Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

Coronavirus: করোনা রুখতে রোজ স্কুল সাফাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের

করোনাকালে দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পরে স্কুল খোলার সময় বিদ্যালয় পরিষ্কার করার জন্য সরকারি অর্থ মিলেছিল।

স্কুল পরিষ্কার করছেন শিক্ষিকারা।

স্কুল পরিষ্কার করছেন শিক্ষিকারা। ছবি: সফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০৮
Share: Save:

করোনার হাত থেকে বাঁচতে বিদ্যালয় পরিষ্কার করার কাজে হাত লাগিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ভবতারণ হাই স্কুলের শিক্ষকেরাই। কিন্তু বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে শিক্ষাসচিবকে নতুন করে করোনা সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল-কলেজ চালানোর বিষয়টি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। তাতে প্রশ্ন জেগেছে, আবার স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে না তো? তবে এই স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, যত দিন না তেমন কোনও সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তত দিন তাঁরা স্কুল ভবন এই ভাবেই পরিষ্কার রাখবেন।

করোনাকালে দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পরে স্কুল খোলার সময় বিদ্যালয় পরিষ্কার করার জন্য সরকারি অর্থ মিলেছিল। কিন্তু করোনার হাত থেকে বাঁচতে বিদ্যালয় নিয়মিত পরিষ্কার করা, স্যানিটাইজ় করা দরকার। এই স্কুলের শিক্ষকেরা সেই কাজটাই করছেন নিজেদের হাতে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্কুল শুরুর সময় সরকারের আর্থিক সাহায্য যেমন মিলেছিল, পুরসভাও দু'জন কর্মী দেয় সাফাইয়ের জন্য। কিন্তু তার পরে অনেক দিন কেটে গিয়েছে। নিয়মিত স্কুল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে গেলে নিজেদেরই হাত লাগাতে হবে। কারণ শ্রমিক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করার মতো অর্থ স্কুলের নেই।

তাই প্রবীণা দীপালি বিশ্বাস, গায়ত্রী চক্রবর্তী, নীলাঞ্জনা দে-র মতো শিক্ষকেরা স্কুল চত্বরে স্থাপিত মূর্তি পর্যন্ত পরিষ্কার করে তাতে রংও লাগাচ্ছেন। আর নবীন শিক্ষক আরিফুন নাহার রঙের ব্রাস ঘষছেন রং চটা দেওয়ালে। প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার মণ্ডল গাছের খসে পড়া ডাল, জঞ্জাল পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। তাঁকে সহযোগিতা করছেন শিক্ষক ওবায়দুল ইসলাম। ইংরেজির শিক্ষক ওবায়দুল বলছেন, ‘‘স্কুল তো রোজ হচ্ছে। অনেক পড়ুয়া আসছে। এক বার পরিষ্কার করে ছেড়ে দিলে তো চলবে না। করোনার ভয় ক্রমশ বাড়ছে। আর সেই জন্যই আমরা করোনা রুখতে মাঠে নেমেছি।’’ চন্দনবাবু বলেন, ‘‘টানা স্কুল চালাতে গেলে কেবল সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আমাদেরও হাত লাগাতে হবে স্কুল স্যানিটাইজ় করার কাজে।’’ চন্দনবাবু বলেন, ‘‘যদি স্কুল বন্ধ হয়, তা হলে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব।’’

দীপালিদেবী বলছেন, ‘‘এত দিন পড়াচ্ছি। স্কুলবাড়িটা আমাদেরই বাড়ি হয়ে গিয়েছে। ফলে নিজের বাড়ি পরিষ্কার করতে যেমন হাত লাগাই তেমনই স্কুল ভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় হাত লাগিয়েছি, এটা আমাদের দায়িত্ব।’’ গায়ত্রী বলেছেন, ‘‘নিজের স্কুল নিজ হাতে পরিষ্কার করার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। সবাই মিলে পরিষ্কার করে রং করার পরে যখন ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম, খুব ভাল লাগল।’’ তাঁরা বলছেন, ক্লাসের ফাঁকে এখন অনেক সময়। ফলে একটু একটু করে স্কুল পরিষ্কার করলেই ঝকঝকে-তকতকে হয়ে উঠবে স্কুল চত্বর।

অভিভাবকেরাও নিজেদের চোখেই এই দৃশ্য দেখে খুশি। অভিভাবক শরিফুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘অনেক স্কুল এক বার পরিষ্কার করিয়েই হাত তুলে নিয়েছে। কিন্তু ভবতারণ স্কুল কোভিড নিয়ে প্রথম থেকেই বেশ সতর্ক। ফলে স্কুলে সন্তানদের পাঠিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে থাকি। তবে স্কুল যদি ফের বন্ধ হয়, তা হলে আবার অনলাইন ক্লাস শুরু হবে হয়তো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Schools Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE