E-Paper

আধপোড়া ঘরে আবার সংসার, জয়নগরে নিজেদের এলাকায় ফিরেও কাটছে না ভয়

এলাকায় ফিরলেও ভয় কাটছে না মহিলাদের। ফের হামলার আশঙ্কায় সিঁটিয়ে আছেন অনেকে। বিশেষ করে রাতের দিকে। এলাকায় কার্যত একটি বাড়িও আস্ত নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:৪০
গ্রামের পথে মহিলারা। ছবি: সমীরণ দাস।

গ্রামের পথে মহিলারা। ছবি: সমীরণ দাস।

আধপোড়া তোশকটা ঘর থেকে টেনে বার করছিলেন এক মহিলা। বললেন, ‘‘আপাতত এটার উপরে শুয়েই কোনও মতে রাতটা কাটাতে হবে। নতুন মশারি একটা পেয়েছি। ওটা টাঙিয়ে নেব।’’ তছনছ হয়ে যাওয়া পোড়া ঘরের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘দাওয়ায় শুয়েই রাত কাটবে। এই ঘরে কি পা রাখা যায়! তাকালেই চোখে জল আসছে।’’

বুধবার গ্রামে ফিরেছেন জয়নগরের দলুয়াখাকির লস্করপাড়ার ঘরছাড়া মহিলা-শিশুরা। তবে বাড়ির পুরুষ সদস্যদের এখনও দেখা নেই। এক মহিলা আবার বললেন, ‘‘কোলের বাচ্চাটাকে নিয়ে ফিরেছি। দলের নেতারা ত্রিপল দিয়েছেন বটে, কিন্তু সেটা কী ভাবে একা হাতে টাঙাব, বুঝতে পারছি না!’’

সোমবার জয়নগরের বামনগাছি পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর গুলিতে খুন হন। তার পরেই ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দলুয়াখাকির সিপিএম কর্মী-সমর্থকের গোটা পনেরো ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুরুষেরা সকলে পালিয়ে যান। মহিলাদের কেউ কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। বেশ কিছু মহিলা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে রাতেই দক্ষিণ বারাসতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ দিন ফিরেছেন সেখান থেকে। কিন্তু ভাঙাচোরা সংসার কবে, কী ভাবে ফের গুছিয়ে নিতে পারবেন, তা জানেন না।

ঘটনার পর দিনই ঘরছাড়া মহিলাদের গ্রামে ফেরাতে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়েরা। কিন্তু দলুয়াখাকিতে ঢোকার আগে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের দাবি, বহিরাগত নেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই ঢুকতে বারণ করা হয়েছিল। ওই দিন মহিলা-শিশুদের নিয়ে জয়নগর থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করে নেতারা ফেরেন দক্ষিণ বারাসতের দলীয় কার্যালয়ে। বুধবার দুপুরে দলের কয়েক জন নেত্রী জনা তিরিশ মহিলা-শিশুকে নিয়ে অটোয় চেপে গ্রামে আসেন। এ দিনও গ্রামে ঢোকার মুখে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। নেত্রীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে গ্রামের মানুষ ঘরে ফেরেন। দলের তরফে চাল, ডাল, হাঁড়ি, কড়া, মশারি, ত্রিপল-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া হয়েছে গ্রামবাসীদের।

এলাকায় ফিরলেও ভয় কাটছে না মহিলাদের। ফের হামলার আশঙ্কায় সিঁটিয়ে আছেন অনেকে। বিশেষ করে রাতের দিকে। এলাকায় কার্যত একটি বাড়িও আস্ত নেই। আগুনে পুড়ে গিয়েছিল গ্রামের বিদ্যুৎবাহী সব তার। এখনও বিদ্যুৎ ফেরেনি। ফলে রাতটা তাঁদের কাটাতে হবে অন্ধকার গ্রামে, ভাঙা বাড়িতে। গ্রামে এ দিনও প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি বলেন, “আপাতত পুলিশ পিকেট থাকবে। এলাকার মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না।”

এ দিনই খুন-পাল্টা খুন, দোকান-বাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে জয়নগর থানায় স্মারকলিপি দিয়েছে এসইউসি। দলের বারুইপুর সাংগঠনিক জেলার তরফে এলাকায় অবিলম্বে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়েছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা ও গরিব পরিবারগুলির ক্ষতিপূরণের দাবি তোলা হয়েছে। বুধবার দলুয়াখাকি এলাকায় যায় মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর প্রতিনিধি দলও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jaynagar violence Death TMC CPM

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy