নিজেদের ভাঁড়ারে টানাটানি চলছে। তার মধ্যেই রাজ্য সরকার দেড় বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। অথচ এখন পর্যন্ত সেই টাকা খরচ করে উঠতে পারেনি যাদবপুর।
শিক্ষক ও পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের গড়িমসির জন্যই উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি কিছু প্রকল্পের জন্য আইন না-মেনে দরপত্র প্রকাশের অভিযোগকে ঘিরেও বিতর্ক শুরু হয়েছে। উন্নয়নের কোনও কাজ শুরু না-হওয়ায় রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কর্তারাও রীতিমতো ক্ষুব্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উন্নয়ন খাতে অর্থ বরাদ্দ করার দাবি জানানো হয় রাজ্য সরকারের কাছে। জানানো হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে ‘ওয়াইফাই জোন’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিদেশি ভাষার পাঠ দেওয়ার জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা, পাঠাগারে উন্নত মানের ইলেকট্রনিক্স ব্যবস্থার পাশাপাশি টেকনোলজি ভবন তৈরি-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ওই বছরেরই নভেম্বরে শিক্ষা দফতর থেকে যাদবপুরের উন্নয়ন প্রকল্পে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।
সেই টাকা পড়ে আছে কেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির এক সদস্য জানান, অর্থ বরাদ্দের পরেই রাজ্য সরকারের নোডাল এজেন্সি ‘ওয়েবেল’-এর কাছে প্রকল্প-প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরিকল্পনা পেশ করে ওয়েবেল। বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫-র মার্চে ওই সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানতে চায়, এই ধরনের কাজ করার সামর্থ্য তাদের আছে কি না। তার পরে ওয়েবেলের তরফে একাধিক চিঠি পাঠানো হলেও বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ তার কোনও উত্তর দেননি।
ওয়েবেলের সঙ্গে চুক্তি করে কাজ শুরু করা গেল না কেন?
যাদবপুরের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষের জবাব, ‘‘এমনটা কেন হল, বলতে পারব না। নিশ্চয় কোনও জায়গা থেকে আপত্তি ছিল।’’ কী বা কার সেই আপত্তি, তা অবশ্য জানাতে অস্বীকার করেন রেজিস্ট্রার।
এই ঘটনার প্রায় পাঁচ মাস পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসাবে যোগ দেন সুরঞ্জন দাস। সম্প্রতি ওই প্রকল্পের একটি অংশের কাজ শুরু করার জন্য দরপত্র প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই দরপত্র নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির এক সদস্যের দাবি, ‘‘দরপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে আরএফআইডি বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি প্রকল্পের জন্য। সেখানে নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও লাইব্রেরি সফ্টওয়্যার সংস্থাই ওই প্রকল্পে যোগ দিতে পারবে। এ ভাবে নির্দিষ্ট করে লাইব্রেরি সফ্টওয়্যার সংস্থার কথা দরপত্রে উল্লেখ করা যায় না।’’ একই কথা জানান কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের এক কর্তা। কর্মসমিতিকে না-জানিয়ে ওই দরপত্র কী ভাবে প্রকাশ করা হল, উঠছে সেই প্রশ্নও।
রেজিস্ট্রের প্রদীপবাবু সরাসরি এর দায় নিতে চাননি। তিনি প্রথমে বলেন, ‘‘আমি নথি না-দেখে হঠাৎ করে কিছু বলতে পারব না। দরপত্রের জন্য একটি কমিটি রয়েছে। যদি কিছু হয়ে থাকে, তা হলে ওই কমিটিতেই হয়েছে।’’ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের প্রশ্ন, নিয়ম অনুযায়ী দরপত্রের বিষয়ে তো কর্মসমিতিতেই আলোচনা করার কথা। সেটা করা হল না কেন? এ ছাড়া দরপত্র প্রকাশ তো করেন রেজিস্ট্রার নিজেই। তা হলে এই দরপত্রের দায় কার?
‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কাজ। না-দেখে তার মধ্য থেকে একটি বিষয় নিয়ে এ ভাবে কিছুই বলা সম্ভব নয়,’’ জবাব এড়ানো জবাব প্রদীপবাবুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy