নিজভূমে: কাশ্মীর থেকে ফিরে আসা শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার নয়াগ্রামে। নিজস্ব চিত্র
জমাটি অন্ধকার। চারপাশ নিঝুম। মালুম হচ্ছে ঠান্ডা। তখন রাত পৌনে তিনটে। বাস এসে পৌঁছল
নয়াগ্রাম মোড়ে। একে একে নেমে এলেন আট জন।
সোমবার গভীর রাতে ঘরে ফিরলেন কাশ্মীরে কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়া মুরারই ২ ব্লকের মিত্রপুর অঞ্চলের আট শ্রমিক। এঁদের মধ্যে নয়াগ্রামের ৬, দাঁতুড়া ও ভাগাইল গ্রামের ২ জন রয়েছেন। ওই রাতে ওঁদের নিতে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন পাইকর থানার ওসি নূর নবি, বিডিও (মুরারই ২) অভিতাভ বিশ্বাস আর পরিবারের কিছু লোক আর গ্রামের উৎসাহীরা। মঙ্গলবার সকালে কথা হচ্ছিল ওঁদের সঙ্গে। জানা গেল— জঙ্গিদের গুলিতে একেবারে লাগোয়া জেলা মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিকের খুনের খবর ওঁরা জেনে গিয়েছিলেন ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যেই। তখন সহায় হন মহাজন। এঁদের মাধ্যমেই কাশ্মীরে কাজে গিয়েছিলেন ওঁরা। সেই মহাজনদের মধ্যস্থতাতেই নয়াগ্রামের আট শ্রমিক দু’জন দু’জন করে চার কাশ্মীরি পরিবারের মধ্যে ভাগ হয়ে যান। এ ভাবে কাটে চার দিন। ওই সময়ে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ইতিমধ্যে এ রাজ্যের ডিজি কাশ্মীর পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার পরেই তৎপরতার শুরু। যোগাযোগ হয় সেনার সঙ্গেও। সেনার গাড়িতে শ্রীনগর হয়ে নেমে আসেন জম্বু। সোমবার তাঁরা নামেন চিৎপুর স্টেশনে। সেখান থেকে রাজ্যে সরকারের তত্ত্বাবধানে রাত তিনটে নাগাদ গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়।
আট শ্রমিকের সকলেই কাশ্মীরের বারামুলার কার্নিসপুরে কাজ করতেন। এঁদের কেউ আপেল বাগানে, কেউ ধান কাটা কিংবা মার্বেল বসানোর কাজ করতেন। সকালে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করে ৬৫০ টাকা উপার্জন হত। ওভারটাইমে ৯০ টাকা ঘণ্টা মিলত। দিনের শেষে সকলে কমবেশি হাজার টাকা রোজগার করতেন। আলি আসগরের কথায়, ‘‘ছেলে রেজাউলের এখন চার বছর বয়স। ব্রেন টিউমার রয়েছে। শরীরের নানা জায়গা কালো হয়ে বড়ো লোম বেরোচ্ছে। কলকাতায় নীলরতন মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করাচ্ছি। বছরে খরচ প্রায় লক্ষ টাকা। বাড়িতে কাজ করে এত টাকা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে কাশ্মীরে গিয়েছিলাম।’’
ইব্রাহিম শেখের কথায়, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। বাবার আর কাজ করার মতো অবস্থা নেই বলে সংসারের হাল ধরতে কাশ্মীরে গিয়েছিলাম। বেঁচে ফিরব ভাবতে পারিনি। এখনও ভয় লাগছে। আর যাব না। বাংলায় যে কাজ জুটবে তাই করব।’’ সামিউল বাসার জানালেন, ১০ বছর ধরে কাশ্মীরে কাজ করছেন। এমন পরিস্থিতি আগে দেখেননি। সামিউলের কথায়, ‘‘রাতে ভাল করে ঘুম হত না। কাশ্মীরে লোকেরাও ঘরে ফিরে যাওয়ার কথা বলতেন। সেই ভয়েই পালিয়ে এসেছি। আমরা রাজ্য সরকারে কাছে কাজ চেয়ে আবেদন করব।’’
বাড়ি ফেরার বন্দোবস্ত করার জন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই ওঁদের। কিন্তু, এখন পেট চলবে কী করে, জানা নেই কারও। মুরারইয়ের বিধায়ক আব্দুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা রাত দু’টোর সময় ওই শ্রমিকদের গ্রামে গিয়ে পোঁছে দিয়ে এসেছি। এঁদের জন্য কিছু করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy