Advertisement
E-Paper

চার মাসে ২৬ লক্ষ টাকা ঢুকেছে জীবনের স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে! কে দিয়েছেন? ইডির প্রশ্নের মুখে জানিয়ে দিলেন বিধায়ক-জায়া

জীবনকৃষ্ণ প্রথমে নিজের দু’টি মোবাইলের পাসওয়ার্ড তদন্তকারীদের দিতে চাইছিলেন না বলে অভিযোগ ওঠে। তবে ইডি সূত্রে মঙ্গলবার জানা যায়, উদ্ধার হওয়া দু’টি মোবাইলের পাসওয়ার্ডই ইডিকে দিয়ে দিয়েছেন ধৃত বিধায়ক।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ১৬:১৮
মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। সোমবার তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি।

মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। সোমবার তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। — ফাইল চিত্র।

নিয়োগ মামলায় অভিযুক্ত মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার ব্যাঙ্ক নথি যাচাই করে দেখছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর আধিকারিকেরা। জীবন এবং তাঁর স্ত্রী টগরি সাহার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েক দফায় ৪৬ লক্ষেরও বেশি টাকা জমা পড়েছে, যা সন্দেহজনক বলে মনে করছে ইডি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি জমা পড়েছে টগরির অ্যাকাউন্টে, প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা। মাত্র চার মাসে (২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে) এই টাকা জমা পড়েছে টগরির অ্যাকাউন্টে।

জীবন এবং তাঁর স্ত্রী উভয়েই সরকারি কর্মচারী। বেতন ছাড়া তাঁদের অন্য আয়ের উৎস নেই বলেই ইডি সূত্রে খবর। সে ক্ষেত্রে মাত্র চার মাসের মধ্যে কী ভাবে তাঁর অ্যাকাউন্টে এই টাকা এল, তা নিয়ে সন্দেহ জাগে তদন্তকারীদের মনে। ইডি সূত্রের দাবি, এ বিষয়ে জীবনের স্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে টগরি জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীই এই টাকা জমা করেছেন। সে ক্ষেত্রে এই লক্ষ লক্ষ টাকার উৎস কী, তা খতিয়ে দেখতে চাইছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা।

সোমবার আদালতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে ৬-৭ জন চাকরিপ্রার্থীর উদাহরণ তুলে ধরে ইডি। ৪৬ লক্ষ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের কথাও ইতিমধ্যে আদালতে জানিয়েছেন ইডির আইনজীবী। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য ইতিমধ্যে তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। এর মধ্যে উঠে এসেছে জনৈক সঞ্জিত মণ্ডলের নাম। তিনি ২০১৯ সালে দু’দফায় জীবনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিলেন বলে দাবি ইডি সূত্রের। এক বার ৫ লক্ষ টাকা এবং অন্য বার সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা জীবনের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া দীপক দাস ১২ লক্ষ টাকা, নবীন মণ্ডল ১ লক্ষ টাকা, রানা মণ্ডল ৮ লক্ষ টাকা (দু’দফায়), অমিত বিশ্বাস ১ লক্ষ টাকা, আরিফ ইকবাল ৯৫ হাজার টাকা এবং প্রণয়চন্দ্র বিশ্বাস ১২ লক্ষ টাকা (তিন দফায়) জীবনকে পাঠিয়েছিলেন বলে ইডি সূত্রের দাবি। এর মধ্যে ২০২২ সালে দীপককে ৫ লক্ষ টাকা বিধায়ক ফেরত দিয়েছিলেন বলেও দাবি তদন্তকারীদের। যদিও এই সাত জন কারা, কী তাঁদের পরিচয়, তা জানা যায়নি।

বিধায়ক নিজের নামে এবং অন্য বেশ কয়েক জনের নামে সম্পত্তি (জমি এবং বাড়ি) কিনেছেন বলেও কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে এ-ও উঠে এসেছে। সূত্রের দাবি, জনৈক মায়ারানি, নিতাই সাহা, রাজেশ ঘোষ এবং গৌর সাহার নামে ওই সম্পত্তিগুলি কেনা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, বিধায়কের পিসির নাম মায়া সাহা। তিনি বীরভূমের সাঁইথিয়ায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। সোমবার কাউন্সিলরের বাড়িতেও হানা দিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তবে মায়ারানি এবং মায়া সাহা একই মহিলা কি না, তা স্পষ্ট নয়। ইডি সূত্রেও এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

জীবন এবং তাঁর পরিচিতদের নামে কেনা এই সম্পত্তিগুলির বেশির ভাগই নগদে কেনা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর। এই সম্পত্তিগুলির বিষয়েও জীবনকৃষ্ণকে জেরা করেছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, অভিযুক্ত বিধায়ক দাবি করেছেন, কিছু সম্পত্তি তিনি নিজের ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে কিনেছেন। এ ছাড়া কিছু সম্পত্তি তাঁর বাবা বিশ্বনাথ সাহা উপহার দিয়েছেন। যদিও ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময় বিশ্বনাথ এ কথা অস্বীকার করেছেন। বিধায়কের বাবা ইডিকে জানিয়েছেন, ছেলেকে কোনও দিনই টাকা দেননি তিনি। তাঁর ব্যবসার সঙ্গেও জীবনের কোনও যোগাযোগ নেই বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন বিশ্বনাথ।

গ্রেফতারির পরে সোমবারই জীবনকৃষ্ণকে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় নিয়ে আসে ইডি। কলকাতায় নগর দায়রা আদালতে পেশ করে ছ’দিনের জন্য তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেন তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার ইডির তরফে বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের গ্রেফতারির কথা বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরকে সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে।

অন্য দিকে, ধৃত বিধায়কের দু’টি মোবাইলে কী তথ্য রয়েছে, তা সংগ্রহ করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। সোমবার বিধায়কের বাড়িতে ইডির হানার সময় ফের এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেমন হয়েছিল দু’বছর আগে সিবিআইয়ের হানার সময়। অভিযোগ, ইডি হানা দিতেই বাড়ির পিছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। প্রায় ১০০ মিটার দৌড়নোর পরে তাঁকে ধরে ফেলেন তদন্তকারীরা।

পরে তাঁকে ধরে বাড়িতে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। তখনই তদন্তকারীদের নজরে আসে যে বিধায়কের মোবাইল তাঁর সঙ্গে নেই। পরে খোঁজাখুঁজি করে একটি নর্দমা থেকে পাওয়া যায় জীবনের মোবাইল। বিধায়কের বাড়িতে হানা দিয়ে দু’টি মোবাইল উদ্ধার করেছেন আধিকারিকেরা। দু’টি মোবাইল— একটি আইফোন এবং অন্যটি স্যামসং গ্যালাক্সি এস২৪। অভিযোগ, প্রথমে বিধায়ক মোবাইলের পাসওয়ার্ড তদন্তকারীদের দিতে চাইছিলেন না। তবে ইডি সূত্রে মঙ্গলবার সকালে জানা যায়, উদ্ধার হওয়া দু’টি মোবাইলের পাসওয়ার্ডই ইডিকে দিয়েছেন জীবন। তদন্তকারী সংস্থার ওই সূত্র জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে দু’টি মোবাইল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিজেদের কাছে রাখার কথা ভাবছে তারা।

এর আগে সিবিআই যখন পুকুর থেকে বিধায়কের মোবাইল উদ্ধার করেছিল, তখন তা থেকে বিভিন্ন তথ্যও তদন্তকারীরা হাতে পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে নিয়োগ মামলার তদন্তেও সেগুলি কাজে লেগেছিল। এ বারও জীবনের মোবাইলে কোনও গোপন তথ্য রয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখতে চান ইডির আধিকারিকেরা। সেই কারণেই তাঁর মোবাইল বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে অপর একটি সূত্রের দাবি, সিবিআইয়ের উদ্ধার করা দু’টি মোবাইল এবং ইডির উদ্ধার করা দু’টি মোবাইল এক নয়। সোমবার ইডি আধিকারিকেরা যে মোবাইলগুলি উদ্ধার করেছেন, সেগুলি নতুন। ফলে পুরনো মোবাইলে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, তা এই মোবাইলগুলি থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পাশাপাশি অতীতের ঘটনার পরে জীবনের মোবাইলে আদৌ কোনও তথ্য রয়েছে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

Jiban Krishna Saha Enforcement Directorate West Bengal Recruitment Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy