Advertisement
E-Paper

Damodar Barrage: জল ছাড়ার নয়া পথ সন্ধানেরই পক্ষে সওয়াল

ভূগোলবিদেরা জানিয়েছেন, ঔপনিবেশিক আমলে দামোদরকে ‘বাংলার দুঃখ’ বলে দেগে দেওয়া হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৩১
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

জল ছাড়াকে ঘিরে দামোদর উপত্যকা নিগম (ডিভিসি) এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ধারাবাহিক চাপান-উতোরের মধ্যে বঙ্গবাসীর ফি-বছরের দুর্ভোগের শেষ দেখা যাচ্ছে না। এই আবহে বঙ্গের দামোদর উপত্যকায় বাঁধ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আদৌ সময়োপযোগী কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেক পরিবেশবিজ্ঞানী ও ভূগোলবিদ। তাঁদের বক্তব্য, অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে জলাধার থেকে জল ছাড়তেই হবে। কিন্তু সেই জল ছাড়ার জন্য যে নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত নয়। যে ভাবে জলবায়ু বদলাচ্ছে এবং যে ভাবে বদলে যাচ্ছে বৃষ্টির চরিত্র, তাতে নতুন করে না ভাবলে অদূর ভবিষ্যতে বঙ্গে বছর-বছর এমন বিপর্যয় দেখা দেবে বলেই আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

দামোদরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার প্রবণতা আজকের নয়। ভূগোলবিদেরা জানিয়েছেন, ঔপনিবেশিক আমলে দামোদরকে ‘বাংলার দুঃখ’ বলে দেগে দেওয়া হয়েছিল। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ব্রিটিশেরা নিজেদের রাজস্বের ক্ষতি আটকাতে বন্যা রোধের নামে দামোদরের পাড় বেঁধে দেয়। নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের সদ্য-প্রকাশিত দুই বাংলার নদীকথা গ্রন্থে বলা হয়েছে, এই পাড় বেঁধে দেওয়ার ফলে গাঙুড়, বেহুলা, কানা দামোদরের মতো সাতটি শাখানদী মূল দামোদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার পরিণামে দামোদরের রোষে পড়ে হুগলির খানাকুল, তারকেশ্বরের মতো এলাকা। বন্যার জল নতুন পথ খুঁজে নিতে মুণ্ডেশ্বরী নদী তৈরি করে নেয়।

স্বাধীনতার পরেও ঔপনিবেশিক ভাবনা মাথায় রেখেই তৈরি হয় ডিভিসি। কল্যাণবাবু দেখিয়েছেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কেমন গোলমেলে পদ্ধতিতে ডিভিসি-র সূচনা এবং কী ভাবে উচ্চ অববাহিকায় চারটি জলাধার নির্মাণ করলেও বিরাট বড় একটি অংশ বন্যাপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ ব্যবহারের পরে জলাধারে পলি জমে জলধারণের ক্ষমতা কমেছে।

অনেকে বলছেন, বর্ষার চরিত্রে বদল দেখা যাচ্ছে। মোট বৃষ্টিপাত না বাড়লেও এক দফায় ভারী বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। এ বছর দক্ষিণবঙ্গ স্বাভাবিকের থেকে ৩১ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, জলবায়ু বদল এবং ভারী বর্ষণের আধিক্যের কথা মাথায় রেখে বন্যা নিয়ন্ত্রণে নতুন পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন আছে কি?

কল্যাণবাবুর মতে, ডিভিসি ৩০ হাজার বা ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার হিসেব দেয়। কিউসেক-এর অর্থ, এক সেকেন্ডে কত কিউবিক ফিট বা ঘনফুট জল ছাড়া হয়। কিন্তু কত ক্ষণ ধরে জল ছাড়া হচ্ছে, তার সামগ্রিক হিসেব দরকার। কত জল ছাড়া হলে তা কোন কোন এলাকায় কোন সময়ে পৌঁছবে এবং সামগ্রিক ভাবে জলস্তর কতটা বাড়বে, তারও নির্দিষ্ট হিসেব কষে পূর্বাভাস দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

জল ছাড়ার ক্ষেত্রে ডিভিসি-রও পাল্টা যুক্তি আছে। তাদের বক্তব্য, ১৯৫০ সালে জলাধার তৈরির সময় ঠিক হয়েছিল, আড়াই লক্ষ কিউসেক পর্যন্ত জল ছাড়তে পারবে ডিভিসি। কিন্তু নদী সংলগ্ন এলাকায় বসতি গড়ে ওঠায় দেড় লক্ষ কিউসেকের বেশি জল ছাড়লেই বন্যা হচ্ছে। ডিভিসি-র খবর, এ বার সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাইথন ও পাঞ্চেতে প্রায় ১৬ লক্ষ একর ফুট জল ঢুকেছে। জল ছাড়া হয়েছে তিন লক্ষ একর ফুট। জমি-সমস্যা, কয়লার খনি থাকায় ওই দুই জলাধারের ধারণক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব নয়।

ডিভিসি-র জলাধারে পলি জমার বিষয়টি নিয়েও নানা প্রশ্ন ওঠে। তবে ওই সূত্রের দাবি, জলাধারের সুরক্ষার কারণেই নিয়মিত পলি সাফ করা হয়। ডিভিসি-র বক্তব্য, বন্যা আটকাতে হলে আরও জলাধার তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে মাইথন থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে বলপাহাড়ি জলাধার তৈরির জন্য ২০১২ সালে সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হলেও ঝাড়খণ্ড সরকার সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। বোকারোর কাছে একটি জলাধার তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনুঘাটেরও সম্প্রসারণ প্রয়োজন। ডিভিসি-র জলাধার থেকে যেমন সেচের জল জোগান দেওয়া হয়, একই ভাবে দুর্গাপুর, আসানসোলের বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কয়লা খনিও জল নেয়। সেই হিসেবেই জল সঞ্চয় করা হয় বলে ডিভিসি সূত্রের দাবি। ওই সূত্রের বক্তব্য, প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকারই প্রায় ৬৯৩ মিলিয়ন কিউবিক মিটার জল নেয় ডিভিসি-র কাছ থেকে।

অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে বন্যা ঠেকানোর উপায় কী? কল্যাণবাবুর মতো অনেকে বলছেন, অতিবৃষ্টির জল শাখানদী, খাল দিয়ে বড় এলাকায় ছড়িয়ে দিতে হবে। মজে যাওয়া ছোট নদী, খাল সংস্কার করে ফের জুড়তে হবে দামোদরের সঙ্গে।

সরকার সেই পথে হাঁটবে কি?

Damodar River Damodar Barrage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy