Advertisement
E-Paper

হার নিশ্চিত জেনেই মরণকামড় দিতে চেয়েছিলেন আরাবুল?

কিন্তু এ সব কিছুর পরেও দলের অন্দরের সমীকরণে ক্রমাগত কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন এই নেতা। লোকবল, অর্থবলের অভাব না থাকলেও, নিজের খাস তালুক ভাঙড়-২ ব্লকেও তাঁর একাধিপত্যে ভাগ বসাচ্ছিলেন তাঁর দলের নেতাদেরই একাংশ। খালি রহিম আলি নন, এই এলাকার একাধিক তৃণমূল কর্মীর কথায়, এই পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল আরাবুলের রাজনৈতিক জীবনের অ্যাসিড টেস্ট। এই পরীক্ষায় সফল হতে গোড়া থেকে চেষ্টার কোনও কসুর করেননি তিনি।

সিজার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ১৮:৫৮
আরাবুল ইসলাম।-ফাইল চিত্র।

আরাবুল ইসলাম।-ফাইল চিত্র।

শুধু কি জমি কমিটির চ্যালেঞ্জের ‘জবাব’ দিতে গিয়েই শুক্রবার মরিয়া হয়ে পেশিশক্তির এই আস্ফালন ভাঙড়ের ‘তাজা নেতা’ আরাবুল ইসলামের? না এই ‘চ্যালেঞ্জ’-এর পিছনে রয়েছে আরও কোনও জটিল সমীকরণ, যা কার্যত বাধ্য করেছে এই নেতাকে ঠিক ভোটের মুখে এতটা ঝুঁকি নিতে?

ভাঙড়ের সাতুলিয়ার বাসিন্দা রহিম আলি। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মের দিন থেকে তিনি ঘাসফুল-জোড়া ফুলের ঝান্ডা বইছেন। আরাবুলকে দলের ভরসা থেকে ‘বোঝা’ হতে যেমন দেখেছেন, তেমনই দলের সাধারণ কর্মী থেকে ভাঙড়ের ‘বেতাজ বাদশা’ হওয়ারও সাক্ষী তিনি। তাঁর কথায়, “ভাঙড়ের বুকে সিপিএমের হাতিয়ার দিয়েই সিপিএমকে বধ করেছিল সে। তাই সব জেনেশুনেও দল রীতিমতো সমঝে চলত আরাবুলকে। খালি ভাঙড় নয়, সংলগ্ন রাজারহাট-নিউটাউন বা খাস কলকাতার নির্বাচনেও আরাবুল ছিলেন দলের তাবড় নেতাদের ভরসা।”

কিন্তু এ সব কিছুর পরেও দলের অন্দরের সমীকরণে ক্রমাগত কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন এই নেতা। লোকবল, অর্থবলের অভাব না থাকলেও, নিজের খাস তালুক ভাঙড়-২ ব্লকেও তাঁর একাধিপত্যে ভাগ বসাচ্ছিলেন তাঁর দলের নেতাদেরই একাংশ। খালি রহিম আলি নন, এই এলাকার একাধিক তৃণমূল কর্মীর কথায়, এই পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল আরাবুলের রাজনৈতিক জীবনের অ্যাসিড টেস্ট। এই পরীক্ষায় সফল হতে গোড়া থেকে চেষ্টার কোনও কসুর করেননি তিনি।

দেখুন ভিডিও

নির্বাচন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙড়-২ ব্লক কার্যত বিরোধীশূন্য করে দেয় তার দলবল। ভাঙড়-২ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫৯টি আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ‘শেষ দিন’ পর্যন্ত বিরোধী কেউ মনোনয়ন জমা দিতে ব্যর্থ হন। জমি কমিটির প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে শেষে আদালতের দ্বারস্থ হন। আর সেখানে ভাঙড়-২-এর এই ‘বিরোধীশূন্য’ চেহারাই আদালতে অ্যাডভান্টেজ পাইয়ে দেয় জমি কমিটিকে। “আদালত যে মাঝপথে কমিটির হোয়াটস অ্যাপ মনোনয়নকে বৈধতা দেবে, তার জন্য আদৌ প্রস্তুত ছিলেন না আরাবুল”— বলেন রাজারহাটের আরাবুল ঘণিষ্ঠ রাজারহাটের এক তৃণমূল নেতা।

আরও পড়ুন- আরাবুলের বাড়ি লাগোয়া বাগানে রাশি রাশি বোমা উদ্ধার করলেন বাসিন্দারাই​

আরও পড়ুন- ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত, জামিন চাইলেন না আরাবুল​

জমি কমিটির মনোনয়ন বৈধতা পাওয়ার অর্থ, খোদ আরাবুলের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাল কমিটি। কারণ আরাবুলের ছেলে হাকিবুল যে উত্তর গাজিপুর আসন থেকে জিতে পোলের হাট-২ অঞ্চলের পঞ্চায়েত প্রধান, সেই আসনে কমিটির প্রার্থী এন্তাজুল, যার ভাই এই আন্দোলনে শরিক হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। খোদ আরাবুল যে পঞ্চায়েত সমিতির আসন থেকে জিতে সমিতির সভাপতি, সেই আসনেও রয়েছে কমিটির প্রার্থী শরিফুল ইসলাম। আরাবুলের সমিতি আসনের মধ্যেই রয়েছে কমিটির শক্তিশালী গড়— মাছিভাঙা, মাঝের পাড়া, মিদ্দেপাড়ার মত এলাকা। “ওই এলাকাগুলো পুরোটাই কমিটির দখলে। ওখানে আরাবুলের একটা ভোট পাওয়াও প্রায় অসম্ভব”— স্বীকার করেন এক তৃণমূল কর্মী। আর বাকি থাকে উত্তর গাজিপুর ও দক্ষিণ গাজিপুরের মোট তিনটি বুথ। যা আদৌ আরাবুলের জয় সুনিশ্চিত করার পক্ষে যথেষ্ট নয়।

অন্য দিকে আরাবুলের যেখানে বাড়ি, সেই উত্তর গাজিপুর এলাকাতেও গত কয়েক মাসে কমিটির দাপট বেড়েছে।

কয়েক দিন আগে দলের এক শীর্ষ নেতা যখন আরাবুলকে সংযত থাকার নির্দেশ দেন, তখনই আরাবুল অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে তার এলাকাতে কমিটির দাপট বাড়ার পিছনে মদত দিচ্ছে তাঁর দলেরই কয়েকজন নেতা। যদিও আরাবুলের সেই অভিযোগে দলীয় নেতৃত্ব কর্ণপাত করেননি। এক দিকে কমিটি, অন্য দিকে দলের অন্দরে ক্রমশ তাঁর বিরুদ্ধে শক্তিশালী হয়ে ওঠা সমীকরণ— এই সাঁড়াশি আক্রমণ আরাবুলের জেতা বাজি উল্টে দেয়। জমি কমিটির নেতা অলীক চক্রবর্তীর মতে, “আরাবুল বুঝতে পারছিল যে হারবে। খালি সে নয়। তার ছেলেও হারবে। তাই মরিয়া হয়ে সে এই সন্ত্রাস চালিয়েছে।”

আরাবুলের গ্রেফতারি এবং তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে ভাঙড়ের আরও এক তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদ মন্তব্য না করলেও, অন্য এক নেতার দাবি, “আরাবুল জানত, এই নির্বাচনে তাঁর পরাজয়ের অর্থ একটাই। এক দিকে যেমন তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্ত্ব আসিইউ-তে চলে যাবে, তেমনি তাঁকে এলাকা ছাড়া হতে হবে। এখানে কমিটি অনুঘটক। দলীয় রাজনীতিতে আরাবুলের বিরোধীরাই তাঁর বিদায়ের রাস্তা তৈরি করে দেবে।”

কথাটা যে ভিত্তিহীন নয়, তা বোঝা গেল শুক্রবার রাতেই। ক’দিন আগেই ভাঙড়-১ ব্লকের ভগবানপুর এলাকায় আরাবুলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত ওহিদুলের ঘনিষ্ঠ ইব্রাহিম মোল্লার ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল আরাবুলের বিরুদ্ধে। আরাবুল গ্রেফতার হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে ভগবানপুরে আরাবুল ঘনিষ্ঠ অন্তত ২৫ জনের বাড়ি ভাঙচুর হয়ে যায়। এখনও গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন একাধিক আরাবুল অনুগামী।

তাই বোধহয় চ্যালেঞ্জের জবাব নয়, বরং নিজের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে বিরোধীশূন্য করার স্ট্র্যাটেজি বুমেরাং হয়ে, ওয়াকওভারের রাস্তা পরিষ্কার করে দিল আরাবুল বিরোধীদের।

Bengal Panchayat Election: 2018 Arabul Islam Bhangar আরাবুল ইসলাম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy