পর্যাপ্ত সংখ্যায় ডাক্তার নেই। তা হলে দিকে দিকে হাসপাতাল খুলে কী লাভ, রাজ্যে এই প্রশ্ন দীর্ঘদিনের।
একই ভাবে প্রশ্ন জোরদার হচ্ছে, সরকারি স্কুল বাঁচাতে বাংলার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েও যথেষ্ট সংখ্যক দক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না কেন?
ইংরেজির চাহিদা বৃদ্ধির দিকে চোখ রেখে রাজ্যে ইংরেজি মাধ্যমের নতুন স্কুল খোলার কথা ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সরকারি স্কুল বাঁচাতে বাংলার সমান্তরালে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালু করার উদ্যোগ চলছে। কিন্তু গত আড়াই বছরে যে-সব সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুল ইংরেজিতে পাঠ শুরু করার অনুমোদন পেয়েছে, তাদের অনেকেরই ওই মাধ্যমে পড়ানোর উপযুক্ত শিক্ষক নেই। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগে সরকারের তেমন উদ্যোগও চোখে পড়ছে না।
এই অবস্থায় সরকারি স্কুল বাঁচানোর নতুন দাওয়াই কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদেরা। স্কুলশিক্ষা দফতরের খবর, অনেক জায়গায় উচ্চ মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্তরেও বাংলা মাধ্যমের শিক্ষকদের দিয়েই ইংরেজি মাধ্যমের বিজ্ঞান বিষয় পড়াতে হচ্ছে। তাতে পঠনপাঠনের মান যে যথাযথ থাকছে না, সেই বিষয়ে স্কুলশিক্ষা দফতরও অবহিত। তা হলে উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন শিক্ষাবিদদের।
‘‘খাতায়-কলমে ইংরেজি মাধ্যম চললেও কোথাও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। উচ্চ মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্তরে ইংরেজিতে বিজ্ঞানের বিষয় পড়ানোর জন্য দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার,’’ বলছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু।
স্কুলশিক্ষা দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যে আপাতত চালু আছে ১১১টি সরকারি স্কুল। তার মধ্যে ৪৩টি উচ্চ মাধ্যমিক (পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) স্কুলে ইংরেজি মাধ্যম চালু হয়েছে। ১৮টি প্রাথমিক (প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি) স্কুলকে ইংরেজি মাধ্যমে রূপান্তরিত করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু স্কুলশিক্ষা দফতরের নিজস্ব সমীক্ষাই বলছে, ওই সব স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ফলে সেগুলি খুঁড়িয়ে চলছে। অধিকাংশ স্কুলে যথেষ্ট সংখ্যায় শিক্ষকও নেই।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তার হিসেব, ৫৩টি প্রাথমিক স্কুলে উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে ইংরেজি মাধ্যম চালু করা যায়নি। আড়াই বছর আগে তৎকালীন স্টাফ সিলেকশন কমিশনের কাছে শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। সেই কমিশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন বিষয়টি দেখার কথা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের। সেখানে বারবার খোঁজখবর নিয়েও সুরাহা হয়নি।
সরকার পোষিত স্কুলগুলিরও একই দশা বলে জানাচ্ছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা। তা হলে ইংরেজি মাধ্যমের নতুন স্কুল খোলার যুক্তি কী, সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্কুলশিক্ষা দফতরেরই অনেক কর্তা।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার মান কতটা উন্নত হবে, শিক্ষাবিদেরাও তা নিয়ে চিন্তিত। ‘‘যে-সব স্কুল চালু রয়েছে, সেখানে শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার। নইলে কাজের কাজ কিছু হবে না,’’ বলছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় মনে করেন, শিক্ষক নিয়োগ না-করে যে-ভাবে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল গড়া হচ্ছে, তাতে শিক্ষার মান বাড়তে পারে না।
এই বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বারবার ফোন করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। এসএমএসেরও জবাব দেননি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy