Advertisement
০১ মে ২০২৪
Kanchanjunga Express

মুরসলিমের রাতারাতি খ্যাতি চিন্তা পরিবারের

বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসেন মুরসলিমের মা মর্জিনা বিবি। বুধবার আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।

(বাঁ দিকে) মা মার্জিনা বিবি এবং তাঁর ছেলে মুরসালিম।

(বাঁ দিকে) মা মার্জিনা বিবি এবং তাঁর ছেলে মুরসালিম। —ফাইল চিত্র।

অভিজিৎ সাহা
হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:২৭
Share: Save:

রেল লাইন দিয়ে ছুটছে একের পর এক ট্রেন। তবে এখনও ‘স্বাভাবিক’ হয়নি সেই রেল লাইন লাগোয়া মাটির গাঁথনি, টালির ছাউনির বাড়িটা। বাড়িটার উঠোনে এখনও রীতিমতো ‘দরবার’ বসছে ভিআইপি থেকে উৎসাহীদের। ভিড়, মিডিয়া, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, নানা মহলের কেষ্টবিষ্টুদের আনাগোনায় সরগরম ছোট্ট বাড়িটা। লাল টি-শার্ট খুলে ট্রেন বাঁচিয়ে দেওয়া মহম্মদ মুরসলিম ও তার পরিবার আচমকা এই ‘খ্যাতি’র ধাক্কায় খুশি। কিন্তু ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তায় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পরিবারটি।

বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসেন মুরসলিমের মা মর্জিনা বিবি। বুধবার আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। কী হয়েছে? মর্জিনা বলেন, “ছেলের কৃতিত্বে সবাই বাহবা দিচ্ছেন। ছেলেকে কলকাতাতেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেখেশুনে ভালই লাগছে। তবে চিন্তা হচ্ছে বেশি। কারণ, ওর (মুরসলিম) বয়স তো সবে তেরো। এই বয়সেই এত প্রচার, এত হইচই। আমরা তো গরিব পরিবারের। তাই ওকে নিয়ে এই মাতামাতি দেখে একটু চিন্তা হচ্ছে।” উত্তেজনার চোটে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান তিনি।

গুজরাতে নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কর্মরত মুরসলিমের বাবা মহম্মদ ইসমাইল। তিনি এ দিন ফোনে বলেন, “ছেলেটা এমনিতেই পড়াশোনা করতে চায় না। এখন তো সবাই ওকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এ-দিক, ও-দিক নিয়ে যাচ্ছে। কী হচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না।”

ওয়াহেদপুর জুনিয়র হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মুরসলিম। তার বাড়ির অদূরে বৃষ্টির জলে রেল লাইনে ধস নেমেছিল সম্প্রতি। তখন সেই লাইনে আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস আসতে দেখে পরনের লাল টি-শার্ট খুলে নাড়াতে নাড়াতে ছুটেছিল ট্রেনের দিকে। ট্রেনটি থেমে যায়। এই ঘটনায় রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় এই কিশোর। বাড়িতে নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ থেকে রেল কর্তৃপক্ষ, সবাই গিয়ে মুরসলিমকে সংবর্ধনা দিয়েছেন।

মুরসলিমের দাদু আতাউর রহমান বলেন, “উপস্থিত বুদ্ধি নিয়ে ট্রেন থামিয়ে সবাইকে রক্ষা করার ঘটনায় খুবই ভাল লাগছে। তবে প্রশংসা পেয়ে ছেলেটার মাথাটা যাতে বিগড়ে না যায়, এখন সেটাই চিন্তার।” মঙ্গলবার স্কুলে যাওয়ার পরে মুরসলিমকে ঘিরে ধরে বন্ধু থেকে শিক্ষকেরাও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রশংসা, সংবর্ধনা পেয়ে পড়াশোনায় যাতে প্রভাব না পড়ে, তা মুরসলিমকে বোঝানো হয়েছে।” তবে মুরসলিম প্রধান শিক্ষককে কথা দিয়েছে, সে পড়াশোনা করবে। চাকরি করবে।

খ্যাতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে ছেলের এই কথাটাই আপাতত ভরসা বাবা এবং মায়ের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanchanjunga Express Malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE