ফাইল চিত্র।
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বেরিয়ে আসছে ফ্ল্যাট থেকে। জনমানসে প্রশ্ন, ‘‘নগদে কত টাকা রাখা যায় বাড়িতে?’’
আয়কর দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘সে ভাবে দেখতে গেলে, যত টাকার আইনি নথি থাকবে, তত টাকাই রাখা সম্ভব।’’ ২০-২৫ কোটি টাকা? কর্তার দাবি, ‘‘এত টাকার সপক্ষে আইনি নথি থাকা মুশকিল।’’
কেন? কারণ, হিসেবে বলা হচ্ছে, ২০১৬ সালে নোটবন্দির পরে ১৯৬১ সালের আয়কর আইন সংশোধন করে ২৬৯ নম্বর (এসটি) ধারা যোগ করা হয়। যেখানে বলা হয় কোনও ধরনের সম্পত্তি কেনা-বেচার সময়ে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা নগদে লেনদেন করা যাবে। যার অর্থ, কারও বাড়িতে নগদ ১ কোটি টাকা থাকলে তাঁদের প্রায় ৫০টি আইনি লেনদেনের হিসাব দেখাতে হবে (যদি তাঁরা ওই অর্থ ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা হিসেবে দাবি করেন)। যার প্রতিটি লেনদেন থেকে ২ লক্ষ টাকা করে তিনি পেয়েছেন। আয়কর দফতরের মতে, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দু’টি ফ্ল্যাট থেকে যে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে, তা বৈধ প্রমাণ করতে প্রায় আড়াই হাজার আইনি লেনদেন দেখাতে হবে। যা কার্যত অসম্ভব। এক আয়কর কর্তার মতে, ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার লেনদেন হওয়া খুবই কষ্টকল্প। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা চাকরি করেন, স্বভাবতই তাঁরা এত টাকা বেতন পান না যে খরচের বাইরে এই অঙ্কের টাকা জমাতে পারবেন। পারলেও সেই টাকা নিশ্চয়ই নগদে বাড়িতে রাখবেন না।’’ আর ব্যবসায়িক লেনদেনের বাইরে এত বিপুল নগদের অন্য কোনও কারণ বা আইনি নথি দেখানোও অসম্ভব।
প্রশ্ন আরও আছে। ক’দিনে এত টাকা জড়ো হয়েছিল অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে? দু’হাজার টাকার একটি বান্ডিল মানে ২ লক্ষ টাকা। ইডি-র দাবি, একটা মাঝারি সুটকেসে প্রায় ৫০টি বান্ডিল ধরে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২৮ কোটি টাকা কমপক্ষে ২৮ বার আনতে হবে। তা ছাড়া অর্পিতার ফ্ল্যাটে ২ হাজার টাকা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ৫০০ টাকার নোটও পাওয়া গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে বান্ডিলের সংখ্যা আরও বেশি থাকারই কথা। ওই আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, যে টাকা ৮টি বড় ট্রাঙ্কে করে নিয়ে যেতে হয়েছে, সেই টাকা কতগুলো সুটকেসে ফ্ল্যাটে নিয়ে আসতে হয়েছে?
তদন্তকারীদের দাবি, বিভিন্ন লোক যদি বেলঘরিয়ার আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাটে সুটকেস নিয়ে পর পর ঢুকে থাকে, তা হলে সন্দেহ হওয়ার কথা ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদেরই। কিন্তু, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তাঁরা শুধু জানিয়েছিলেন, কখনও কখনও গভীর রাতে অর্পিতা নিজে গাড়ি চালিয়ে আসতেন। ইডি-র তদন্তকারীদের মতে, সেই সময়ে ছোট সুটকেসে অর্পিতা যদি টাকা নিয়েও এসে থাকেন, তার পরিমাণ এত হওয়ার কথা নয়।
এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ই-কমার্স সংস্থার কর্মীরা পার্সেল ডেলিভারি করেন। সেটা প্রতিবেশিদের চোখ সওয়া হয়ে গিয়েছে। তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন না। তদন্তকারীদের একাংশের প্রশ্ন, অর্পিতার ফ্ল্যাটে টাকা পৌঁছে দিতে কি সে রকম কোনও উপায় বার করা হয়েছিল? যে রকম পোশাক পরে ওই ডেলিভারি বয়-রা বাড়িতে পার্সেল পৌঁছে দেন, তেমন পোশাক পরিয়ে ‘ঘনিষ্ঠ’-দের দিয়ে অর্পিতার ফ্ল্যাটে কি তবে টাকা ভর্তি বাক্স পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল? এই সম্ভাবনা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
৫ নম্বর ব্লকের ৮এ ফ্ল্যাটে, যেখান থেকে প্রায় ২৮ কোটি নগদ টাকা পাওয়া গিয়েছে, সেখানে অর্পিতাকে ২৮ মে শেষ বার দেখা গিয়েছিল বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। অথচ, বেলঘরিয়ার আবাসনের রেজিস্টার ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, ৩০ মে দুপুরে ওই ফ্ল্যাটে একটি খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থা প্যাকেট ডেলিভারি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ফ্ল্যাটে যদি কেউ না-ই থাকেন, কার জন্য খাবার এল? সেই ডেলিভারি বয়কে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মনে নেই, কোথা থেকে খাবার এনেছিলাম।’’ পরে বলেন, সম্ভবত কোনও মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি ডেলিভারি হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy