বিক্রি হওয়া এমন জল নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। নিজস্ব চিত্র
দুপুর ১টা ৫২ মিনিটের শিয়ালদহ-নৈহাটি লোকাল। ট্রেনের ভিতরে ফেরিওয়ালা হাঁকছেন, ‘‘মাত্র ১০ টাকায় গলা ভেজান। ‘সিল প্যাক- সিল প্যাক-সিল প্যাক’।
ট্রেন বেলঘরিয়া ছাড়তেই শুরু হল ‘সিল প্যাক’-এর বিক্রি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিক্রিও হয়ে গেল গোটা চারেক ৫০০ মিলিলিটারের বোতল। এক মহিলা যাত্রী বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “জল ভাল তো? বাচ্চাকে খাওয়াব কিন্তু।” বিক্রেতার পাল্টা জবাব, “আমাদের জলে আইএসআই ছাপ রয়েছে দেখছেন তো? ফুল মিনারেল। নকলের কোনও ভয় নেই। যার কাছেই কিনুন, শুধু নামটা দেখে নেবেন— কোমল জীবন।” মহিলা প্রায় আধ বোতল জল খাওয়ালেন তাঁর আট বছরের ছেলেকে।
শহরতলির লোকাল ট্রেনে বোতলবন্দি জল বিক্রি নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই জল কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ, ট্রেনের এই বোতলবন্দি জল আইএসআই ছাপ মেরে, সংস্থার ঠিকানা দিয়ে বিক্রি করা হয় ঠিকই। তবে সংস্থার ঠিকানা বাস্তবে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যেমন বোতলে লেখা ‘কোমল জীবন’ সংস্থার ঠিকানা ব্যারাকপুরের নোনাচন্দনপুকুর। কিন্তু, সেখানে জল তৈরির তেমন কোনও বটলিং প্লান্টের খোঁজ মেলেনি। ব্যারাকপুরের তালপুকুরে না কি ‘পবিত্র নীর’ সংস্থার অফিস। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বাস্তবে তা সত্যি নয়।
নিয়ম বলছে, পানীয় জলের বোতলে ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’-র ছাপ থাকা বাধ্যতামূলক। বোতলবন্দি জলের প্রকল্প তৈরি করতে হলেও সেই অনুমোদন প্রয়োজন। কারখানার ভিতরে ল্যাবরেটরি রাখাও বাধ্যতামূলক। বছর দেড়েক আগে কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে জল তৈরির প্রচুর অবৈধ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ এবং পুরসভা। তখন শহরতলির স্টেশনগুলিতে ফিরে এসেছিল নামী সংস্থার জলের বোতল। কিন্তু বর্তমানে ফের আগের ছবিই ফিরে এসেছে।
স্টেশনের বিক্রেতাদের দাবি, আইএসআই ছাপ থাকায় তাঁরা ওই জল স্টলে রাখেন। ট্রেনের ফেরিওয়ালাদেরও বিক্রি করতে দেন। তবে কয়েক জন স্বীকার করছেন এই ধরনের ভুঁইফোড় সংস্থার জল বিক্রি করলে লাভ দ্বিগুণ। ফলে দিনে দিনে চলন্ত ট্রেনে এমন জলেরই রমরমা বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যারাকপুরে বেশ কয়েকটি কারখানা সরাসরি মাটির নীচ থেকে জল তুলে একটি বড় ট্যাঙ্কে রাখে। সেটিকে এক দফা পরিস্রুত করে বোতলবন্দি করা হয়। তার পরে যন্ত্রের সাহায্যে তা সিল করে বাজারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর ২০ লিটারের জল বিভিন্ন দোকান বা বাড়ি বাড়ি বিক্রি করা হয়। এক লিটার জলের দাম ১৮-২০ টাকা। আধ লিটার বোতলের দাম ১০টাকা। আর ২ লিটার জলের দাম জায়গা ভেদে ২০-৪০ টাকা।
ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান উত্তম দাস বলেন, ‘‘আমরা সিংহভাগ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। বড় কারখানাগুলিকে অনুমোদন জোগাড় করতে বলা হয়েছিল। এই সব কারখানা আবার শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ আসেনি। তবে স্টেশনগুলিতে যখন বিক্রি হচ্ছে, তখন অবশ্যই খবর নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy