শুধু দেহের দীর্ঘ আয়ুষ্কাল কোন স্রষ্টারই বা কাঙ্ক্ষিত? তিনি চান তাঁর সৃষ্টির দীর্ঘ আয়ু, আর তার ভিতর দিয়েই তিনি অন্য এক বেঁচে থাকাকে খুঁজে নেন। নীরেন্দ্রনাথ চুরানব্বই বছর বয়সে প্রয়াত হওয়ার অব্যবহিত আগেও সৃষ্টিশীল ছিলেন। মাত্রই কিছু দিন আগে তাঁর দীর্ঘ এক অনবদ্য কবিতা প্রকাশ পেয়েছে, যা পাঠ করে বিস্ময় জেগেছিল বয়স এখনও তাঁকে ছুঁতে পারেনি দেখে।
আমি বরাবর নীরেনদার কবিতার ভক্ত। কোনও দিনই তিনি এলায়িত কাব্যভাষার আমদানি করেননি। ছন্দ ও শব্দ ছিল তাঁর ক্রীতদাস। ছোটদের ছড়ায়, বড়দের কবিতায় তিনি দু’রকম নীরেন্দ্রনাথ। দুই ধারার মাঝখানে তিনি আগল তুলতে পারতেন, যা মাত্র কেউ কেউ পারে। মনে আছে শিবরাম চক্রবর্তীর একটি কার্টুন ছবি— একটা লোকের নাকের ডগায় এক পাখি বসে আছে। এই ছবিকে কেন্দ্র করে কয়েক জনকে ছড়া লিখতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ডাকসাইটেরাই লিখেছিলেন। কিন্তু নীরেনদার ছড়াটা আজও ভুলতে পারি না, ছন্দের অবাক চালের জন্য। ক’টা লাইন এখনও মনে আছে৷ ‘‘রাম কি কিরিয়া বাবা/ এ কৌন চিড়িয়া বাবা/ আজই/ দুখিয়া দিনে কি রেতে/ মুলুকমে চলে যেতে রাজি।’’
যখন নীরেনদাকে প্রথম দেখি তখনই ভারী সম্ভ্রম হয়েছিল। গড়পড়তা বাঙালির চেয়ে একমাথা উঁচু। ছিপছিপে, ক্ষুরধার মুখশ্রী আর ভাবাশ্রয়ী চোখের জন্য সব সময়েই দৃষ্টিগোচর হতেন। হাঁটতেন দ্রুত, চটি পরা পায়ে। পরনে সর্বদাই ধুতি পাঞ্জাবি। অলস সময় কাটাতে তাঁকে কখনও দেখা যেত না। তখন তিনি ‘আনন্দমেলা’র সম্পাদক। আর কে না জানে, তাঁর সম্পাদনাকালে পত্রিকাটির বড় সুসময় গেছে!