মালদহের আশ্রয় শিবির ছেড়ে মুর্শিদাবাদের ঘরে ফেরা শুরু হয়েছে। তবে সবাই ফেরেননি। যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের একাংশের ভয় কাটেনি। এই আবহে আজ, শুক্রবার পারলালপুর হাই স্কুলে আশ্রিতদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজ্য ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদেরও ওই স্কুলে যাওয়ার কথা রয়েছে। আশ্রয় শিবির চালুর পর থেকে স্কুলের বাইরে ও ভিতরে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশ। এ দিন বিকেল থেকে সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
মহকুমাশাসক (মালদহ সদর) পঙ্কজ তামাং বৃহস্পতিবার জানান, কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারলালপুর হাই স্কুলের শিবির থেকে ন’টি পরিবারের ২৪ জন সদস্যকে পারলালপুরে গঙ্গার ফেরিঘাট পর্যন্ত পৌঁছনো হয়েছে। সেখান থেকে শমসেরগঞ্জ ব্লক প্রশাসনের কর্তারা তাঁদের বাড়িতে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছেন। মালদহ প্রশাসন সূত্রের দাবি, এ দিনও সাড়ে তিনশোর বেশি মানুষ শিবিরে রয়েছেন। তবে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায় বলেন, ‘‘রবিবার থেকে এ দিন পর্যন্ত মালদহের পারলালপুর থেকে ৮৬ জন শমসেরগঞ্জে ফিরেছেন।’’
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে শুরু হওয়া গোলমালের জেরে গত শুক্রবার বিকেল থেকে নৌকায় গঙ্গা পেরিয়ে ধুলিয়ানের বেতবোনা, বাজারপাড়া ও হাতিচিত্রা এলাকার কমপক্ষে ৪০০ জন আশ্রয় নেন পারলালপুর হাইস্কুলে। এ দিন সকালে আশ্রয় শিবিরে থাকা বিশ্বজিৎ প্রামাণিকের পরিবারের পাঁচ জন এবং পারুল মণ্ডল নামে এক মহিলাকে প্রশাসনের তরফে গাড়ি করে পারলালপুরের ফেরিঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন আশ্বাস দেওয়ায় বাড়িতে ফিরলাম। এখন এলাকায় বিএসএফ ও পুলিশ রয়েছে। কিন্তু তারা ফিরে গেলে, কী হবে জানি না! আতঙ্ক আছেই।’’ জয়ধন মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাসে ফিরলাম। কিন্তু একটা আতঙ্ক ভিতরে কাজ করছে।’’ জাফরাবাদের বাসিন্দা শরৎ দাস বলেন, “বাড়ির মহিলাদের আনা হয়নি। ভয়ে ভয়ে ছেলেরাই ফিরেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, মহিলাদের নিয়ে আসব।”
বিজেপির শাখারভ সরকার আজ বেতবোনা ও জাফরাবাদ গ্রামে যান। তাঁর কাছে গ্রামবাসী দাবি করেন, এই দুই গ্রামের মধ্যে একটি স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প বসানোর। শাখারভের দাবি, “পুলিশের উপরে আস্থা রাখতে পারছেন না গ্রামবাসী। তাঁরা বিএসএফের ক্যাম্প চেয়েছেন।” বহরমপুরের বিজেপি বিধায়ক সুব্রত মৈত্র যান পারলালপুরে। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও বীরভূম এবং নদিয়ার একাংশ নিয়ে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল করা হোক।’’ জঙ্গিপুরের সাংসদ তৃণমূলের খলিলুর রহমান বলেন, ‘‘কিছুটা আতঙ্ক থাকবে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরছি। আতঙ্কের খবর ছড়াচ্ছে বিজেপি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)