Advertisement
E-Paper

কাউকে ৬৫ ঘণ্টা, কাউকে ২৬! কোন তৃণমূল নেতাকে কত ক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ ইডি এবং সিবিআইয়ের?

প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযানের পর গ্রেফতার করা হয়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। এই প্রথম নয়, বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের নেতাদের বাড়িতে এর থেকেও বেশি সময় ধরে তল্লাশি অভিযান চলেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:০৩
photo of abhishek banerjee.

(বাঁ দিক থেকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

দিন পেরিয়ে রাত, রাত গড়িয়ে ভোর— গত এক বছরে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িতে এ ভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে ইডি-সিবিআই। বৃহস্পতিবার তেমনই এক দীর্ঘ অভিযানের পর গ্রেফতার করা হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায় সল্টলেকে মন্ত্রীর দুই বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। গভীর রাত ২টো ৪০ মিনিটে (তারিখ অনুযায়ী শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর) গ্রেফতার করা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। এই প্রথম নয়, দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে নেমে এর থেকেও বেশি সময় ধরে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পাশাপাশি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলেছে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ।

শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ২২ জুলাই। দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সে দিন তখনও ঠিক করে ঘুম ভাঙেনি কলকাতার। দলবল নিয়ে সকাল ৬টায় পার্থের বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। দিন পেরিয়ে রাত, রাত গড়িয়ে ভোর— টানা প্রায় সাড়ে ২৬ ঘণ্টা পর শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থকে গ্রেফতার করে নাকতলা ছেড়েছিল ইডির দল। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে।

জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে প্রায় ২০ ঘণ্টা আর পার্থের বাড়িতে প্রায় সাড়ে ২৬ ঘণ্টা ধরে চলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযান। এর থেকেও রাজ্যের আরও এক বিধায়কের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। চলতি বছরের এপ্রিল মাস। মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। দীর্ঘ প্রায় ৬৫ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। গত দেড় বছরে তৃণমূলের যত জন নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি-সিবিআই, তার মধ্যে জীবনকৃষ্ণের বাড়িতেই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলেছে অভিযান।

পার্থের গ্রেফতারের পরের মাসেই সিবিআই জালে ধরা পড়েছিলেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল। ২০২২ সালের ১১ অগস্ট সকালে বোলপুরে অনুব্রতের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গরু পাচার মামলায় বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতিকে পাকড়াও করেন তদন্তকারীরা। এর পর নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল নদিয়ার পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে। ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর মানিককে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে, পার্থের বাড়িতে অভিযানের দিনই ২২ জুলাই মানিকের ঘরে হানা দিয়েছিল ইডি। সে দিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত মানিকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।

শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয় হুগলির বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে। তার আগে কুন্তলের বাড়িতেও দীর্ঘ তল্লাশি চালানো হয়েছিল। তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছিল তৃণমূলের আরও এক বহিষ্কৃত যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতেও। শান্তনু-ঘনিষ্ঠ হুগলির প্রোমোটার অয়ন শীলের বাড়িতে প্রায় ৩৭ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

চলতি মাসের শুরুতে পুর নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে নেমে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের মধ্যমগ্রামের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে চলেছিল সেই অভিযান। গত ৮ অক্টোবর এই মামলাতেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফিরহাদের বাড়িতে তল্লাশি চলেছিল। একই কারণে ওই দিনেই কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের বাড়িতেও তল্লাশি চালায় সিবিআই। প্রায় ছ’ঘণ্টার তল্লাশির পর মদনের বাড়ি থেকে বেরোন তদন্তকারীরা। এর পর পরই রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় তৎপর হয় ইডি। কলকাতার কৈখালিতে ব্যবসায়ী তথা মন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত বাকিবুর রহমানের ফ্ল্যাটে হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সাড়ে ৫৩ ঘণ্টা তল্লাশির পর বাকিবুরকে পাকড়াও করা হয়। আর তার পর পরই জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে ইডির হানা।

শুধু বাড়িতে তল্লাশি অভিযানই নয়, দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের নেতাদের তলব করে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদও চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রথম বার সাড়ে ৯ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। পরে এই মামলায় অভিষেককে সোয়া ৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে উঠে এসেছে অভিষেকের সংস্থা ‘লিপস্‌‌ অ্যান্ড বাউন্ডসের’ নাম। সেই সূত্রে অভিষেক-পত্নী রুজিরাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। তাঁকে প্রায় সাড়ে ৮ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে, কয়লা পাচার মামলায় অভিষেক এবং রুজিরাকে কয়েক দফায় দীর্ঘ ক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষকে প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। এই মামলায় অভিনেতা বনি সেনগুপ্তকে প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। অন্য দিকে, ফ্ল্যাট প্রতারণাকাণ্ডে তৃণমূলের তারকা সাংসদ নুসরত জাহানকে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি।

TMC ED
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy