Advertisement
E-Paper

বাড়ি বিক্রিতে চাপ, বিডিও’র স্ত্রী ও মেয়েকে মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল

মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। কিন্তু রাজ্য থেকে প্রোমোটারি-রাজ ও তোলাবাজি নির্মূল হচ্ছে না! এ বার কলকাতার অদূরেই কোন্নগরের বাসিন্দা এক পদস্থ সরকারি কর্তার বাড়িতে তোলা চেয়ে এবং বাড়ি বিক্রি করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রসূন আচার্য ও গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৯
ভাঙচুরের চিহ্ন দেখাচ্ছেন দূর্বা ঘোষ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

ভাঙচুরের চিহ্ন দেখাচ্ছেন দূর্বা ঘোষ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। কিন্তু রাজ্য থেকে প্রোমোটারি-রাজ ও তোলাবাজি নির্মূল হচ্ছে না!

এ বার কলকাতার অদূরেই কোন্নগরের বাসিন্দা এক পদস্থ সরকারি কর্তার বাড়িতে তোলা চেয়ে এবং বাড়ি বিক্রি করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দাবি না মেটানোয় ওই কর্তার স্ত্রী-কন্যাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে

বলেও অভিযোগ।

আক্রান্ত পরিবারের দাবি, বাড়ি কেনার সময়েই স্থানীয় দুষ্কৃতীরা ৫০ হাজার টাকা তোলা চেয়েছিল। তাঁরা সেটা দেননি। পরে প্রোমোটারির স্বার্থে ওই বাড়ি বিক্রির জন্য চাপ সৃষ্টি করা হতে থাকে। কিন্তু ওই সরকারি কর্তা সেই চাপের কাছেও নতি স্বীকার না করায়, ওই পরিবারের উপরে হামলা চালানো হল। অভিযোগের তির স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী ও তার দলবলের বিরুদ্ধে।

তারাশঙ্কর ঘোষ নামে ওই সরকারি কর্তা বর্তমানে বীরভূমের মহম্মদবাজারের বিডিও। কর্মসূত্রে তিনি সেখানেই থাকেন। কোন্নগরের বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী শম্পাদেবী ও মেয়ে দূর্বা। মেয়েটি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। অভিযোগ, মঙ্গলবার দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে শম্পাদেবী ও দূর্বাকে বেধড়ক মারধর করে। রড দিয়ে মারা হয় দূর্বাকে। ভাঙচুরও চালানো হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে কোন্নগর থানার পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুষ্কৃতীরা পাড়াতেই ঘুরছে বলে দাবি ওই পরিবারের। এর ফলে আতঙ্কে রয়েছেন শম্পাদেবীরা। তারাশঙ্করবাবু ঘটনাটি শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসককেও জানিয়েছেন। তাঁর বাবা এক সময়ে হুগলি জেলা আদালতের প্রধান বিচারক ছিলেন। তারাশঙ্করবাবুর আক্ষেপ, ‘‘প্রশাসনিক পদে থেকেও যদি স্ত্রী-কন্যাকে নিরাপত্তা দিতে না পারি, তা হলে এই পদে থেকে লাভ কী!’’

এসডিপিও (শ্রীরামপুর) সুবিমল পাল বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগের সারবত্তা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য দিকে, জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রশাসন যা করার করবে। এ সব বরদাস্ত করা হবে না। সাংগঠনিক স্তরেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসের গোড়া থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে চলেছেন, সিন্ডিকেট, তোলাবাজি-সহ কোনও রকম দুর্নীতি আর বরদাস্ত করবেন না। এ ব্যাপারে প্রশাসনকেও তিনি সক্রিয় হওয়ার জন্য বার্তা দিচ্ছেন। তোলা আদায়ের অভিযোগে ইতিমধ্যে গ্রেফতারও হয়েছেন বিধাননগর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কলকাতা-সংলগ্ন লাগোয়া এলাকায় তোলাবাজি এবং প্রোমোটার-রাজে যে লাগাম পরানো যায়নি, কোন্নগরের ঘটনায় তা ফের সামনে এল।

তারাশঙ্করবাবু আদতে হুগলিরই হরিপালের বাসিন্দা। মেয়ের পড়াশোনার সুবিধার জন্য কোন্নগরের হারানচন্দ্র ব্যানার্জি রোডে বাড়িটি কেনেন। অভিযোগ, তিনি স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের দাবি মতো ‘সেলামি’ দেননি। তখন থেকেই তৃণমূল কর্মী বাপি দাসের নেতৃত্বে কিছু দুষ্কৃতী তাঁর বাড়ি লাগোয়া জমি দখলের চেষ্টা করছে। দূর্বার উপরে এক বার দুষ্কৃতীরা অ্যাসিড হামলার চেষ্টাও করে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি এই বাড়ি লাগোয়া জমিতে আবাসন তৈরির কাজ শুরু হয়। তারাশঙ্করবাবুর অভিযোগ, তাঁদের বাড়িটি পেলে বড় আবাসন তৈরি করা যাবে। সে কারণে প্রোমোটারের হয়ে বাপি ও তার দলবল তাঁকে বাড়ি বিক্রির জন্য চাপ দেয়। কিন্তু তিনি রাজি হননি।

ওই পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, মঙ্গলবার বাপি ও তার দলবল বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। বাধা দিতে গেলে মা-মেয়ে দু’জনেই আক্রান্ত হন। দূর্বার কথায়, ‘‘বাধা দিতে গেলে ওরা আমায় মারল। আমি মাকে ওদের মারের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। পুলিশকে সব জানিয়েছি। পুলিশ এসেছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই! কী করে তৃণমূলের লোকেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?’’

কী বলছেন অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী বাপি দাস?

যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তাঁর দাবি, “বিডিও এবং তাঁর স্ত্রী-কন্যা মামলাবাজ। এক বার অ্যাসিডের গল্প ফেঁদে পাড়ার এক জনকে জেল খাটিয়েছেন।’’ টাকা চাওয়ার ঘটনা বা জোর করে বাড়ি বিক্রি করানোর চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেন বাপি।

Extortion Lynch BDO officer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy