Advertisement
E-Paper

‘জামিন পাওয়াই উচিত হয়নি’! পুত্রের গ্রেফতারিতে ‘স্বস্তি’ পেলেন জীবনের বাবা, দায়ী করলেন বিধায়কের পিসিকে

জীবনকৃষ্ণ ব্যবসায়িক পরিবারের ছেলে। তবে সংসারে অভাব-অনটন ছিল। কখনও ভাল, আবার কখনও খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে সাহা পরিবারকে। তবে রাজনীতিতে আসার আগে পুত্র জীবনকৃষ্ণের সঙ্গে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকে মেলাতে পারছেন না বিশ্বনাথ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ১৩:৩৪
Jibankrishna Saha should not have been granted bail in recruitment case, claims his father Bishwanath Saha

(বাঁ দিকে) জীবনকৃষ্ণ সাহা এবং তাঁর বাবা বিশ্বনাথ সাহা (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার জামিন পাওয়াই উচিত হয়নি। নিয়োগ মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর এমনই মনে করছেন জীবনের বাবা বিশ্বনাথ সাহা। তাঁর দাবি, পুত্রের সব সম্পত্তি বেআইনি। জীবনের সঙ্গে তাঁর পিতার সম্পর্ক এমনিতেই খুব মধুর নয়। ফলে তাঁর এই উক্তি প্রত্যাশিত।

বিশ্বনাথের দাবি, তিনি বারবার পুত্রকে তাঁর কাজ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। নানা পরামর্শও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সব কথা কানে তোলেননি জীবন। সেই কারণেই পিতা-পুত্রের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। বিশ্বনাথের কথায়, ‘‘পরিস্থিতি এমন হয় যে আমাকেই নিজের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়।’’ পুত্রের গ্রেফতারিতে কোনও দুঃখ নেই বলেই জানান বিশ্বনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘ও আমার ক্ষতি করেছে। আমি চাই ওর শাস্তি হোক। ওই যদি কোনও শাস্তি না হয়, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি আমার। জীবন আমাকে প্রাণে মারার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে।’’

সোমবার সকালে আচমকাই মুর্শিদাবাদের কান্দির আন্দি গ্রামে জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে হানা দেন ইডি আধিকারিকেরা। তখন সকাল ৮টা। প্রথমে জীবন বুঝতে পারেননি, তাঁর বাড়িতে ইডি হানা দিয়েছে। না বুঝেই বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করেন জীবন। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি। ধরা পড়ে যান ইডি আধিকারিকদের হাতে। তার পর টানা চার ঘণ্টা ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ককে। পুত্রের গ্রেফতারির খবর শুনে হতাশ হননি বিশ্বনাথ। বরং তিনি যে স্বস্তি পেয়েছেন, তাঁর ছাপ পড়েছে চোখেমুখে এবং কথায়।

জীবন ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। তবে সংসারে অভাব-অনটন ছিল। কখনও ভাল, আবার কখনও খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে সাহা পরিবারকে। তবে রাজনীতিতে আসার আগে পুত্র জীবনকৃষ্ণের সঙ্গে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকে মেলাতে পারছেন না বিশ্বনাথ। তাঁর দাবি, জীবনের বিপুল সম্পত্তি সবটাই অসৎ পথে উপার্জন করা। সেই সম্পত্তির সঙ্গে তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনও সম্পর্ক নেই। জীবনকে ‘বংশের কলঙ্ক’ বলতেও দ্বিধা করছেন না বিশ্বনাথ।

বিশ্বনাথের কথায়, ‘‘সাধারণ পরিবারের ছেলে জীবন। আর পাঁচ জন সাধারণ ঘরের ছেলের মতো তাঁর বেড়ে ওঠা। তার পর ধীরে ধীরে রাজনীতি জগতে পা দেয়। প্রথমে রাজনীতির মঞ্চকে সাধারণ মানুষের সেবা হিসাবেই দেখত ও। তবে ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে বদলে যায় সব ছবি।’’ বিশ্বনাথের অভিযোগ, হাতে ক্ষমতা আসার পর পরই বদলে যান জীবন। অযথা ক্ষমতার দাপট দেখানো, দুর্নীতি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর। ভয় দেখিয়ে একের পর এক জমি দখলের নেশায় মেতে ওঠেন জীবন। শুধু বাইরের লোকের জমি নয়, পারিবারিক সম্পত্তিও গ্রাস করা শুরু করেন। এমনই দাবি বিশ্বনাথের।

পুত্রের এই ‘অধঃপতনের’ নেপথ্যে নিজের বোন মায়ারানি সাহাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিশ্বনাথ। তাঁর দাবি, পিসির আশকারাতেই সব ‘অনৈতিক’ কাজ করতেন জীবন। তবে মায়া বলেন, ‘‘জীবন আমার ভাইপো, রক্তের সম্পর্ক। ও কী করেছে না করেছে, সেটা তো বলতে পারব না। কিন্তু ও তো আমার ভাইপো বটে, যতই হোক।’’ উল্লেখ্য, সোমবার বীরভূমের সাঁইথিয়াতেও পৌঁছে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। সেখানে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মায়ার বাড়িতে হানা দেয় ইডি।

২০২৩ সালের এপ্রিলে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। পরে জামিনে ছাড়াও পান। কিন্তু পুত্রের জামিন পাওয়ায় খুশি ছিলেন না বিশ্বনাথ। আগেও তা নিয়ে বার বার মুখ খুলতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সোমবার নিয়োগ মামলায় ইডির হাতে পুত্রের গ্রেফতারিতে তিনি যে ‘স্বস্তি’ পেয়েছেন, তা স্পষ্ট করেছেন জীবনের বাবা বিশ্বনাথ।

Jiban Krishna Saha TMC ED
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy