Advertisement
E-Paper

চাঁদাবাজ ধরল জাহাঁবাজ ‘খালাসি’

চাঁদাবাজেরা সাবধান! পুজোর আগে গাড়ি আটকে চাঁদার জুলুম রুখতে এ বার পথে নেমেছে পুলিশ। মাল-বোঝাই গাড়িতে চালক-খালাসি সেজে পুলিশের টহলদারির প্রথম দিনেই হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার যশোর রোডের চাঁদা শিকারিদের।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৪
অঙ্কন: নির্মাল্য প্রামাণিক

অঙ্কন: নির্মাল্য প্রামাণিক

চাঁদাবাজেরা সাবধান!

পুজোর আগে গাড়ি আটকে চাঁদার জুলুম রুখতে এ বার পথে নেমেছে পুলিশ। মাল-বোঝাই গাড়িতে চালক-খালাসি সেজে পুলিশের টহলদারির প্রথম দিনেই হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার যশোর রোডের চাঁদা শিকারিদের। মঙ্গলবার ভোরে বনগাঁ মহকুমার চারটি জায়গা থেকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে পাঁচ জন চাঁদাবাজকে। হাবরা এলাকা থেকে আগেই ধরা পড়েছিল ৯ জন।

পুলিশের টহলদারি ভ্যানের নজর এড়াতে সাধারণত ভোরের আলো ফোটার ঠিক আগের সময়টা বেছে নেয় ধুরন্ধর চাঁদা-শিকারিরা। আর বেছে বেছে ঠিক সেই সময়েই অভিযানে নেমেছিল গাইঘাটা থানার পুলিশ। যার ফলও মিলেছে।

গাইঘাটা থানা এলাকায় যশোর রোডেই চাঁদার জুলুম বেশি। সোমবার রাতে গাইঘাটার সিআই পার্থ সান্যাল এবং ওসি অনুপম চক্রবর্তী পরিকল্পনা ছকে ফেলেন। একটি ট্রাক ও একটি মিনি ট্রাকের বন্দোবস্ত করে পুলিশ। এ বার ছদ্মবেশ ধরার পালা। অনুপমবাবুর মাথায় বাঁধা ছিল লাল গামছা। পরনে স্যান্ডো গেঞ্জি, ট্র্যাকস্যুট। বাকি পুলিশ কর্মীদের কেউ লুঙ্গি, কেউ বারমুডা পরে গায়ে গামছা জড়িয়ে উঠে পড়েন দু’টি গাড়িতে।

গাইঘাটার দিক থেকে যশোর রোড ধরে বনগাঁর দিকে এগোয় গাড়ি। চাঁদপাড়া বাজারে কাছে ট্রাক পৌঁছতেই দুই যুবক হাত দেখিয়ে গাড়ি দাঁড় করায়। সঙ্গে অশ্রাব্য গালিগালাজ। হুমকি আসে, ‘‘চাঁদাটা চটপট বের কর।’’ রাস্তার পাশে তখন চেয়ার পেতে বসে আরও কয়েকজন মাতব্বর। হাতে খলবল করছে বিল-বই।

সব বুঝেশুনে ট্রাক থেকে নেমে পড়েন খালাসি। কলার চেপে ধরেন দুই চাঁদাবাজের। ততক্ষণে ট্রাক থেকে নেমে পড়েছেন আরও দু’জন পুলিশ কর্মী। লুঙ্গি-গেঞ্জির খোলসে তাঁদের চেহারা অবশ্য খালাসিদেরই মতো। কিন্তু মেজাজখানা তো পুলিশেরই। তাদের হাবভাব দেখে দৌড় দেয় দূরে বসে থাকা যুবকের দল। খালাসির বেশে ছিলেন অনুপমবাবু। ট্রাকের একটু পিছনে ছিল পুলিশের গাড়ি। তারা এসে ওই দুই চাঁদা শিকারিকে পাকড়াও করে।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে এই অভিযানে চাঁদপাড়া থেকে দু’জন, বরচরা থেকে দু’জন ও বাগনা এলাকায় যশোর রোড থেকে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে কতগুলি বিল-বই। পুলিশ জানিয়েছে, মোট চারটি পুজো কমিটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক বা যশোর রোড ধরে পেট্রাপোল স্থলবন্দরের দিকে প্রতি দিন শ’য়ে শ’য়ে মালবাহী ট্রাক যাতায়াত করে। পুলিশের দাবি, রাতভর টহল চলে যশোর রোডে। কিন্তু রাত সাড়ে ৩টে-৪টে নাগাদ শেষ হয় টহল। পরের ঘণ্টা দেড়েক সময় হল চাঁদাবাজদের ‘কাজ’-এর সময়। একশো, পাঁচশো, হাজার, দু’হাজার টাকাও চাঁদা চাওয়া হয়। তা নিয়ে চলে দরাদরি, হুমকি, গালিগালাজ।

সোমবারই বনগাঁয় এসে চাঁদার জুলুম রুখতে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘কোনও অবস্থাতেই রাস্তায় ট্রাক বা গাড়ি থামিয়ে চাঁদা তুলতে দেওয়া হবে না।’’

পুলিশের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বনগাঁ মোটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিলীপ দাস। তিনি জানান, মোটা মোটা লাঠি হাতে রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে ছেলেরা। ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত গতিতে আসা গাড়ি তাদের হাত থেকে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলেও পড়তে পারে। গত বছর গাইঘাটার কাছে যশোর রোডে চাঁদা শিকারিরা এক ট্রাক চালককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল, সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।

Police Extortionist Truck driver
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy