত বলে বিচার ভবনের সিবিআই বিশেষ আদালতে দাবি করল ইডি। পাসপোর্ট জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় আজাদকে মঙ্গলবার আদালতে পেশ করা হয়। ইডি-র হেফাজত থেকে এ দিন আজাদকে আদালতে হাজির করেন তদন্তকারীরা। ইডি-র আইনজীবীরা জেল হেফাজতের আবেদনের পাশাপাশি জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন বলে আদালত সূত্রের খবর।
তদন্তকারীদের দাবি, আজাদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা একাধিক মোবাইল ফোনে ২৬ হাজার অডিয়ো ক্লিপ পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গত চার বছরে আজাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৫০ কোটিরও বেশি টাকা দফায় দফায় জমা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারী অফিসার। দু’টি পৃথক নামে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড রয়েছে আজাদের। এমনকি, নৈহাটি ও রাজারহাট-গোপালপুর এলাকার ভোটার তালিকাতেও আজাদের নাম রয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারী অফিসার। নৈহাটি এবং মধ্যমগ্রামের ঠিকানায় দু’টি ভোটার কার্ড তৈরি করেছিল আজাদ।
বিগত কয়েকটি নির্বাচনে আজাদ ভোটও দিয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। তাঁদের দাবি, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জাল নথির মাধ্যমে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি, দুবাই, মালয়েশিয়া বা সৌদি আরবের ভিসা-পাসপোর্টও তৈরি করে দিত আজাদ। সেই তথ্য সামনে এসেছে। জাল নথির মাধ্যমে ৪০০ থেকে ৫০০ জন অনুপ্রবেশকারীকে পাসপোর্ট-ভিসা তৈরি করে দেওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সেই সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করে দেওয়ার বিনিময়ে নেওয়া টাকা নিজের সহযোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করত আজাদ। তবে ওই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আজাদ নিজেই নিয়ন্ত্রণ করত। সেগুলির পাসবই এবং ডেবিট কার্ডও নিজের কাছে রাখত সে। পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিভিন্ন অ্যাপ এবং ফোনের মাধ্যমে আজাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে দাবি করেছেন মামলার তদন্তকারী অফিসার। সে হাওয়ালা মারফত পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত ভাবে আর্থিক লেনদেন চালাত বলেও জানা গিয়েছে। পাকিস্তানে আজাদের বাড়ির ঠিকানার হদিসও পাওয়া গিয়েছে বলে জানান তদন্তকারীরা। পাকিস্তান থেকে এসে সে বাংলাদেশেও কিছু দিন ছিল। সেই ঠিকানারও হদিস মিলেছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ, দু’জায়গাতেই আজাদের স্ত্রী ও পরিবার রয়েছেন বলে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এমনই দাবি ইডি-র। এ রাজ্যে আসার পরে আরও একটি বিয়ে করে সে।
প্রসঙ্গত, প্রথমে পাসপোর্ট জালিয়াতি মামলায় আজাদকে গ্রেফতার করে ইডি। পরে দমদম থানার একটি প্রতারণার মামলাতেও আজাদকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ (অন্য মামলায় জেল হেফাজতে থাকা অভিযুক্তকে আর একটি মামলায় গ্রেফতার) করা হয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)