E-Paper

দেহে ম্যালেরিয়ার জীবাণু নির্মূলে শুরু বিদেশি ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ

ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে দেশের চারটি মেডিক্যাল কলেজে। সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৫ ০৯:১১
কেন্দ্রের ম্যালেরিয়া দূরীকরণ কর্মসূচিতে ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হবে।

কেন্দ্রের ম্যালেরিয়া দূরীকরণ কর্মসূচিতে ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। —প্রতীকী চিত্র।

টানা ১৪ দিন ধরে নয়। বরং একবার খেলেই, পেটের ভিতরে থেকে যাওয়া ম্যালেরিয়ার জীবাণু নষ্ট হবে। বিদেশি সংস্থার তৈরি এমন ওষুধ থাকলেও, তা এখনও ভারতে ব্যবহারের অনুমতি নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইসিএমআর-এর তত্ত্বাবধানে এ বার বিদেশে ব্যবহৃত ওই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে দেশের চারটি মেডিক্যাল কলেজে। সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দেশে ম্যালেরিয়া এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রতি বছর বর্ষার সময়ে মশাবাহিত ওই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ম্যালেরিয়ার ‘ভাইভ্যাক্স’ প্রজাতির জীবাণুতে এক বার কেউ আক্রান্ত হলে, সেটি শরীরে থেকে যায়। চিকিৎসায় জ্বর কমে গেলেও কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পরে ফের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় ওই রোগীর। কারণ ‘ভাইভ্যাক্স’ জীবাণু তাঁর পেটে থেকে যায়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক তথা ওষুধের পরীক্ষামূলকপ্রয়োগের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘ম্যালেরিয়া ধরা পড়ার পরে ক্লোরোকুইন ট্যাবলেট দেওয়া হয়। তাতে রক্তের জীবাণু ধ্বংস হলেও, পেটের জীবাণু মারা যায় না।’’

শরীরে থেকে যাওয়া ওই জীবাণু নির্মূল করতে ‘প্রাইমাকুইন’ ট্যাবলেট রয়েছে। তবে সেটি টানা ১৪ দিন খেতে হয়। যাঁরা ওই ওষুধের কোর্স পুরো শেষ করবেন, তাঁরা নতুন করে মশা না কামড়ানো পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু ক্লোরোকুইন খেয়ে তিন দিনের মধ্যে জ্বর কমে যাওয়ার পরে অধিকাংশ রোগীই আরও ১৪ দিন ওষুধ (প্রাইমাকুইন) খেতে রাজি হন না। ফলে শরীরে ‘ভাইভ্যাক্স’ জীবাণু থেকে যায়। আবার, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে জিনগত ভাবে ওই ‘প্রাইমাকুইন’ ট্যাবলেট কাজ করে না। উল্টে রক্ত ভেঙে গিয়ে শরীরে রক্তাল্পতা তৈরি হয়। তাই, ওই ট্যাবলেট খাওয়ার আগে, বিশেষত, পুরুষদের একটি রক্ত পরীক্ষাকরাতে হয়।

ওই পরীক্ষার তাৎক্ষণিক ফলাফল জানতে বছর পাঁচেক আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় একটি যন্ত্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার পরেও ১৪ দিন ধরে ওষুধ খাওয়া এবং পরীক্ষা করাতে নারাজ অধিকাংশ রোগীই। সেই সমস্যা দূর করতেই বিদেশে প্রচলিত ‘টেফনোকুইন’ ট্যাবলেটের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছেদেশে। কলকাতা-সহ রাজস্থান, গুজরাত এবং মুম্বইয়ের চারটি মেডিক্যাল কলেজে ম্যালেরিয়া থেকে সেরে ওঠা রোগীদের ওই ট্যাবলেট (টেফনোকুইন) দেওয়া হচ্ছে। গত ১ জুলাই থেকে কলকাতা মেডিক্যালে ছ’জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত মিলেছে। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত লটারির মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে তিন জনকে ‘টেফনোকুইন’ এবং বাকি তিন জনকে ‘প্রাইমাকুইন’ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে।কলকাতা মেডিক্যালের মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান তথা এই গবেষণায় যুক্ত সৌমিত্র ঘোষ বলেন, ‘‘কার্যকারিতা ও সুরক্ষার দিক থেকে এই ওষুধটি অনেক ভাল বলেই বিদেশে জানা গিয়েছে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ভাল ফল মিললে, এখানেও ব্যবহৃত হবে।’’

অরুণাংশু জানাচ্ছেন, ‘টেফনোকুইন’ খাওয়ার পরে ছ’মাস ওই রোগীদের নজরে রাখা হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হবে। তিনি বলেন, ‘‘যকৃতে ভাইভ্যাক্স জীবাণু থেকে যাচ্ছে কিনা, সেটি ওই পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে।’’ গবেষক ও চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই চারটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে সদর্থক ফলাফল মিললে দেশে ‘টেফনোকুইন’ ব্যবহারে ছাড়পত্র দেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রের ম্যালেরিয়া দূরীকরণ কর্মসূচিতেও ওই ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

medicine SSKM

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy