Advertisement
E-Paper

মহামারি মহকুমা, হানাদার ডেঙ্গ ২

ভয় বাড়িয়ে হাজির এ বার ডেঙ্গ ২! এত দিন ডেঙ্গ ১ এবং ৩-এর দাপটে ত্রাহি রব উঠেছিল রাজ্যে। এ বার যোগ হল ডেঙ্গ ২-ও।হুগলির শ্রীরামপুরে ২২ জন ডেঙ্গি-আক্রান্তের রক্তে ভাইরাসের প্রজাতি বিশ্লেষণ করতে পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। শুক্রবার সেই পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৯

ভয় বাড়িয়ে হাজির এ বার ডেঙ্গ ২! এত দিন ডেঙ্গ ১ এবং ৩-এর দাপটে ত্রাহি রব উঠেছিল রাজ্যে। এ বার যোগ হল ডেঙ্গ ২-ও।

হুগলির শ্রীরামপুরে ২২ জন ডেঙ্গি-আক্রান্তের রক্তে ভাইরাসের প্রজাতি বিশ্লেষণ করতে পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। শুক্রবার সেই পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৬ জনের শরীরে বাসা বেঁধেছে ডেঙ্গ ২ ভাইরাস। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় যা ডেঙ্গির ভাইরাসের প্রজাতিগুলির মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং মারাত্মক। শ্রীরামপুরে ডেঙ্গির প্রকোপ এ বার এতটাই বেশি যে রোগটিকে মহামারি হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, যখন কোনও এলাকায় কোনও নির্দিষ্ট মরসুমে কোনও রোগের প্রকোপে আক্রান্তের সংখ্যা সাধারণ ভাবে যা থাকে, তার থেকে দ্বিগুণ হয়ে যায়, তখনই সেই এলাকায় সেই রোগটিকে ‘এপিডেমিক’ বা মহামারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শ্রীরামপুরের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছেন, তাঁরা অনেক বেশি চিন্তিত ডেঙ্গির নতুন টাইপটিকে ঘিরে। কারণ ভাইরাসটি ব্যাপক হারে হামলা করলে কী ভাবে প্রতিরোধ করা হবে, সে ব্যাপারে এখনও তাঁরা অন্ধকারে। গত বছর প্রথম এই ডেঙ্গ ২ ভাইরাসের খোঁজ মিলেছিল। কিন্তু এ বারই প্রথম এ রাজ্যে এত বেশি সংখ্যায় তার হদিস মিলল। পতঙ্গবিদ অমিতাভ নন্দী জানিয়েছেন, ‘‘ডেঙ্গ ২ কেন এখানে প্রবল আকার নিল, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। এক-এক সময়ে এক-একটা সেরোটাইপের প্রভাব বেশি হয়। ডেঙ্গ ২-র জিনগত গঠনটাই এমন যে তা শুরু থেকেই শরীরে নানা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।’’

পতঙ্গবিদ এবং কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয় হাটি জানান, ডেঙ্গি ভাইরাসের মূলত চারটি প্রজাতির খোঁজ এখানে পাওয়া যায়। ডেঙ্গ ১, ২, ৩ এবং ৪। এর মধ্যে ডেঙ্গ ১-এর তিনটি সাবটাইপ, ডেঙ্গ ২-এর ছ’টি সাবটাইপ, ডেঙ্গ ৩ ও ৪-এর চারটি করে সাবটাইপ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গ ২-র ছ’টি সাবটাইপের মধ্যে সাউথ ইস্ট এশিয়া ভাইরাস নামে একটি সাবটাইপ সবচেয়ে ভয়াবহ। জানতে হবে শ্রীরামপুরে যা পাওয়া গিয়েছে, সেটি এই ভাইরাস কি না। যদি তা হয়, তা হলে ভয়টা অনেক বেশি। কারণ এতে শক, রক্তক্ষরণের ভয় অনেক বেশি।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যাদের এক বার ডেঙ্গ ১ বা ৩ হয়ে গিয়েছে, তাদের শরীরে যদি রোগের ভাইরাস ফের বাসা বাঁধে, তা হলে সেটা সাধারণত ডেঙ্গ ২ ভাইরাস হয়। এই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বিপদের আশঙ্কা বাড়ে। তবে ডেঙ্গ ২ হয়েছে কি না তা সাধারণ মানুষের পক্ষে কোথাও পরীক্ষা করিয়ে বোঝার উপায় নেই। একমাত্র স্বাস্থ্য দফতরই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেজ (নাইসেড) থেকে এই পরীক্ষা করাতে পারে।

শ্রীরামপুর রাতারাতি স্বাস্থ্যকর্তাদের কপালে ভাঁজ ফেললেও এ বার গোড়ায় জেলা প্রশাসনের দাবি ছিল, ডেঙ্গির প্রকোপ কমছে। কারণ হাসপাতালগুলিতে জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমেছে। ভিড় কমছে ফিভার ক্লিনিকেও। কিন্তু প্রশাসনের দাবি আর বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে ফারাকটা প্রথম স্পষ্ট হয়ে যায় গত মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের বাসিন্দা রূপা ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে। তার পর একে একে অন্য বহু ওয়ার্ড থেকে

আক্রান্তের খবর আসতে থাকে। এ দিন পর্যন্ত শ্রীরামপুর মহকুমায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫০। এ দিন গণেশ জানা (৪১) নামে এক ব্যক্তিরও জ্বরে মৃত্যু হয়েছে। তাঁর ডেঙ্গিই হয়েছিল কি না, সেটা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের চিকিৎসক লিখেছেন, ‘অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস, ‘ক্রনিক লিভার ডিজিজ’ ও ‘মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর’। তবে ওই নার্সিংহোমের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গণেশের প্লেটলেট ২০ হাজারে নেমে গিয়েছিল।

কলকাতায় বৃহস্পতিবার রয়েড স্ট্রিটের একটি নার্সিংহোমে আনিশা খাতুন ২১ বছরের এক তরুণীর ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে। তিনি নারকেলডাঙা এলাকার বাসিন্দা। তাঁর রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে শুক্রবার। খাস কলকাতায় এই মরসুমে এই প্রথম কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।

রাজ্যে এ দিন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২৭০। মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০। দক্ষিণ শহরতলির বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি দুজনের রক্তেও ডেঙ্গির ভাইরাস মিলেছে। তবে দুজনেই বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করিয়েছিলেন। সরকারি তরফে আর এক দফা পরীক্ষার জন্য এ দিন নমুনা
পাঠানো হয়েছে।

এ দিন সকালে বীরভূমে মৃত্যু হয় সিউড়ি ২ ব্লকের দেশালপুর গ্রামের বাসিন্দা রকিবুল ইসলামের (২৮)। বৃহস্পতিবার রকিবুলকে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। শুক্রবার সকালেই এলাইজা পরীক্ষার জন্য রকিবুলের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন চিকিৎসকেরা।কিছু ক্ষণ পরেই মারা যান তিনি। জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, ডেঙ্গিতে রকিবুলের মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা এলাইজা টেস্টের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়।

হাওড়ার শিবপুরে একটি শপিং মলের নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন রকিবুল। সোমবার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সিউড়ির বাড়িতে চলে যান তিনি। এখনও পর্যন্ত হাওড়া পুর এলাকায় সরকারি ভাবে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩১। মৃত ১। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি নবান্নে ডেঙ্গি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রতিটি ওয়ার্ডে নজরদারির পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য দফতর, হাওড়া পুরসভা ও সিটি পুলিশের আধিকারিকদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বে থাকা ওই কমিটির কাজ হল প্রতিটি পুর ওয়ার্ডে ঘুরে মশাবাহিত রোগ নিয়ে বাসিন্দাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা।

Dengue 2 virus Districts Patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy