এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় কারচুপি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধীকরণ দফতরে (এফআরআরও) আগেই নড়াচড়া শুরু হয়েছে। বেআইনি আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি তদন্তের সূত্র ধরে এ বার ইডিও জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল।
সূত্রের দাবি, সম্প্রতি এ দেশের ভোটার কার্ড থাকা এক পাকিস্তানি ব্যক্তিকে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে গ্রেফতার করে ইডি। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও একাধিক ব্যক্তির খোঁজ মিলেছে, যারা আবার বাংলাদেশি। তারা সংগঠিত ভাবে ভোটার, আধার বা রেশন কার্ড করিয়ে দিত বলেও তদন্তকারী এবং কমিশন আধিকারিকদের একাংশের সন্দেহ। ঠিক কোন কোন নথির ভিত্তিতে আবেদন করে কাদের মাধ্যমে ওই বিদেশিরা অনায়াসে এ দেশের ভোটার কার্ড পেতে সক্ষম হচ্ছেন, তা কমিশনের কাছে জানতেও চেয়েছে ইডি। ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে আসা কিছু গোলমেলে আবেদন চিহ্নিত হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। সূত্রটির দাবি, ২০১৮-১৯ সালে সব থেকে বেশি ছিল এমন আবেদন। এ বিষয়ে ইডিকে জানিয়েওছে কমিশন। সন্দেহজনক বেশ কিছু আবেদনের বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
কমিশনের অভিজ্ঞ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ১৮-২৫ বছরের মধ্যে নতুন ভোটার হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ততটা সন্দেহের জন্ম দেয় না। কিন্তু বয়স্কেরা হঠাৎ ভোটার কার্ড পেতে আবেদন করলে সন্দেহ হওয়া উচিত। কী ভাবে তাঁরা ভোটার কার্ড পেতে আবশ্যক নথি জোগাড় করলেন তা তদন্ত সাপেক্ষ বলে মনে করা হচ্ছে। এই ধরনের আবেদনের ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদানকারী আধিকারিকের তরফে আবেদনকারীকে সামনে ডেকে শুনানির পরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। এই পদ্ধতি কতটা যথাযথ ভাবে মেনে চলা হয়, তা-ও জানতে চাইছে ইডি।
আবার এ প্রসঙ্গে এক জেলা-কর্তা বলছেন, “নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তি বিধি ভেঙে ভোটার কার্ড মঞ্জুর করলে তা অপরাধ নিশ্চয়ই। কিন্তু আবেদনকারী ভুয়ো নথিপত্র কোথা থেকে সংগ্রহ করছেন, তা খতিয়ে দেখা আগে দরকার। নথি দেওয়ার কাজ নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকেরা করেন না।”
এমনিতে ভোটার কার্ড পেতে জন্মের প্রমাণপত্র, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ছাড়াও আবেদনকারীর মা-বাবা এ দেশের নাগরিক কি না দেখা হয়। মা-বাবা না থাকলে অন্য নিকটাত্মীয়ের প্রমাণ রাখতে হয় আবেদনকারীকে। থাকতে হয় স্কুল-শংসাপত্রও। প্রাথমিক ভাবে বুথ লেভেল অফিসারেরা (বিএলও) এলাকায় গিয়ে আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাই করেন। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও— সাধারণত এসডিও, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট) বা এইআরও (সাধারণত, বিডিও বা যুগ্ম বিডিও) আবেদনকারীর আবেদন মঞ্জুর বা বাতিল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শুনানি করাই রীতি।
জেলা-কর্তাদের অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নথি দেখেই তাঁরা কারও ভোটার কার্ডের আবেদন মঞ্জুর করে থাকেন। কিন্তু স্থানীয় স্তরে জনপ্রতিনিধি বা আধিকারিকেরা কী দেখে শংসাপত্র বা নথি দিচ্ছেন, তা যাচাই করাও জরুরি। ইতিমধ্যেই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-সহ সেই দফতরের কর্তারা জেলাশাসকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানেই তাঁরা প্রত্যেকের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কারও কোনও গাফিলতি প্রমাণিত হলে কমিশনের নির্দিষ্ট আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতেপিছপা হবেন না উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তাতে তিন বছরের জেলও হতে পারে। আবার বিধি মেনে বিএলও নিয়োগ করা না হলেও, ইআরও-রা ছাড় পাবেন না বলে মনে করিয়েদেওয়া হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)