Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নেই মাঠ, নেই খেলা, উদ্বেগে শিক্ষাবিদেরা

শিশুদের খেলার দাবি বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। হৈ-হট্টগোলে পারেননি। শুক্রবার তাঁর স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘খেলা-প্রিয়’ দেশ থেকে ভারতকে ‘খেলেয়োড় দেশে’ পরিণত হতে হবে— এটাই চান লিটল মাস্টার।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

শিশুদের খেলার দাবি বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। হৈ-হট্টগোলে পারেননি। শুক্রবার তাঁর স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘খেলা-প্রিয়’ দেশ থেকে ভারতকে ‘খেলেয়োড় দেশে’ পরিণত হতে হবে— এটাই চান লিটল মাস্টার। ‘‘যে ভাবে মা-বাবারা সন্তানদের জিজ্ঞাসা করেন, তুমি খেয়েছ কি না, ঘুমিয়েছ কি না, সে ভাবেই যেন একদিন জিজ্ঞেস করেন, তুমি আজ খেলেছ তো?’’ বলেছেন সচিন।

যে অতৃপ্তি নিয়ে ক্রিকেট-ঈশ্বর তাঁর ভাবনার কথা জানিয়েছেন, সেই ছবিটাই উঠে এল এ রাজ্যের শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা বিষয়ে সচেতন ব্যক্তিত্বদের কথায়। আইসিএসই বোর্ডের অধীনস্থ রামমোহন মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাসের মতে, ‘‘টিউশন সর্বস্ব যুগে খেলাধুলা ফিরিয়ে আনা খুবই প্রয়োজন। গেম ক্লাসে দেখেছি ৪০ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৩০ জন খেলছে। কিন্তু ১০ জন খেলছে না। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, হয় পড়ুয়া নিজেই খেলতে চায় না, বা অভিভাবক চান না সন্তান স্কুলে খেলাধুলা করুক।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, স্কুলের পরেই হয়তো সেই পড়ুয়া ছুটবে কোচিং ক্লাসে। তাই অভিভাবক চান না বাচ্চা আগেই ক্লান্ত হয়ে পড়ুক।

সচিন দেশে যথেষ্ট সংখ্যক খেলার মাঠের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী দেশের প্রতিটি স্কুলে খেলার মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক স্কুলেরই মাঠ নেই। থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। সম্প্রতি রাজ্যের সর্বশিক্ষা মিশনের সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে এই ছবিটা।

যেমন, কলেজ স্ট্রিটে সরকারি স্কুল হিন্দুতেও বড় খেলার মাঠ নেই। প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্ত জানালেন, স্কুলে যতটুকু ফাঁকা জায়গা রয়েছে সেখানে শরীর-চর্চা, যোগ ব্যায়াম শেখানোর চেষ্টা করা হয়। তিনিও মনে করেন, ‘‘বাচ্চার সুষম বিকাশে খেলাধুলোরও প্রয়োজন রয়েছে।’’

আইসিএসই এবং সিবিএসই বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার অন্যতম শর্তই হল স্কুল-সংলগ্ন খেলার মাঠ থাকা। অভিনব ভারতী স্কুল সিবিএসই বোর্ডের অধীনস্থ। অধ্যক্ষা শ্রাবণী সামন্ত এ দিন জানালেন, তাঁদের স্কুলে বড় খেলার মাঠ নেই। কিন্তু যতটুকু রয়েছে, তা কাজে লাগানোর চেষ্টা হয়।

সচিনের প্রস্তাব, শিক্ষার অধিকার আইন সংশোধন করে খেলার অধিকারকে যুক্ত করা হোক। শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী এই দাবির সঙ্গে একমত। রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু অধিকার সংক্রান্ত সনদের ৩১ নম্বর ধারায় শিশুর খেলার অধিকারের কথা থাকলেও বাস্তব ছবি বড় করুণ। ফলে শিশুমনে আগ্রাসী মনোভাব বাড়ছে। এরা স্কুলে শুধু পড়াশোনা করে। বাড়ি ফিরে মোবাইল বা কম্পিউটরে গেমে ডুবে থাকে— বলছেন অনন্যা।

খেলাধুলোকে অন্য বিষয়ের সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন সচিন। অনন্যাদেবী বলেন, ‘‘সিলেবাস কমিটির সঙ্গে বৈঠকে আমরা স্কুলের উঁচু ক্লাসে খেলাধুলোকে আলাদা বিষয় হিসেবে গণ্য করার দাবি জানিয়েছি। এমনকী, কলেজ স্তরেও আলাদা বিষয় হিসেবে খেলাধুলোকে রাখা উচিত বলে মনে করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sport Play Playground Students Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE