E-Paper

ভোটারের অভিন্ন তথ্যভান্ডার তৈরির সিদ্ধান্ত কমিশনের

কমিশন-সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিহারের এসআইআরে প্রায় ৪৭ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছিল। তার আগে ওই প্রক্রিয়ার খসড়া তালিকায় বাদ গিয়েছিল প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:১২
জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্য রাজ্যগুলিতে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ শুরুর আগে গোটা দেশের জন্য ভোটারের অভিন্ন তথ্যভান্ডার তৈরির সিদ্ধান্ত নিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই তথ্যভান্ডার তৈরি হওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে আগে হয়ে যাওয়া এসআইআর-তালিকা অনুযায়ী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, এতে দেশের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও ভোটারের তথ্য পাবে কমিশন। কে ঠিকানা বদল করেছেন, কারা কর্মসূত্রে ভিন্ন জায়গায় ইত্যাদি। মৃতদের তথ্যও সেই তালিকা থেকে স্পষ্ট হয়ে যাবে। বিহার এসআইআর নিয়ে একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়েছিল কমিশন। পরিযায়ীদের অনেকের বাদ যাওয়া বা জীবিত ব্যক্তিদের মৃত বলেঘোষণা— ইত্যাদি নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়। তা থেকে শিক্ষা নিয়েই এই পদক্ষেপ।

কমিশন-সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিহারের এসআইআরে প্রায় ৪৭ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছিল। তার আগে ওই প্রক্রিয়ার খসড়া তালিকায় বাদ গিয়েছিল প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম। এ নিয়ে কমিশনকে পড়তে হয় বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে। জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। পরে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে আধার কার্ডকে পরিচয়পত্র হিসেবে মান্যতা দেয় কমিশন। তার পরেও সেখানে বাদ যান প্রায় ৩.৬৬ লক্ষ ভোটার। এর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিরোধীরা প্রামাণ্য নথি দেখাতে না পারলেও, পরিযায়ী শ্রমিক বা ভিন্‌ রাজ্যে কর্মরত বহু মানুষের বাদ যাওয়া প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। এমনকি, ওই এসআইআরে মৃত বলে ধরে নেওয়া অনেক ভোটারই পরে হাজির হয়ে জানিয়েছিলেন— তাঁরা জীবিত। যদিও পরে ২১ লক্ষ ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন।

বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বিহারের প্রশাসন কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ অবস্থানে থাকায় তেমন বিশৃঙ্খলা হয়নি। কিন্তু এ রাজ্যে এসআইআর নিয়ে এমনিতেই রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত। নাম বাদ যাওয়া নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং শাসকদল ইতিমধ্যে কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে। ফলেএ রাজ্যের মতো কেন্দ্রেরবিরোধী দল পরিচালিত রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে কমিশনকে বাড়তি সতর্ক থাকতে হচ্ছে।

কী হবে জাতীয় স্তরের অভিন্ন তথ্যভাণ্ডারে? রাজ্যে শেষ এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। সূত্রের খবর, তার পরে প্রকাশিত তালিকা এবং তার ভিত্তিতে প্রস্তুত ২০০৩ সালে খসড়া ভোটার তালিকা ওই তথ্যভান্ডারের অন্তর্ভুক্ত হবে। একই ভাবে অন্য রাজ্যগুলিতে যবে শেষ এসআইআর হয়েছিল, তার পরে প্রস্তুত তালিকাও অন্তর্ভুক্ত হবে সেই তথ্যভান্ডারে। সর্বভারতীয় স্তরে ভোটারদের তথ্য খুঁজে বার করতে ‘সার্চ’ করার সুবিধাও থাকবে।অর্থাৎ, ২০০২ সালে এ রাজ্যের তালিকায় থাকা কোনও ব্যক্তি হয়তো কর্মসূত্রে রয়েছেন দিল্লি বা অন্য কোনও রাজ্যে। ন্যূনতম তথ্য খুঁজে পাওয়া গেলে সেই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব।

আবার পরিযায়ীদের অনেকে ভিন্‌ রাজ্যে কর্মরত। এমনও দেখা গিয়েছে, এ রাজ্যে তেমন কারও নাম কোনও এলাকার ভোটার তালিকায় যেমন রয়েছে, তেমনই কর্মসূত্রে থাকা রাজ্যেও ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে কোন এলাকার ভোটার তিনি থাকতে চান, কমিশনের পক্ষে সেই প্রস্তাব সংশ্লিষ্টকে দিয়ে একটি জায়গা থেকে নাম বাদদিতে সুবিধা হবে। আবার ২০০২ সালের এসআইআরে এ রাজ্যের কারও নাম না থাকলেও, তাঁর মা-বাবার নাম দেশের যেকোনও প্রান্তে রয়েছে কি না, তাজানা সম্ভব। আবার তাঁদের কারওমৃত্যু হয়ে থাকলে সেটাও বোঝা যাবে। ফলে সেই ধরনের ভোটারদের নতুন করে যাচাইয়ের আওতায় থাকতেহবে না।

এক কর্তার কথায়, ‘‘এর প্রস্তুতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। শীঘ্রই তা হয়তো কার্যকর হবে। বৈবাহিক সূত্রেও কারও ঠিকানা বদল হলে অনেক সময়ে পুরনো এবং নতুন ঠিকানায় সংশ্লিষ্টের নাম থেকে যায়। নতুন ব্যবস্থায় তা বোঝা সুবিধাজনক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Election Commission of India SIR

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy