Advertisement
E-Paper

‘হুমকি তো তা হলে রাজার বাড়িই দিচ্ছে’! শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত না-থাকা রেজিস্ট্রারদের শো-কজ়?

রেজিস্ট্রারদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেখানেই অনুপস্থিত রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হতে পারে বলেও তিনি জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৪০
রাজ্যপালের বিশেষ নির্দেশের এসএমএস-এর প্রমাণ আছে, বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। (ডান দিকে)

রাজ্যপালের বিশেষ নির্দেশের এসএমএস-এর প্রমাণ আছে, বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। (ডান দিকে) —ফাইল চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারদের তলব করেছিল সরকার। সেই ডাক পেয়েও উপেক্ষা করেছেন ১৭ জন। অনুপস্থিত এই ১৭ জন রেজিস্ট্রারকে শুক্রবার শো-কজ়ের হুঁশিয়ারি দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তবে একইসঙ্গে তিনি জানালেন, এই গরহাজিরার ‘কজ়’ (কারণ) কী, তা তিনি জানেন। তিনি নিশ্চিত রাজভবনের ‘হুমকি’ পেয়েই সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন অনুপস্থিত রেজিস্ট্রারেরা।

শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রেজিস্ট্রারদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল বিকাশ ভবনে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুই ডেকে পাঠিয়েছিলেন ৩১ জন রেজিস্ট্রারকে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর তলব পেয়েও বিকাশ ভবনে আসেননি অধিকাংশ রেজিস্ট্রার। এ প্রসঙ্গে ব্রাত্যকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, ‘‘যারা আসেননি তাঁদের রাজভবন থেকে এসএমএস করে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে যে তাঁরা যেন এই বৈঠকে না যান। রাজভবন থেকে যে এই হুমকি এসেছে, তার প্রমাণও আছে।’’ বৃহস্পতিবারই একটি ভিডিয়ো বার্তায় রাজ্যের শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে উপাচার্যদের হুমকি দিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ করেছিলেন। শুক্রবার সেই প্রসঙ্গই টেনে এনে রাজ্যপালকে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে হুমকির বাতাবরণ তৈরি করছে কে? হাড় হিম করার ঠান্ডা সন্ত্রাস তৈরি করছে কে? কে তবে ভয় দেখাচ্ছে? রাজার বাড়ি না বিকাশ ভবন?’’

রেজিস্ট্রারদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। সেখানেই অনুপস্থিত রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হতে পারে বলেও তিনি জানান। ব্রাত্য বলেন, ‘‘১২ রেজিস্ট্রার বৈঠকে এসেছেন। যাঁরা এসেছেন, তারা মনে করেছেন এই বৈঠকে যদি না আসনে তাহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। কারণ এই সরকার উচ্চশিক্ষার জন্য অনেককিছু করেছে। তবে যাঁরা আসেননি তাঁদেরকে শো-কজ় করা হতে পারে।’’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে গত কিছু দিন ধরেই সরকারের সঙ্গে রাজভবনের টানাপড়েন চলছে। রাজভবনের তরফে আলাদা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতি নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এমনকি, রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পছন্দমতো অস্থায়ী উপাচার্যও নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সি ভি আনন্দ বোস। এই নিয়েই শিক্ষা দফতরের সঙ্গে মনমালিন্য চলছে রাজভবনের। শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যপাল তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা না করেই একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন। যা আদতে বেআইনি। এই পরিস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার নিজের কাজের ব্যাখ্যা দিয়ে একটি ভিডিয়ো বার্তা দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তাতে তিনি এই অভিযোগও করেন যে, শিক্ষা দফতরের হুমকিতে ভয় পেয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন পাঁচ জন উপাচার্য। শুক্রবার রাজ্যপালের সেই অভিযোগেরই পাল্টা জবাব দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। তিনি বলেছেন, ‘‘রাজ্যপালের ওই এসএমএস হুমকির চাপ এতটাই যে, গতকাল একজন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।’’

তবে ব্রাত্য এখানেই থামেননি। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন এই উপাচার্যরা। সিপিএম আমল হলে ১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তোষ ভট্টাচার্যের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো। বাড়ি থেকে উপচার্যদের কাজ করতে হতো। মুখ্যমন্ত্রী ধৈর্য দেখাচ্ছেন কিন্তু এই ধৈর্যেরও একটা শেষ আছে।’’

ব্রাত্য জানিয়েছেন, রেজিস্ট্রারদের যে এসএমএস করে বিকাশ ভবনের বৈঠকে আসতে বারণ করা হয়েছে, তা জানিয়েছেন রাজ্যপালেরই নিয়োগ করা উপাচার্যরা। এ প্রসঙ্গে ব্রাত্য বলেন, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল রাজ্যপাল আলাউদ্দিন খিলজির মতো আচরণ করেছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আদতে তিনি তুঘলকি শাসন চালাচ্ছেন। রাজ্যপাল বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শিক্ষামন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতাদের জায়গা নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আচার্যের মৃগয়াভূমিও নয়।’’ ব্রাত্যের কথায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শিক্ষাবিদ আর শিক্ষার্থীদের জন্য। তাঁদের কথাই ভাবা উচিত।

Bratya Basu C V Ananda Bose
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy