E-Paper

পুলিশ হেফাজতে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কেষ্টর কথা অস্ত্র ইডির

শক্তিগড়ের ওই বৈঠক নিয়ে সমালোচনায় মুখর বিরোধীরা। বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা ও আইনজীবীরাও। তুলেছেন নিরাপত্তায় গাফিলতির কথা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩ ০৫:৩৪
Picture of Anubrata Mondal and his associates.

শক্তিগড়ের দোকানে খাওয়ার সময় অনুব্রতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠেরা। ফাইল চিত্র

গত কয়েক মাস জেলে থাকলেও স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের উপরে অনুব্রত মণ্ডলের ‘নিয়ন্ত্রণ অটুট রয়েছে’ বলে আদালতে সওয়াল করতে চায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পুলিশ হেফাজতে আসানসোল থেকে কলকাতায় আসার পথে মঙ্গলবার শক্তিগড়ের হোটেলে দুই অনুগতের সঙ্গে অনুব্রতের বৈঠকের উল্লেখ করেই আগামী দিনে আদালতে ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্ব তুলে ধরতে চায় তারা।

শক্তিগড়ের ওই বৈঠক নিয়ে সমালোচনায় মুখর বিরোধীরা। বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা ও আইনজীবীরাও। তুলেছেন নিরাপত্তায় গাফিলতির কথা। যে পুলিশের ঘেরাটোপে সেই অভিযোগ উঠেছে, তার দায়িত্বে রয়েছেন আসানসোল ও দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তম। মঙ্গলবার তিনি বলেছিলেন, ‘‘শক্তিগড়ে অনুব্রত মণ্ডলের প্রাতরাশ ও শৌচাগারে যাওয়ার জন্য কনভয় দাঁড়িয়েছিল। সেখানে আর কিছু ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। খোঁজ নেওয়া হবে।’’ আর বুধবার তিনি শুধু বলেছেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’’

মঙ্গলবার কলকাতায় আনার পথে শক্তিগড়ে একটি হোটেলে অনুব্রতকে প্রাতরাশ করাতে নিয়ে যায় আসানসোলের পুলিশ। দেখা যায়, এমন একটি টেবিলে অনুব্রতকে বসানো হয়, যেখানে ইতিমধ্যেই তিন জন বসে। অনুব্রত সেখানে বসে দু’জনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। যাঁদের এক জন অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা কৃপাময় ঘোষ। অন্য জন অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যার গাড়ির চালক তুফান মির্ধা। প্রায় আধ ঘণ্টা তাঁদের সঙ্গে নিচু স্বরে কথা বলতে দেখা যায় অনুব্রতকে। ডালপুরি, তরকারি, ছোলার ডাল, ল্যাংচা ও রাজভোগ খান অনুব্রত-সহ বাকিরা। সূত্রের খবর, চার জনের খাবারের বিল হয় প্রায় ৯৫০ টাকা। সেই বিল মিটিয়ে দেন ওই তিন জনের মধ্যে একজন। এই সব ঘটনাই নিজস্ব সূত্রে জানতে পেরেছে ইডি।

ইডি-র বক্তব্য, তাদের হাতে অনুব্রতকে হস্তান্তরের আগে সমস্ত দায়িত্ব ছিল পুলিশের। আর ওই হোটেলে অনুব্রতের থেকে পাঁচ ফুট দূরেই পুলিশ বসেছিল। তাদের প্রশ্ন, তা হলে কোন আইনে বাইরের লোকদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হল পুলিশ হেফাজতে থাকা অনুব্রতকে? তা হলে কি ‘প্রভাবশালী’ অনুব্রতের নির্দেশেই পুলিশের তরফে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি? ইডি-র আরও প্রশ্ন, হেফাজতে থাকা ব্যক্তির খাবারের দাম কী করে বহিরাগত কেউ মিটিয়ে দেন? কতটা প্রভাবশালী হলে আইন-কানুনকে এ ভাবে বুড়ো আঙুল দেখানো যায়?

তদন্তকারীদের দাবি, হেফাজতে থাকাকালীনই এক ব্যক্তির যদি এত ক্ষমতা থাকে, তা হলে জামিন পেয়ে বাইরে থাকলে তিনি তো মামলার সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। ভবিষ্যতে অনুব্রতের জামিনের বিরোধিতার সময়ে এই ঘটনার উল্লেখ করে ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্ব তুলে ধরতে সিবিআই ও ইডি বড় হাতিয়ার পেল বলে মনে করছেন আইনজীবীদের অনেকে। গত অগস্টে সিবিআই অনুব্রতকে গ্রেফতার করে। তার পরে প্রতিটি শুনানিতেই অনুব্রতের জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই দাবি করে, অনুব্রত প্রবল প্রভাবশালী এবং প্রশাসন ও পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করে তিনি গরু পাচার চক্র চালিয়েছিলেন। এরপর গত নভেম্বরে ইডি গ্রেফতার করে অনুব্রতকে। কিন্তু, নানা আইনি কারণে নিজেদের হেফাজতে দিল্লি নিয়ে গিয়ে তাঁকে জেরার সুযোগ পাচ্ছিল না কেন্দ্রীয় ওই সংস্থা। অনেক টানাপড়েন শেষে সম্প্রতি আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক ও‌ কলকাতা হাই কোর্টের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়। দুই আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার আসানসোল পুলিশের সাহায্য নিয়ে অনুব্রতকে কলকাতায় নিয়ে আসে। ঠিক হয়েছিল, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন কোনও হাসপাতালের চিকিৎসকদের দিয়ে অনুব্রতের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে ‘ফিট’ সার্টিফিকেট-সহ অনুব্রতকে ইডি-র হাতে হস্তান্তর করবে তারা। তেমনই করা হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Anubrata Mondal Enforcement Directorate

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy