Advertisement
E-Paper

কলেজ-ছাড়পত্র দিতেই আদায় ৬-৮ লক্ষ: ইডি

বেআইনি ভাবে টাকা তোলার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিএড এবং ডিইএলএড কলেজ কর্তৃপক্ষের সংগঠনকে ‘সেফ প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

  শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫৫
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি তথা তৃণমূলের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য।

রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি তথা তৃণমূলের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।

ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এক ব্যক্তি কারও কাছ থেকে আট লক্ষ টাকা নিয়েছেন, আবার কারও কাছ থেকে নিয়েছেন ছ’লক্ষ টাকা। অন্য এক জন কারও কাছ থেকে দু’লক্ষ তো কারও কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। প্রথম জন ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন বেসরকারি বিএড কলেজের ছাড়পত্র পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে। দ্বিতীয় জন বেসরকারি ডিইএলএড কলেজ চালানোর ছাড়পত্রের বিনিময়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে বুধবার আদালতে চার্জশিট দিয়ে অভিযোগ করেছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তারা জানাচ্ছে, দুই অভিযুক্তই পরস্পরের অতিঘনিষ্ঠ। অন্তত শিক্ষা-দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত।

ওই দুই অভিযুক্ত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি তথা তৃণমূলের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। সরকারি ছাড়পত্র ছাড়া বেসরকারি কলেজ চালানো যায় না। কিন্তু তার জন্য বিভিন্ন কলেজকে যে-মাসুল গুনতে হয়েছে, সেই পরিমাণ বিস্ময়কর। বেসরকারি বিএড কলেজের ক্ষেত্রে এই বিপুল লেনদেনের অভিযোগে মূলত বিদ্ধ করা হয়েছে পার্থকে। চার্জশিটে একই সঙ্গে ইডি-র অভিযোগ, এই শিক্ষা-দুর্নীতিতে প্রতি পদে পার্থের সঙ্গে সঙ্গত করে গিয়েছেন মানিক এবং তিনি টাকা নিয়েছেন বেসরকারি ডিইএলএড কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

আদালতে পেশ করা রিপোর্টে তদন্তকারীদের দাবি, রাজ্যে বেসরকারি বিএড কলেজ আছে কমবেশি প্রায় ৬৫৪টি। তাদের শুধু ছাড়পত্র দিয়ে কী পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল, সেই হিসাবও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, বিএড কলেজের টাকা পার্থের নামে এবং ডিইএলএড কলেজের টাকা মানিকের নামে জমা হয়েছিল।

বেআইনি ভাবে টাকা তোলার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিএড এবং ডিইএলএড কলেজ কর্তৃপক্ষের সংগঠনকে ‘সেফ প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই সংগঠনের সভাপতি পার্থ-মানিকের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে তাপসের বয়ান উল্লেখ করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের জেরায় তাপস জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটে ৩২৫ জন প্রার্থীকে পাশ করিয়ে দেওয়া এবং চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্য ‘ঘোষবাবু’ নামে পার্থ ও মানিকের কোনও এক প্রতিনিধিকে তিন কোটি ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক টেটের যে-সব প্রার্থী ওই টাকা দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন শিক্ষকতা করছেন বলে চার্জশিটে জানিয়েছে ইডি।

চার্জশিটের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে নথিভুক্ত হয়েছে মানিকের স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্যের বয়ান। ইডি-র দাবি, শতরূপা তাঁদের জানিয়েছেন, বিয়ের পরে যৌথ পরিবারের সংসারে শ্বশুর ও বাপের বাড়ির আত্মীয়দের কাছ থেকে অর্থ ও উপহার ছাড়া তাঁর কোনও আয় ছিল না। মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় নামে মানিকের এক আত্মীয়ের সঙ্গে তাঁর যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। কয়েক বার তাঁকে ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে নথিপত্রে সই করিয়ে নিয়েছিলেন মৃত্যুঞ্জয়। কিন্তু অ্যাকাউন্টের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। বছর পাঁচেক আগে ওই যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলার কয়েক মাস পরেই মৃত্যুঞ্জয় মারা যান। তার পর থেকে মানিকই ওই অ্যাকাউন্টের দেখাশোনা করতেন বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

চার্জশিটে উঠে এসেছে কলকাতার দক্ষিণ শহরতলিতে থাকা মানিকের বিভিন্ন আত্মীয়ের বয়ানও। তাঁদের বক্তব্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাদা কাগজে এবং কিছু ব্যাঙ্কের নথিপত্রে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কার নামে কী ধরনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, সেই বিষয়ে কখনওই তাঁদের কিছু জানানো হয়নি।

Partha Chatterjee Manik Bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy