Advertisement
E-Paper

বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার পুত্র গুলিবিদ্ধ কালিয়াচকে

তৃণমূলের গোষ্ঠীসংঘর্ষের আঁচ এ বার পড়ল দলের এক প্রাক্তন নেতার অন্দর মহলেই। রবিবার মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে গুলির লড়াইয়ের মাঝে পড়ে আহত হল তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা বকুল শেখের ছেলে, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আজিম আলম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩২
তাণ্ডব কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বোমা-গুলির লড়াই।

তাণ্ডব কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বোমা-গুলির লড়াই।

তৃণমূলের গোষ্ঠীসংঘর্ষের আঁচ এ বার পড়ল দলের এক প্রাক্তন নেতার অন্দর মহলেই। রবিবার মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে গুলির লড়াইয়ের মাঝে পড়ে আহত হল তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা বকুল শেখের ছেলে, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আজিম আলম। বকুলের ভ্রাতৃবধূ ফারহানা বিবি এই এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান।

গত কয়েক মাসে কালিয়াচকে একাধিকবার গুলি-বোমা নিয়ে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে বেশ কয়েক জন নিরীহ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন এক ট্রাক চালক। বেশির ভাগ ঘটনাতেই বকুল শেখের নামও জড়িয়েছে। সম্প্রতি তাঁকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করে উঠতে পারেনি। শুধু সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যেই এই এলাকায় ১৬ বার প্রকাশ্যে গুলি-বোমা নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, একা বকুল শেখ নন, দুষ্কৃতীদের বেশির ভাগই শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় অধিকাংশ ঘটনাতেই অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করেনি।

পুলিশ প্রশাসনকে নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে এ দিন বকুল শেখের দল প্রথমে তাণ্ডব শুরু করে বলে অভিযোগ। শনিবার রাতে বকুলের খোঁজে এলাকায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। তখন বকুলের ঘনিষ্ঠ জিয়াউল হক নামে এক যুবককে একটি দু’নলা পাইপগান ও কার্তুজ সহ গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, তার পরেই এ দিন সকাল আটটা নাগাদ বকুলের অনুগামীরা জাতীয় সড়কের উপরে বোমাবাজি শুরু করে। এলাকাবাসীদের দাবি, সেই সময় এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য জাকির হোসেনের অনুগামীরাও পাল্টা বোমা ছুড়তে শুরু করে। তৃণমূলের টিকিটেই পঞ্চায়েতে জিতেছিলেন জাকির। পরে বকুলের দাপটের মুখে পড়ে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকেছিলেন তিনি। কিন্তু বকুলকে বহিষ্কার করার পরে জাকির এখন আবার শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় ফিরে এসেছেন।


মালদহ মেডিক্যালে আহত কিশোর।

দু’দলের লড়াইয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে এলাকা। জাতীয় সড়কের এক দিকে ছিল বকুলের দল, অন্য দিকে জাকিরেরা। সংঘর্ষ শুরু হতেই ওই জায়গায় প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। গাড়ি, বাস, ট্রাক সব অনেকটা আগে থেকেই দাঁড়িয়ে যায়। আজিম একটি ম্যাক্সি-ট্যাক্সিতে করে এসে নেমেছিল খানিকটা আগেই। কিন্তু তারপরে যে দিকে জাকিরের দলবল রয়েছে, রাস্তার সে-দিক ঘেঁষেই সে হেঁটে আসছিল। তখনই তাকে কয়েক জন ঘিরে ফেলে গুলি করে। আজিম মাটিতে পড়ে গেলে বকুলের দল তা দেখতে পেয়ে বোমা ছুড়তে ছুড়তে এসে রাস্তার এ পাশ থেকে তাকে নিয়ে যায়। এর পরেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে বকুলের দল। পুলিশ গেলে বেলা দশটা নাগাদ সংঘর্ষ থামে। আজিমের কোমরের বাঁ দিকে গুলি লেগেছে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আজিম বলে, ‘‘আমি জালালপুর থেকে টিউশন নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। কিছু লোক আমাকে দেখতে পেয়ে ‘বকুলের ছেলে’ বলে চিৎকার করে ঘিরে ধরে। তার পরেই আমাকে কেউ গুলি করে। আমার আর কিছু মনে নেই।’’


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

বকুলের ভ্রাতৃবধূ তৃণমূলের ফারহানা বিবির দাবি, ‘‘এ দিন জাকির-সহ তার দলবল আমাদের উপরে হামলা চালাল। আমাদের পরিবারের এক ছেলেকে গুলি করা হল। তবু পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করতে পারল না।’’ জাকিরের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বকুলের দলবলই হামলা চালিয়েছে। তাদের নিজেদের গুলিতেই বকুলের ছেলে জখম হয়েছে। এখানে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।’’

সারা দিনই এলাকা ছিল থমথমে। এলাকায় শ’তিনেক দোকান রয়েছে। ঘটনার পর থেকে সব বন্ধ। জাতীয় সড়কে ব্যাপক যানযটে প্রচণ্ড দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদেরও। গ্রামবাসীরা অবশ্য প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। বিরোধীদের দাবি, কালিয়াচকে পুলিশ প্রশাসন রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে না, তাই গ্রামবাসীরাও ভয়ে চুপ করে রয়েছেন। তবে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘এমন ঘটনা যারা ঘটাবে তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।’’ পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। ঘটনা সামাল দিতে এত সময় লাগল কেন? পুলিশকর্তারা জানান, প্রথমে জাতীয় সড়কের উপরে মাত্র কয়েকজন পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁরা খবর পাঠালে বড় বাহিনী নিয়ে গিয়ে সংঘর্ষ থামানো হয়।

ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়

Kaliachak Firing Injured Expelled TMC Leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy