Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কেন্দ্রীয় অনলাইন নয়, ব্যাঙ্কে আস্থা শিক্ষামন্ত্রীর

বছরের পর বছর কলেজে ভর্তিতে টাকা লেনদেনের অভিযোগ এ রাজ্যে উঠছে। আর তাতে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনই যুক্ত বলে অভিযোগ উঠছে। বিরোধীদের যুক্তি, কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন পদ্ধতি চালু না করলে এই টাকার খেলা থামানো যাবে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরেই শিক্ষামন্ত্রীর অনাস্থা।

রাজ্য সরকার ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাতে  আগ্রহী।— ফাইল চিত্র।

রাজ্য সরকার ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাতে আগ্রহী।— ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০৪:৪৯
Share: Save:

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলিতে টাকা নিয়ে ভর্তির ঢালাও অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার পথে নেমেছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী জয়া দত্ত। হাতেনাতে প্রমাণও পেলেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিকেলে জানিয়ে দিলেন, এই দুর্নীতি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করতে তাঁরা চান না। কেননা তাঁর মতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিই টাকাপয়সা নিয়ে গন্ডগোলের বড় জায়গা। বদলে তিনি বরং ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ভর্তি চালু করতে আগ্রহী।

বছরের পর বছর কলেজে ভর্তিতে টাকা লেনদেনের অভিযোগ এ রাজ্যে উঠছে। আর তাতে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনই যুক্ত বলে অভিযোগ উঠছে। বিরোধীদের যুক্তি, কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন পদ্ধতি চালু না করলে এই টাকার খেলা থামানো যাবে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরেই শিক্ষামন্ত্রীর অনাস্থা। এদিন তিনি বলেন, ‘‘আরে সব থেকে বেশি গোলমাল হয় তো বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর তো সব থেকে বেশি গোলমালের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেটা আস্তে আস্তে আমরা ঠিক করছি।’’

২০১৪ সালে ব্রাত্য বসু শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে রাজ্য সরকার পিছিয়ে আসে। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরেই পার্থবাবু কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ভর্তি প্রস্তাব বাতিল করে কলেজভিত্তিক অনলাইন ভর্তির দিকে হাঁটেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া আটকানো যায়নি। বহু ক্ষেত্রে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া পড়ুয়ারা শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের বাধায় ভর্তির জন্য ঢুকতে পারছে না। শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি এদিন মেনে নেন।

পার্থবাবু নিজেই বলেন, ‘‘আমি অভিযোগ পেয়েছি মেধাতালিকায় নাম থাকলেও তাকে কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তা হলে পরের বার থেকে ভাবতে হবে। মেধা তালিকায় নাম বেরোলে কলেজকেই দায়িত্ব নিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, কলেজ যদি না পারে তাহলে ব্যাঙ্কের কাছেই মেধাতালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখানেই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে। প্রসঙ্গত, রাজ্যের বহু কলেজে ভর্তির টাকা ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার নিয়ম এখনই চালু রয়েছে।

এদিনও শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মেধার ভিত্তিতেই ছাত্র ভর্তি হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত ভর্তি হলে সেই সব পড়ুয়ার রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে। তবে তিনি দাবি করেন, রাজ্যে ৫০৪-টির মধ্যে ৬টি কলেজে টাকার বিনিময়ে ভর্তির অভিযোগ এসেছে। তাঁর মন্তব্য, আগে যে চিত্র ১০০-১৫০টি কলেজে দেখা যেত, এখন সেটা ছ’টিতে নেমেছে। সরকার সেই কৃতিত্বটুকু দাবি করতে পারে। টিএমসিপি সভানেত্রী এ দিন জানিয়েছেন, টাকা নিয়ে ভর্তিতে মূলত জড়িত বহিরাগতরা। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘বহিরাগত নিয়ে আমি কী করব? বহিরাগতরা তো ডাকাতিও করে। প্রশাসনকে জানালে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’ কোনও শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, ছাত্র অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ এলে সরকার বিষয়টি মেনে নেবে না বলেই তাঁর আশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE